বসন্তের সকাল। চারদিক ফুলের ঘ্রাণে ম-ম করছে। কৃষ্ণচূড়া আর পলাশের লাল-কমলা রঙে আকাশ যেন ঝলমল করছে। বাতাসে আছে একধরনের নরম উষ্ণতা আর মৃদু শিহরণ। আমি হাঁটছিলাম ধীরে ধীরে, কলেজ থেকে ফেরার পথে, কাঁধে ব্যাগ। মাথায় তখনও কিছু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল—ক্লাস টেস্ট, ভবিষ্যৎ, আর… তামিম।
ঠিক তখনই সবকিছু বদলে গেল।
এক মুহূর্ত।
এক বিকট আওয়াজ।
আমি ঘুরে তাকাই—তামিম দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার পাশে, হঠাৎ করে একটি গাড়ি বেপরোয়াভাবে তার দিকে ছুটে আসে। আমি দৌড়ে গেলাম। সময় যেন থেমে গিয়েছিল।
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
আর নিজে… গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা খেলাম।
এক মুহূর্তে সব আলো নিভে গেল। শুধু শুনলাম কারা যেন বলছে—
"ছেলেটা শ্বাস নিচ্ছে না! কারো এম্বুলেন্স নম্বর আছে?"
চোখ খুলে দেখি, আমি এক অদ্ভুত ঘরে। দেয়াল সাদা, জানালার বাইরে বসন্তের আলো জ্বলজ্বল করছে, অথচ এখানে এক অচেনা শান্তি।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে একজন—কোনো ডাক্তার না, কোনো মানুষও না, যেন আলোর তৈরি অবয়ব।
আমি কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম—আমার কণ্ঠ নেই।
তবুও সে যেন আমার মনের কথা পড়ে নিচ্ছে।
সে বলল, "তুমি বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য নিজের জীবন দিয়েছো। তাই তুমি এখন এক ‘পূর্ণ আত্মা’। তোমার জীবনের পর্ব শেষ হয়নি। আবার ফিরতে হবে।"
আমি জিজ্ঞেস করলাম—"কেন?"
সে বলল, "কারণ পৃথিবী এখনো তোমার কাছ থেকে কিছু আশা করে।"
হাসপাতালের বিছানায় চোখ খুলে দেখি—তামিম কাঁদছে।
"তুই আমাকে বাঁচিয়ে নিজে মরতে যাচ্ছিলি রে!" সে বলল।
আমি হেসে উঠি। বসন্তের আলো জানালা দিয়ে পড়ছে আমার মুখে।
আমি যেন প্রথমবারের মতো সত্যিকারের জীবনকে ছুঁয়ে দেখলাম।
শেষ নয়, শুরু
আমি আবার বাঁচলাম—একজন নতুন মানুষ হিসেবে। এখন থেকে আমি শুধু ‘আমি’ নই, আমি একজন যাকে আবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, পৃথিবীকে ভালোবাসার, মানুষের জন্য কিছু করার।
কারণ বসন্ত শুধু প্রকৃতির জন্ম নয়—এটা হৃদয়েরও পুনর্জন্ম।