Posts

সমালোচনা

❝হাসিনার ক্রোধ যে প্রতিষ্ঠানের ইট পর্যন্ত ছুঁয়ে গেছে!❞

July 29, 2025

তোফায়েল ইসলাম

Original Author তোফায়েল ইসলাম

80
View
❝হাসিনার ক্রোধ যে প্রতিষ্ঠানের ইট পর্যন্ত ছুঁয়ে গেছে!❞

২০২৪ সালের ২৬ জুলাই, গভীর রাতে টঙ্গীর ঐতিহাসিক ❝তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা❞-এর সামনে এক ভয়ংকর দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। চলমান আন্দোলনের উত্তাপে যখন গোটা অঞ্চল জ্বলছে, তখন পুলিশ, গোয়েন্দা এবং প্রশাসনের একাধিক সংস্থা রাতের অন্ধকারে মাদ্রাসায় হাজির হয়ে কর্তৃপক্ষকে চরম চাপ ও হু*মকি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশদ্বার ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়!


রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী—পুলিশ, গোয়েন্দা এবং প্রশাসনের সমন্বয়ে এই মাদরাসার মূল গেইট ইট দিয়ে রাতের আঁধারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, প্রতিষ্ঠানটির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কও জব্দ করে নিয়ে যাওয়া হয়।

প্রশ্ন জাগে—কেন একটি স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এইভাবে টার্গেট করা হলো?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তো রাজনীতির ময়দান নয়, তাহলে কেন এই ভয়? এই গেইট আটকে দেওয়ার একমাত্র কারণ, ১৫-১৬ জুলাই থেকে উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুরে ছড়িয়ে পড়া গণআন্দোলনে মিল্লাত মাদরাসার শিক্ষার্থীরা ছিল সম্মুখ সারিতে—সংগঠিত, উদ্যমী এবং নেতৃত্বদানে অগ্রণী। শাসকগোষ্ঠীর কাছে এই দৃশ্য ছিল সহ্য করার অতীত।

তরুণদের নেতৃত্ব ও উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ফলে সরকারের চোখে এই প্রতিষ্ঠানটি হয়ে ওঠে এক ‘সংগঠিত চেতনার’ উৎস।

একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি সরকারের এই ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ আচরণ শুধু প্রশাসনিক সীমালঙ্ঘন নয়, এটি এক ভয়ানক রাজনৈতিক বার্তা বহন করে—"কেউই নিরাপদ নয়, যদি সে ভিন্ন মত পোষণ করে।"

৫ আগস্ট (যা অনেকেই ‘৩৬ জুলাই’ নামে আখ্যায়িত করেন) না আসলে হয়তো মিল্লাত ক্যাম্পাসের ইতিহাস আজ অন্যরকম হতো—হয়তো শিক্ষার্থীরা আর এই প্রাঙ্গণে ফিরতেই পারত না!

কী নিদারুণ বাস্তবতা—একটি গণতান্ত্রিক দেশের স্বৈরাচারী সরকার কতটা অমানবিক, কতটা দলান্ধ হলে একটি কওমি ঘরানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথ রাতের অন্ধকারে ইটের প্রাচীর দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারে? শুধু গেইটই নয়, প্রতিষ্ঠানটির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্কও প্রশাসনের লোকজন জব্দ করে নিয়ে যায়—যেন ইতিহাসের চিহ্নও মুছে ফেলা যায়।

এই ঘটনা শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের নমুনা নয়, এটি এক ভয়ানক বার্তা—এই সরকার কাউকে ছাড়ে না, এমনকি নিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও নয়।

এই ঘটনাটি আরও একবার প্রমাণ করে, বাংলাদেশে আজ স্বাধীন মত প্রকাশ, সংগঠিত হওয়া বা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়ার অধিকার কতটা সংকুচিত হয়ে এসেছে।

❝তা'মীরুল মিল্লাত❞-এর গেইট বন্ধ করে দিয়ে মূলত একটি প্রতীকী ভাষায় বলা হলো—"তোমরা প্রতিবাদ করতে পারবে না।" অথচ এই ভূখণ্ডে প্রতিবাদ আর শিক্ষাই ছিল বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য।

আমি বিশ্বাস করি, এই ঘটনাগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং দলনিরপেক্ষভাবে উচ্চারণ আজ সময়ের দাবি। রাষ্ট্র যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শত্রু ভাবে, তবে তা কেবল গণতন্ত্র নয়, একটি জাতির ভবিষ্যতেরও পরাজয়।

Comments

    Please login to post comment. Login