অনেকদিন আগের কথা, আমি মনে হয় তখন ক্লাস ফাইভে ছিলাম যখন সেই ঘটনাটি ঘটেছিল। এটি একটি ভুতুড়ে ঘটনা। আর এই ঘটনাটি রাতে ঘটেছিল। এই গল্পটি পড়ে যদি আপনাদের ভয় লাগে তাহলে কিন্তু আমার কোন দোষ নেই।নিজ দায়িত্বে পড়বেন।
আমাদের বাড়িতে দুটি পুকুর আছে, যেগুলো আমাদের লিজ নেয়া হয়েছিল তখনকার সময়ে। সেখানে অনেক মাছ চাষ করা হতো আর এজন্য পানিতে পোনা ছাড়া হয়েছিল। তবে ওই সময় হালকা বৃষ্টি ছিল। আর আমাদের পুকুর গুলো যেহেতু জমির পাশে ছিল সেই অনুযায়ী কিছু দেশী মাছ পুকুরে নিয়ে আসার একটি পদ্ধতি ছিল।
গ্রাম অঞ্চলের এইরকম পরিবেশের পুকুরের পাশ কেটে দেয়া হয় যাতে পুকুরের পানি বেশি হয়ে গেলে সেগুলো জমিতে চলে যেতে পারে। আর পানি যাওয়ার কারণে জমির মাঝে থাকা মাছগুলো পুকুরে আসতে শুরু করে। এইভাবে দেশীয় মাছ পুকুরে আনা হয়। তবে জমির যেকোনো মাছই আসে পুকুরে।এভাবেই আমাদের পুকুরে মাছ আনা হতো এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়া হতো।
পুকুরের দক্ষিণ পাশে জমি ছিল।পুকুর আর জমির মধ্যে ১০-১২ ফিট জায়গা আছে।যায়গাটা দিনের বেলায়ই কিছুটা অন্ধকার আর ভয়ংকর লাগে। এর কারণ হচ্ছে সেখানে জমির পাশে একটি বাঁশের ঝোপ রয়েছে। আর তার পূর্বপাশেই রয়েছে কবর স্থান। এর মাঝামাঝিতে বিশাল আকারের তেতুল গাছ আছে।যার কারণে জায়গাটা এমনিতেই কিছুটা ভয়ংকর লাগে। আর রাত্রিবেলা তো আরো বেশি ভয়ঙ্কর লাগে।দক্ষিণা বাতাস গায়ে লাগলেও যেন ভারী লাগে ঐ জায়গায়।আর এখানে পুকুর আর জমির মাঝে লম্বা করে ড্রেন এর মত কাটা হয়েছে পানি বাইরে নেয়া এবং মাছ পুকুরে নিয়ে আসার জন্য।তবে পুকুরের অংশে পথ বন্ধ করার উপায় রাখা হয়।
যাইহোক,সন্ধ্যা বেলায় আব্বু আর আমার এক কাকা গিয়ে পুকুরের পথ খুলে পানি বের হওয়ার জায়গা করে দিয়েছিল।কারণ সেদিন কিছুটা বৃষ্টি হয়েছিল।রাত ১১টার দিকে পানির পথ বন্ধ করার জন্য আব্বু যাচ্ছিল একা। তখন আমি বললাম আমিও যাবো আজকে। আর যেহেতু আব্বু মাঝেমধ্যে সেখান থেকে কিছু মাছ নিয়ে আসতো সন্ধ্যায়, সেই হিসেবে আমি ভাবলাম আমিও দেখবো কিভাবে মাছগুলো ধরে।
যাই হোক আমি গেলাম আব্বুর সাথে। প্রথমে পুকুরের সিড়িতে দেখলাম কিছু কুচো চিংড়ি পাশে বসে আছে।আমি খুব সাবধানে হাত দিয়ে কয়েকটা ধরে ফেললাম।তখন আব্বু বলল ছেড়ে দিতে,তাই দিলাম। সেখানে যাওয়ার পরে আমি লাইট ধরে দাঁড়িয়ে আছি। তখন দেখলাম একটা মাছ জমি থেকে পুকুরের দিকে ঢুকছে। তখন আমি আব্বুকে বললাম আমি মাছটি ধরবো। তখন আব্বু বলল ধরতে।
এটি যখন পুকুরের কাছাকাছি চলে আসে এবং জালে আটকে গেল তখন আমি মাছটি ধরে ফেললাম। দুই মিনিটের মত এটি হাতে ধরে রেখেছিলাম,মাছটি নিয়ে আমি পানি থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলাম।যাতে মাছ পানিতে না পড়ে। তখন আব্বুর হাতে লাইট ছিল। হঠাৎ করে মাছটি আমার হাত থেকে পিছলে মাটিতে পড়ে যায়। কিন্তু পানিতে পড়েনি। লাইটের আলো জায়গায়ই মাছটা পড়েছিল, কিন্তু এরপর তাকে আর দেখা যায়নি।

Source
তখন আমি কিছুটা ঘাবড়ে গেলাম।বারবার এদিক সেদিক খুঁজতে থাকলাম।তখন আব্বু বুজতে পেরেছিল।কারণ তখন যেন হঠাৎ করেই চারদিকে খুব জোরে বাতাস শুরু হলো।কিন্তু তখন বাঁশের জোপ ছাড়া আর কিছুই নড়ছে না।আর এই দেখে আব্বু আমার হাত ধরে সোজা হাটা দিল,কিছুই বলল না।আমি আব্বুকে অনেকবার জিজ্ঞেস করলাম কেন চলে যাচ্ছি,মাছটা তো পাই নি।আব্বু কিছুই বলে নি।শুধু বাড়ির সামনে এসে বলল মাছ পানিতে চলে গেছে।
তখন থেকেই আমার মনে খটকা লেগে আছে।আব্বু এমন কেন করল।আমার মনেও কিছুটা ভয় ছিল সেই পরিস্থিতির কথা ভেবে।মাঝে মাঝে তখন মনে হতো হয়ত অন্য কিছু।সত্যি-ই এটি মাছ ছিল না। কারণ এইরকম আরও অনেক ঘটনা আমার আব্বুর সাথেই ঘটে গিয়েছিল। আমাকে কিছুই জানায়নি তৎক্ষণাৎ। ঘরে এসেও জিজ্ঞেস করলাম, আব্বু বলল এটি পানিতে চলে গিয়েছে তাই দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু সত্যি বলতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেছিলাম।
তারপর ঘুমাতে গেলাম। যদিও সবসময় আমি আর আমার ছোট ভাই আলাদা ঘুমাতাম। কিন্তু সেদিন আমি ভাইসহ আম্মু আর আব্বুর সাথে ঘুমিয়েছি। আব্বু নিজেই বলেছিল যে একসাথে ঘুমাতে কারণ আব্বুর মনে কিছুটা ভয় ছিল। তার কয়েক দিন পর যখন হঠাৎ আমার ছোট ফুফু এলো তখন এইরকম কিছু ঘটনা বলতে লাগলো। তখন বুঝলাম মাছ রূপি অন্য কিছু আমার হাতে এসেছিল। আর এটা ভাবার সাথে সাথে আমার গায়ে যেন শিউরে উঠল। আর আব্বুও তখন বলল সেদিন আমার হাতে মাছ ছিল না,তাই পড়ার পর আর দেখতে পাই নি।
আসলে এটা কতটা সত্যি ছিল তা জানি না।তবে সেই রাতের কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে। ঐ দিকে রাতের বেলা ভুলেও যাওয়া হয় নি আর কখনোই। তবে আমার মতে এইরকম ঘটনাগুলো গ্রামাঞ্চলে একটু বেশি ঘটে। আর এটা আমি শুনেছি যে মাছের সাথে মিলিয়ে এই ঘটনা অনেক হয়।
এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ বাস্তব আর আমার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনী। এমন কিছু ঘটনা আমার আব্বুর সাথেও ঘটেছিল,তা আব্বুর কাছেই শোনা।আগামীতে আরও একটি পর্বে শেয়ার করব।যদিও বাস্তবিক গল্প,পড়ে জানাবেন কেমন লেগেছে।আর আপনাদের সাথেও যদি এরকম কিছু ঘটে থাকে তা জানার অপেক্ষায় থাকলাম।