গল্পের নাম: অন্ধকার ডানার পিশাচ
অধ্যায় ১: চন্দ্রালোকিত চূড়ায়
রাহাত আর মায়া হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল পাহাড়চূড়ার ওপরে, ঠিক যেখানে আকাশ আর পৃথিবী এক বিন্দুতে এসে মিশেছে বলে মনে হয়। চারপাশে নীরবতা, কেবল মাঝেমধ্যে রাতজাগা ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ আর দূর আকাশে পড়ে যাওয়া তারাগুলোর ক্ষীণ রেখা। সেই রাতে পূর্ণচন্দ্র ছিল ভীষণ উজ্জ্বল, যেন স্বর্গ থেকে নেমে আসা কোনো প্রাচীন চোখ সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে।
রাহাত বলল, “আজ আকাশটা অদ্ভুত লাগছে না?”
মায়া একটু হেসে বলল, “আজকের চাঁদটাই তো তোমার মতো—নিরব, রহস্যময়।”
কিন্তু এই শান্ত মুহূর্তে হঠাৎ চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠল, গা ছমছমে ঠান্ডা এক স্রোত যেন ভেসে এলো দিগন্ত পেরিয়ে। মেঘগুলো ঘন হয়ে এক জায়গায় জমাট বাঁধতে শুরু করল, আর তার মাঝখান থেকে ফুটে উঠল দুই জ্বলন্ত চোখ।
---
অধ্যায় ২: কালদ্রাক্ষের আগমন
আকাশের গহীন অন্ধকার ফুঁড়ে নেমে এলো এক পিশাচ—তার ডানাগুলো বাদুড়ের মতো চওড়া, চোখদুটি জ্বলজ্বলে, নখগুলো যেন শিকার ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য তীক্ষ্ণ। তার নাম কালদ্রাক্ষ—এক পৌরাণিক দৈত্য যার কথা মানুষ এখন ভুলে গেছে, কিন্তু সে এখনো জীবিত… গভীর অন্ধকারে।
উপকথা বলে:
> “যদি সত্যিকারের প্রেম পূর্ণচন্দ্রের রাতে পূর্ণতা পায়, তবে ঈর্ষাপরায়ণ আকাশদেব তার অভিশপ্ত সন্তান ‘কালদ্রাক্ষ’কে পাঠান ভালোবাসা নষ্ট করতে।”
মায়া হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে গেল, তার ঠোঁট কাঁপছে।
"ওটা কী, রাহাত?"
রাহাতের চোখ ভয়ানক দৃশ্যের দিকে আটকে আছে। সে বলল, "আমার মনে হচ্ছে আমাদের সেই পুরোনো কাহিনিগুলো মিথ্যা ছিল না..."
---
অধ্যায় ৩: ভালোবাসা বনাম অন্ধকার
কালদ্রাক্ষ মেঘের ভেতর থেকে তীব্র গর্জন দিয়ে এক ঝাঁপে তাদের কাছাকাছি এলো। গাছপালা কেঁপে উঠল, মাটির ফাটল ধরা শুরু হলো।
রাহাত মায়ার হাত শক্ত করে ধরল, "আমরা যদি ভয় পাই, তবে ও জিতে যাবে। আমাদের ভালোবাসাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র।"
মায়ার চোখে জল, কিন্তু ভেতরে এক সাহসের জন্ম হলো।
সে বলল, "আমরা একসাথে, সেটা যদি সত্য হয়… তবে কোনো অভিশাপ আমাদের ছুঁতে পারবে না।"
তাদের হৃদয়ের স্পন্দন এক হয়ে উঠল। সেই প্রেমের শক্তি এক অদ্ভুত আলোতে রূপ নিল। হঠাৎ করে রাহাত ও মায়ার চারপাশ থেকে এক উজ্জ্বল জ্যোতি বেরিয়ে আসতে লাগল। সেই আলো আঘাত হানল কালদ্রাক্ষের বুকে।
পিশাচ গর্জে উঠল, তার ডানাগুলো ছিঁড়ে যেতে লাগল, দেহে আগুনের মতো ফাটল ছড়িয়ে পড়ল। সে আর্তচিৎকার করে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। শুধু রয়ে গেল সেই চাঁদের আলো—যা এখন শান্ত, কোমল আর মায়াময়।
---
অধ্যায় ৪: অভিশাপ ভাঙা প্রেম
চারপাশে আবার নীরবতা ফিরে এল। হাওয়া শান্ত। গাছপালার পাতাগুলো যেন আবার প্রাণ ফিরে পেল।
রাহাত মায়ার দিকে তাকিয়ে হাসল, “আমরা পেরেছি।”
মায়া তাকে জড়িয়ে ধরল, “তুমি পিশাচের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো বা আমার পাশে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো—তোমাকে আমি সব সময় ভালোবাসব।”
চাঁদের আলোয় তাদের ছায়া পড়ে রইল পাহাড়চূড়ায়, যুগ যুগ ধরে, যেন সেই প্রেমের সাক্ষী হয়ে।
---
শেষকথা:
তাদের ভালোবাসা শুধু এক পিশাচকে পরাজিত করেনি—ভেঙে দিয়েছে একটি অভিশপ্ত ইতিহাস, যেখানে প্রেমকে ভয় আর হার মানতে হতো।
আর তাই… প্রতিটি পূর্ণিমার রাতে যখন তোমার প্রেমিক বা প্রেমিকা হাত ধরে পাশে দাঁড়ায়, মনে রেখো—ভালোবাসা যদি সত্য হয়, তাহলে অন্ধকারের সবচেয়ে ভয়ংকর পিশাচও এক মুহূর্তের আলোর সামনে হার মানে।
শেষ।