কালো সুতো
✍️ লেখক: মাওলানা আব্দুস সাত্তার
গ্রামের নাম বেলাইচাঁপা। নিরীহ মানুষদের বসবাস। কিন্তু একটা পরিবার নিয়ে সবসময় চাপা গুঞ্জন— গাজী সাহেব নাকি কালো জাদু জানেন।
রাতে কারও গরু হারালে, বা বাচ্চা অসুস্থ হলে, লোকজন বলে, “গাজীর চোখ লেগেছে।”
কারও মুখে প্রমাণ নেই, কিন্তু ভয় সবার চোখে।
রাহেলা, এক গরিব বিধবা, তার একমাত্র মেয়ে নিশাতকে নিয়ে থাকে। মেয়েটা ছিলো সুন্দর, মেধাবী, সবার প্রিয়।
হঠাৎ একদিন নিশাত জ্বরে পড়ে। কোন ডাক্তার কিছু বুঝতে পারে না। দিন গড়িয়ে যায়, মেয়ের অবস্থা খারাপ হয়।
একদিন রাহেলা নিশাতের বালিশের নিচে পায় একটা কালো সুতো, গাঁটে বাঁধা লাল সুতো ও মানুষের চুল।
সে ভয় পেয়ে ছুটে যায় মাওলানা শাফির কাছে। হুজুর বলেন,
— “এটা বান মারা হয়েছে। মেয়েকে রক্ষা করতে হলে আসল কুকর্মকারীকে চিনতে হবে।”
দোয়া পড়া হয়। নিশাত একটু সেরে ওঠে। কিন্তু দুইদিন পর রান্নাঘরের দরজায় আরেকটা কালো সুতো ঝুলতে দেখা যায়— এবার রক্ত লেগে আছে।
রাহেলা ছুটে যায় গাজীর বাড়ি। চিৎকার করে বলে,
— “আমার মেয়ে তোমার কী ক্ষতি করেছে?”
গাজী ঠান্ডা গলায় বলে,
— “ক্ষতি নয়, ব্যালান্স। এই জগতে সব কিছুরই দাম আছে।”
সেই রাতেই নিশাত নিঃশব্দে চলে যায়।
গ্রামের মানুষ কিছু বলে না। কিন্তু প্রতি বছর নিশাতের কবরের পাশে পাওয়া যায় একটা কালো সুতো…
---
🔸 মাওলানা আব্দুস সাত্তার
“আমি বিশ্বাস করি, বাস্তবতার ছায়ায় লেখা গল্পগুলো মানুষের ভাবনার দরজা খুলে দেয়।”
---