Posts

গল্প

জন্মের আগে ঋণী

July 29, 2025

Abdur Nur (R KING)

Original Author হুদাই।

103
View

আমার জন্মদিনে সবাই বলে, “শুভ জন্মদিন!”
আর আমি শুধু ভাবি — আমার জন্যই একটা প্রাণ চলে গেছে। আমার মা।
সেই দিনটাতে আমি জীবনে প্রথম নিঃশ্বাস নিয়েছিলাম আর মা শেষ নিঃশ্বাস।
আজও এই সত্যিটা আমার বুক ভেঙে দেয়।

ছোটবেলায় যখন সবাই জন্মদিনে কেক কাটে, উপহার পায় —
আমি ঘরের এক কোণায় বসে কাঁদি।
আমার জন্মদিন মানে পরিবারের একটা শোক দিবস।
বাবা কখনো হাসিমুখে আমার জন্মদিন বলেননি।
খালারা, দাদু — সবাই চুপচাপ, যেন এই দিনটা না এলেই ভালো হতো।

একবার কানে শুনেছিলাম—
"ওর জন্যই তো বউটা গেলো... জন্ম দিলো আর মরে গেলো!"
সেই কথা বুকের ভিতরে ছুরি হয়ে ঢুকে যায়।
আমি বুঝি, আমার অস্তিত্বটাই অনেকের কাছে অপরাধ।

আমি নিজেকেই ঘৃণা করতাম।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলতাম, “তুই না হলে মা আজও বাঁচতেন।”
বন্ধুরা যখন বলত, “তোর মা কোথায়?”
আমি শুধু বলতাম, “আমি তো ওনাকে কখনো দেখিইনি…”
তারা বুঝত না, সেই না-দেখা মানুষটাই আমার পুরো জীবনের সবচেয়ে বড় শূন্যতা।

এই দুঃখ বুকে নিয়েই বড় হয়েছি।
তবে একদিন একটা চিঠি বদলে দিল আমার সবকিছু।
মায়ের লেখা — মৃত্যুর আগের দিন লিখে গিয়েছিলেন বাবার জন্য।
চিঠিতে লেখা ছিল :

“যদি আমার কিছু হয়, আমাদের মেয়েকে দোষ দিও না। ও আমার স্বপ্ন। ও যেন জানে, আমি ওকে ভালোবেসে মরেছি।”

চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
সেদিন বুঝেছিলাম, মা কখনো আমাকে দোষ দেননি।
বরং ভালোবেসে গেছেন।
আমার জীবনটা দুঃখে নয়, ভালোবাসায় ভরা ছিল — আমি শুধু দেখতে পারিনি এতদিন।

আজ আমি মায়ের মৃত্যুদিনেই নিজের জন্মদিন উদযাপন করি।
কারণ এদিন আমি জন্মেছি, এবং সেই জন্মের পেছনে একজন মায়ের আত্মত্যাগ আছে।
আমি আর নিজেকে দোষ দিই না।
আমি নিজেকে মায়ের উত্তরাধিকার ভাবি — তাঁর ভালোবাসার এক জীবন্ত রূপ।

Comments

    Please login to post comment. Login