বৃষ্টি ভেজা রাত।
শহরের সব আলো যেন ধুয়ে যাচ্ছে স্নিগ্ধতা আর নিঃসঙ্গতায়। খোলা জানালার পাশে বসে অনিমা তাকিয়ে আছে অন্ধকারে। বাইরের ঝিরঝির শব্দ যেন আজ তার মনের ভেতরের কান্নার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে।
তিন বছর হলো অনিমা আর আরিফের যোগাযোগ নেই। ভালোবাসা ছিল, অনেক ছিল। কিন্তু অভিমানটা যেন তার থেকেও গাঢ় হয়ে গিয়েছিল একদিন। একটা ভুল বোঝাবুঝি, একটা অপ্রকাশিত মনখারাপ... আরিফ বলেছিল, "তোমার মতো মেয়ে বুঝতে চায় না, শুধু শোনে নিজেরটা।"
আর অনিমা, অভিমানে ফেটে বলেছিল, "তাহলে আমাকেই ভুলে যাও।"
আর তারপরে শুধু নীরবতা।
অথচ সেই রাতেই, আরিফ এসেছিল অনিমার বাসার সামনে।
বৃষ্টি হচ্ছিল সেই রাতেও। হাতে একটা ছোট্ট চিঠি—"তোমার অভিমানটা বুঝতে পারি না, কিন্তু আমি তোমায় ছাড়া আর কিছু বুঝি না।"
কিন্তু অনিমা জানতো না। আরিফ ফিরে গিয়েছিল। শহর ছেড়েছিল।
আজ এতদিন পর, হঠাৎই বৃষ্টির মধ্যে একটা শব্দ হয় দরজার সামনে।
একটা চেনা ছায়া, একটানা কড়া নাড়া—
"অনিমা… আমি এসেছি…"
তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।
গলার স্বরটা, শিউরে উঠা কণ্ঠটা—
"আরিফ?"
দরজা খুলতেই এক জোড়া চোখ তার চোখের সঙ্গে মিশে যায়।
তিন বছরের অভিমান এক মুহূর্তে ভেঙে পড়ে সেই দৃষ্টিতে।
— "তুমি তো বলেছিলে, তোমাকে ভুলে যেতে।
— হ্যাঁ, কিন্তু কেউ একজন সেটা কোনোদিন পারেনি…"
— "তুমি এলে কেন?"
— "তোমার অভিমান ভাঙাতে। আর এই বৃষ্টির রাতে… বৃষ্টি আমার জন্য নয়, আজ তোমার চোখের ভাষা পড়তে শিখেছি আমি।"
অনিমার চোখ ঝাপসা হয়ে যায়।
সব বলা না বলা কথা, সব অভিমান—ভিজে যায় সেই একটুখানি হাসিতে, সেই একটুখানি সাহসে।
"তুমি ফিরে এসেছো…"
"তুমি ডাকোনি, তাও চলে এসেছি… হয়তো শেষবার, হয়তো শুরুটা আবার…"
রাতটা দীর্ঘ ছিল, কিন্তু তারা জানতো—
এই বৃষ্টি ভেজা রাতের পরে আর কোনো ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না।
ভালোবাসা যদি সত্যি হয়,
তবে অভিমানও একদিন বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়।
শেষ বাক্য:
"ভালোবাসা কখনো মরে না, সে অপেক্ষা করে — এক বৃষ্টি ভেজা রাতে সব অভিমান গলে পড়ার জন্য।"