Posts

উপন্যাস

মায়া গন্ডি পর্ব৬

July 28, 2025

Mohammad Nur

74
View

মায়া গণ্ডি
পর্ব ৬
মোহাম্মদ নূর

ঐশ্বর্যের এত জোরাজুরিতে আকাশ বলল,
— "শুনুন তাহলে।"
ঐশ্বর্য বলল,
— "তাড়াতাড়ি বলেন, আম্মা চলে আসবে!"

আকাশ বলতে লাগল,
— "কাল রাতে আমি যখন আমার টিম নিয়ে কালি ঘাটের দিকে যাচ্ছিলাম, তখন গ্রামের কিছু মানুষ আমাদের বাধা দেয়। একজন বৃদ্ধ, নাম লতিফ মিয়া, ভুতুড়ে কণ্ঠে ঠোঁটে বাঁকা হাসি নিয়ে এবং একধরনের বিরক্তিকর ভঙ্গিতে বলল—
‘তোরা কি মরতে চাস? যা যা যা, এখান থেকে দূরে যা! তোদের জন্য গ্রামে বিপদ আসতে পারে।’

এটা বলেই লোকটা চিৎকার শুরু করে। গ্রামের মানুষ সবাই সেই দিকেই ছুটে আসে। এরপর তারা আর আমাদের কালি ঘাটে যেতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে আমরা নদীর ধার ধরে হাঁটতে হাঁটতে এদিকে চলে আসি। এখান থেকে কালি ঘাট দেখা যায়। আমরা অনেক রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করি কিন্তু কিছুই দেখতে পাইনি। হঠাৎ মনে হলো সুপারি বাগান থেকে কেউ এই দিকে আসছে। শুকনো পাতার খসখস আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিলো। মনে হলো কেউ ইচ্ছা করে এমন শব্দ করছে। তাই আমরা লুকিয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর দেখতে পেলাম, কেউ একজন কালো চাদর মুড়ি দিয়ে এদিকে আসছে। সে বুঝতে পারে কেউ আছে, তাই কোনো কিছু না ভেবেই আপনাদের বাড়ির দিকে দৌড়ে চলে আসে। আমরা দেখতে দেখতে এদিকে আসি। তখনই আপনাদের বাড়ির সামনে দাঁড়াই। তখন একজন বয়স্ক লোক বাড়ির ভেতর থেকে আমাদের ডাক দেয়।"

ঐশ্বর্য বুঝতে পারে, এটা তার দাদু। আকাশ বলল,
— "লোকটি হাতে একটি রামদা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রথমে তার উপর সন্দেহ হয়। তবে আমরা লক্ষ্য করি, উনি পাঞ্জাবি-পায়জামা পরা। অথচ যে লোকটিকে আমরা বাগান থেকে আসতে দেখেছিলাম, সে পরা ছিল জিন্স প্যান্ট আর একজোড়া নাগরা জুতো। চাঁদের আলো এবং তার হাতের মশালের আলোয় যতটুকু দেখা যায়, তাতে মনে হলো আমি ভুল করেছি।

লোকটি বললেন,
‘এই দিকে আর আমার ঘরে কোনো মেয়ে মানুষ থাকে না। গ্রামের সবাই জানে, আপনার জানা নেই?’
আমরা পুরো ঘটনাটা খুলে বললাম। আমি বললাম,
— 'আসলে আমাদের ডিউটি ছিল নদীর ধারে। একজনকে দেখতে পেয়ে সন্দেহ হয়, এত রাতে নদীর ধারে কেউ কী করছে? তাই তার পিছু পিছু আমরা এই দিকে এসেছি।'
তিনি বললেন,
— 'আচ্ছা, ঠিক আছে। তবে এইদিকে আর আসবেন না। আপনি তো নতুন এসেছেন, তাই বলছি। এই জায়গাটা ভালো না। কালই আপনি বাড়ির চারপাশ দেখে চলে যাবেন। আর নদীর ধারে এত রাতে ডিউটি নেবেন না। আপনার বিপদ হতে পারে।'

এটা বলেই তিনি সদর দরজার ওদিকে চলে যান দেখে আসতে, কেউ আছে কিনা। আমরাও কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে আবার ডিউটিতে ফিরে যাই।"

ঐশ্বর্য ভাবতে লাগল— তাহলে জানালায় টোকা দিয়েছিল কে? আকাশ তো বলছে সে তখন বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল। তাহলে কি সে মিথ্যে বলছে? তাকে জিজ্ঞেস করতে যাবে, তখনই শান্তি এসে বলল,
— "তুই দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে কী দেখছিস?"

ঐশ্বর্য ভয়ে গুটিয়ে যায়। মনে মনে ভাবে, এবার কী হবে! উনি তো বাইরেই দাঁড়িয়ে আছেন। শান্তি বুঝতে পারে, কিছু একটা হয়েছে। কিছু না বলে এক ঝটকায় দরজা খুলে ফেলেন। কিন্তু সেখানে কেউ নেই! তিনি ঐশ্বর্যের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
— "কে ছিল এখানে?"

ঐশ্বর্য আতকে উঠে, মাথা নিচু করে বলল,
— "হ্যাঁ।"

শান্তি বুঝতে পারেন মেয়েটি ভয় পেয়েছে। মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলেন,
— "কে ছিল?"
ঐশ্বর্য পুরো ঘটনাটা খুলে বলল।

শান্তি বললেন,
— "এইসব কী বলছিস! ঐ দারোগার সঙ্গে পরে কথা বলব। এখন বাবার সঙ্গে কথা বলে নিই। তুই ঘরে যা।"

ঐশ্বর্য ঘরে চলে এলো। কিছুক্ষণ পর শান্তি ও নুরুল রহমান ঐশ্বর্যের ঘরে এলেন। ঐশ্বর্য কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে দাঁড়িয়ে ছিল। নুরুল রহমান বললেন,
— "দেখো দাদুভাই, আমি কালই বলেছিলাম— বদ নজর সুন্দরীদের পিছু ছাড়ে না। আমিও টোকার শব্দ শুনেছি। বের হয়ে দেখি সেই নতুন এসপি। কিন্তু ভেবেছি, পেছনের দরজায় কেন টোকা দেবে? সামনে দিয়ে এলেই পারতো। তাদের সঙ্গে কথা বলার পর বুঝতে পারি, নদীর ধার থেকে যে-ই এসেছে সে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছে। তাই বিদায় দিতে আমি হারিকেন জ্বালিয়ে সদর দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।"

এটা বলে থামলেন। এবার শান্তি বললেন,
— "এটার কোনো হাল করতে হবে।"

নুরুল রহমান বললেন,
— "তোমাদের কিছু করতে হবে না। দাদুভাই, তুমি আর ইউসুফ স্কুলে যাও। আসার সময় লোক পাঠিয়ে দিও, বাকিটা আমি দেখছি। দু’দিন সময় দাও। আমার গোলাপি সুন্দরীর দিকে কেউ নজর দিলে তার চোখ উপড়ে ফেলব।"
এই কথাটা তিনি বললেন মিশ্র রসিকতা, রাগ আর এক ভয়ানক শান্ত হাসি নিয়ে।

শান্তি চুপ করে ছিলেন। মনে হলো তিনিও বিশ্বাসের সম্মতি জানালেন। তারপর দুইজনই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। শান্তি বললেন,
— "খেতে আয়, খেয়ে স্কুলে যাবি।"

ঐশ্বর্য ও ইউসুফ স্কুলে রওনা দেয়। তখনকার দিনে যাদের বাড়িতে ঘড়ি ছিল, তারাই সময়ের হিসাব পেতো। তাদের বাসায় ছিল ব্রিটিশ কালের পুরোনো একটি ঘড়ি, যেটা নুরুল রহমানের বাবা ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তাই তারা সময়মতো চলতে পারত।

সামনে ঈদুল আজহা, কোরবানির হাট জমজমাট। গ্রামের একমাত্র পাকা রাস্তার এক পাশে সবুজ মাঠ, আরেক পাশে বিশাল একটি দীঘি। ঐশ্বর্য ও ইউসুফ সেই রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছে স্কুলের দিকে। তাদের স্কুল বাড়ি থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে। তাই তারা একটু সকাল সকাল বের হয়।

রাস্তার ডান পাশে হাট বসেছে, মানুষের পায়ের শব্দে নীরবতা ভেঙে যায়। ইউসুফ বলল,
— "আপা, কী চিন্তা করো?"

ঐশ্বর্য বলল,
— "কিছু না।"

কিছুক্ষণ পর সে আবার বলল,
— "ইউসুফ, তুই কি কালি ঘাটের রাস্তা চিনিস?"
ইউসুফ ভ্রু কুঁচকে বলল,
— "কেন আপা? তুমি কি ওখানে যাবে?"
ঐশ্বর্য বলল,
— "না, দূর থেকে দেখেই চলে আসব।"

— "আমি তো চিনি, কিন্তু ওখানে যাই না। ওখানে অনেকগুলো ভূত থাকে!"
ঐশ্বর্য ইউসুফের কথায় হেসে ফেলল।
— "বেশি কথা বলিস না তুই! আর তোকে বলিনি, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে?"

— "আচ্ছা।"

তারা স্কুলে পৌঁছায়। দু’জন দু’জনের ক্লাসে চলে যায়। আজ শুধু হুমাইরা এসেছে।

ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
পর্ব ৭ খুব শিগগিরই আসছে।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 3 months ago

    ঐশর্য বেশ ভালো মেয়ে