নীরা রহমান জানালার পাশে দাঁড়িয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিল। রাতের আকাশে ঝলমলে সে গোল চাঁদ—আজ তাকে যেন ডাকছে। শুধু আকাশের চাঁদ নয়, আজকের রাতেই সে সত্যিকারের চাঁদের দিকে যাত্রা করবে—চিরতরে।
মাত্র ২৬ বছর বয়সী এই বিজ্ঞানী আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (IGRC)-এর সবচেয়ে কনিষ্ঠ গবেষক। তার কাজ ছিল নিউরো-স্মৃতি প্রযুক্তি নিয়ে। মানুষের মস্তিষ্ক কীভাবে স্মৃতি সংরক্ষণ করে, কীভাবে ভুলে যায়—এই সব রহস্য নিয়ে সে কাজ করত। তার কাজ এতটাই উন্নত ছিল যে তাকে ‘লুনা প্রজেক্ট’-এর জন্য বেছে নেওয়া হয়। কেউ জানত না, প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।
নীরার বাবা, ড. হুমায়ুন রহমান, এক সময় IGRC-এর একজন উজ্জ্বল বিজ্ঞানী ছিলেন। কিন্তু ২০ বছর আগে তিনি ‘লুনা মিশন ৩’-এ গিয়ে নিখোঁজ হন। সরকারি ভাষ্য অনুযায়ী, “মিশন ব্যর্থ, কেউ জীবিত ফিরে আসেনি।”
কিন্তু নীরা জানত, তার বাবা মরে যায়নি। সে কিছু একটা জেনে ফেলেছিল, কিছু এমন, যা পৃথিবী জানার উপযুক্ত নয়।
যাত্রা শুরু
পৃথিবী থেকে চাঁদের পথে মানুষ এখন প্রায় নিয়মিতই যায়। কিন্তু “লুনা সিটি” ছিল ভিন্ন — এটি ছিল গোপন, বদ্ধ, স্মৃতি-শূন্য এক শহর, যেখানে ঢুকলে আর ফেরা নেই।
IGRC-এর বিশেষ ক্যাপসুলে উঠে বসে নীরা। তার চোখে ছিল দৃঢ়তা, মুখে নীরব প্রতিজ্ঞা — বাবাকে সে খুঁজে বের করবে, আর যদি কিছুই না পায়, তবে অন্তত জানবে সত্য।
লুনা সিটিতে আগমন
চাঁদের মাটিতে নামার পর প্রথম অনুভূতিটাই ছিল অদ্ভুত। সবকিছুই ধূসর, নীরব, স্থির। লুনা সিটি বিশাল গম্বুজের মতো, কাঁচে মোড়া এক প্রযুক্তিময় শহর। সেখানে দিনের আলো ছিল কৃত্রিম সূর্যের মতো। রাস্তায় মানুষ চলাফেরা করে, হাসে, কাজ করে, কিন্তু কেউ যেন কারো কথা মনে রাখে না।
প্রথম রাতেই তাকে একটি কক্ষে রাখা হয়, যার নাম লেখা ছিল: “মেমরি রিসেট ইউনিট”।
সেখানে তাকে বলা হলো:
— “আগামীকাল থেকে আপনি নতুন জীবন শুরু করবেন। আপনার নাম, অতীত, সব ভুলে যাবেন। এখান থেকে আপনি একজন 'নিউ সিটিজেন'।”
নীরা কেবল মাথা নেড়ে সম্মতি দিল, কিন্তু মনে মনে বলল —
"তারা আমাকে ভুলতে বলেছে, আমি শুধু মনে রাখতে শিখে এসেছি।"
এই পরের অংশে আছে
75
View