Posts

গল্প

শুকনো গোলাপ তৃতীয় পর্ব

July 27, 2025

Mst Mukta

133
View

শুকনো গোলাপ তৃতীয় পর্ব 
চিঠিতে, বারো সপ্তাহ আগের সেই দূর্ঘটনার বর্ণনা ছিলো। তানিশা এতোদিন পর জানতে পারে ছেলেটার নাম "মাহিম"
সে ঐদিন নিজের কাজ শেষ করে গোলাপ নিয়ে তানিশার বাড়ীর দিকে আসছিলো। খুব সতর্ক ড্রাইভ করার পরও উল্টো দিক থেকে আসা বাস হঠাৎ জোরে ধাক্কা দেয় মাহিমের বাইক টা তে । বাইক উল্টে রাস্তায় আছরে পড়ে যায় মাহিম। হাতের গোলাপ টা ছিটকে দূরে পরে যায়। মাহিমের জ্ঞান থাকা অব্দি গোলাপের দিকে তাকিয়ে ছিলো ছেলেটা। তার সখের মানুষের জন্য আনা সুন্দর গোলাপ টি মানুষের পায়ের নীচে পড়ে থেঁতলে গেলো। তারপর আর কিছু মনে নেই। গত এগারো সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকায় মাহিম আসতে পারে নি। কোনো ভাবে খবর দেয়ার কেউ ছিলো না। আর কিইবা খবর দিবে মাহিম...? বলবে " হে গোলাপের রাণী তোমার জন্য আজ আর গোলাপ রাখা হলো না। তোমার গোলাপ কুমার এখন হাসপাতালের বিছানায় তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করছে। একদিকে দূর্ঘটনায় হাত-পা ভেঙে গেছে। অন্য দিকে  মনের ভেতর যেন বার বার গোলাপের কাঁটা গুলো আঘাত করে চলেছে। কেন এমন হলো। শরীরের আঘাত  আর রক্তক্ষরণ তো সবার চোখে পড়ছে কিন্তু মনের ভেতরের রক্তক্ষরণ তো কেউ দেখছে না। মন কেন এতো উতলা হয়ে যাচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে , এই বুঝি জীবন থেকে নিজের প্রেয়সী হারিয়ে যাচ্ছে...  তাহলে কি আর কোনো দিন গোলাপ দেয়া হবে না..? গোলাপের আড়ালে থাকা এই মানুষের মুখটা কি কখনো দেখবে না তার প্রেয়সী...? স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে..? তাহলে কি শুরুর আগে এখানেই শেষ হয়ে যাবে তার এই ভালবাসা..? এসব কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছে মাহিম। এখন জীবন আটকে গেছে হাসপাতালের বিছানা আর জানালায়। কবে আবার আগের মতো স্বাভাবিক হবে  জীবনধারা। কবে নিজের পায়ে হাঁটতে পারবে সে। কবে আবার গোলাপ রাণী কে দিতে পারবে গোলাপ। হাসপাতালের দিন গুলো বড় লম্বা লাগে তার। সময় কি থেমে গেছে...?  একেক টা দিন যেন কাটছিলোই না। জানো গোলাপ রাণী সেই দিন গুলো আমি কি  কি ভেবে কাটিয়েছি..? তোমার জন্য মন এতো খারাপ লাগতো। তখন আমি ভাবতাম তুমি  এসে আমার পাশে বসে আছো। তোমার ঐ সুন্দর ঠোঁটে একরাশ মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাকে বলছো " এই গোলাপ কুমার, দেখে শুনো বাইক  চালাতে পারো না..? মরার এতো সখ কেন তোমার..? আমাকে নিয়ে তো স্বপ্নের দিন গুলো শুরুই করলে না, তার আগেই  কি ছেড়ে চলে যাবে  নাকি..? " আমার অবচেতন মন এগুলো ভাবতো আবার তুমি কোথায়  যেন মিলিয়ে যেতে। এমন আরো কতো কি যে ভাবতাম একা একা। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে তোমার আমার এই  দেখা হতো রোজ । শত কষ্টের মাঝেও সুখ খুঁজে পেতাম। ভাবতাম ইস যদি সত্যিই তুমি আমার পাশে এসে বসতে। কতোই না ভালো লাগতো আমার। শরীরের সব ব্যাথা দূর হয়ে যেতো। তোমার মিষ্টি চাহনি আমার সকল ব্যাথা দূর করে দিতো। এই ভাবে  নয় সপ্তাহ হাসপাতালে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরলাম। তারপর বাড়ীতে আরো কিছুদিন বিশ্রাম নিলাম। এতো লম্বা সময় কখনো শুয়ে বসে কাটেনি আমার। কেমন একঘেয়ে জীবন হয়ে গিয়েছিল। কল্পনায় তুমি ছিলে তাই হয়তো পেরেছি এই বিরহের দিন গুলো পার করতে। তারপর এলাম তোমার গোলাপ নিয়ে। এখন বুঝলে আমার গোলাপ রাণী, আমি এতো দিন কোথায় ছিলাম..? এখন তানিশার মনে পড়লো... সৈকত বলেছিলো, একটা ছেলে  খুব সুন্দর দেখতে,  খুব খারাপ ভাবে দূর্ঘটনা ঘটেছে। তাহলে সেই ছেলেটি আর কেউ নয় তার গোলাপ কুমার...? দীর্ঘ এগারো সপ্তাহ ফুল না পাওয়ার বেদনা বলে দেয় তানিশাও মনে মনে তাকে কতোটা পছন্দ করে ফেলেছে। আজ কেন যেন মন চাইছে আমিও একটা চিঠি লিখে রাখি তার জন্য। এই এগারো সপ্তাহ কতো বিরহে দিন কেটেছে তার। মনের অজান্তেই বারান্দায় উকি দিতো একটি গোলাপের আশায়। কতো রাত সে ঘুমাতে পারে নি। তার গোলাপের কাঁটা গুলো মনটাকে  ছিদ্র করে রক্তক্ষরণ করেছে। উদাস হয়ে বসে থাকতে হয়েছে। শত ভালো লাগার মাঝেও এই বিরহ তাকে কতোটা কষ্ট দিয়েছে। তার এই বিরতি যেন তানিশাকে বার বার জানিয়ে দিয়েছে মনের মনিকোঠায় কতো শক্ত অবস্থান নিয়ে  বসে আছে। চেনা নেই জানা নেই কে না কে হুট করে মনের ভেতর ঢুকে গেলো..? এখন তাকে তাড়ানো মুশকিল হয়ে গেছে। আরো কতো কথার রাশিমালা জমে আছে ওর মনে । এতোকিছু ভেবেও চিঠি লিখলো না তানিশা। এখন ওর মনে একটা প্রশ্নই  ঘুরপাক খাচ্ছে ।  কে এই মাহিম...? সে আমাকে চিনলো কিভাবে..? আর আমাদের বাড়ীর ঠিকানা পেলো কোথায়...? কি করে জানলো আমি কোন ঘরে থাকি...?

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Mst Mukta 3 months ago

    আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

  • Kazi Eshita 4 months ago

    তবে এখন তানিশা ছেলেটাকে দেখতে পেলে বেশ হতো