পর্ব- ০
মানুষের জীবনটা বড়ই অদ্ভুত। কখনো ভালো কখনো খারাপ। ওর জীবনটা সুখেরই ছিলো।
.
"মাম্মি, মাম্মি, ভ্যাম্পায়ার কি জিনিস?"
"ভ্যাম্পায়ার? উমম..। আমি জানি না তোর সিসকে জিজ্ঞাসা কর।"
"ওকে।"
.
"সিসসি, সিসসি, (Sissie) তুমি কি জানো ভ্যাম্পায়ার কি?"
"ভ্যাম্পায়ার? হঠাৎ এই প্রশ্ন?"
"আমার স্কুলের বন্ধুরা বলেছে আমাকে নাকি ভ্যাম্পায়ার দের মতন দেখতে। আমার দাত দুটো নাকি ওদের মতোন।"
"ও তাই নাকি? আমি তো কখনো খেয়াল করিনি। হুমম.., সত্যিই তো আমার ছোট্টো ব্রোর দাঁত দুটো দেখি ওদের মতন। শুধু চোখ দুটো লাল হলেই ওদের মত দেখাতো।"
"তো, ওরা কারা? ওরা কি ভালো?"
"দুঃখিত লিটিল ব্রো। ওরা পচা। ওরা খুব ভয়ংকর ওদের সবাই ভয় পায়।"
"কি?! ওরা খারাপ? আরো বলো সিসসি।"
"ভয় পাবি না তো?"
"একদম না। আমি অনেক সাহসী।"
"হা হা হা... ও তাই নাকি? আমার ছোট্ট প্রিন্স টা অনেক সাহসী? ঠিক আছে, এখানে আয় আমার কোলে বস। আমি বলছি।"
"ওকে।"
"তাহলে শোন, ভ্যাম্পায়ারদের বাংলায় রক্তচোষা বা পিশাচ বলা হয়। ওরা ঘাড় মটকে মানুষের রক্ত খায়। ওরা অনেক বাজে। ওদের ভয়ে সবাই তটস্থ থাকে।"
"মুভির ওই ভিলেনগুলোর মতন?"
"হ্যাঁ, একদম ওই ভিলেন গুলোর মত।"
"ওদের কি সবাই ঘৃণা করে?"
"হ্যাঁ, অনেক ঘৃণা করে।"
"আমি ওদের মতো হতে চাই না। আমি একজন হিরো অফ জাস্টিস হতে চাই, যে সবাইকে বাঁচাবে, সবাইকে সাহায্য করবে, একদম পাপার মতন।"
"আমার প্রিন্সটা দখি বড় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সব সময় আমরা যা দেখি, তা সত্য নাও হতে পারে। বুঝলি?"
"না বুঝিনি।"
"একদিন তুইও বুঝবি।"
.
কিন্তু জীবন এক রকম যায় না। সবারই স্বপ্ন থাকে। কিছু মানুষের স্বপ্ন অপূর্নই রয়ে যায় আবার, কিছু মানুষের স্বপ্ন পরিবর্তিতও হয়ে যায়।
.
"কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে? আর মাম্মি, পাপা, সিসসির কি হয়েছে? ওরা কথা বলছে না কেন?"
"চুপ কর। ওদের খুন করেছিস তুই।"
"আ-আমি?! খুন?! ওরা আমার পরিবার, আমি কেন খুন করবো ওদের?"
"আর একটা কথাও না। চল আমাদের সাথে।"
.
এরপর থেকে শুরু হয় অরফানেজের অত্যাচার। দশ বছরের একটা বাচ্চা আর কত নিতে পারে? ও সততা এবং ভালো মানুষই ওর জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সবাইকে সম্মান করা শিক্ষা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, ভদ্রতা, সত্যবাদিতা, এই সকল পারিবারিক শিক্ষায় ওর গলার কাটায় পরিণত হয়েছিল।
.
"ওয়, গোলু।"
"জি, ভাইয়া কিছু লাগবে।"
"আজ থেকে তুই আমাদের সব কাজ করবি।"
"কিন্তু,ভাইয়া..."
"ওই, মাদার*দ। তরে কি কইছি কানে যায় নাই?"
"জি ভাই আমি করব, প্লিজ মারবেন না।"
"খান*র পোলা, যা ভাগ এখান থেকে।"
.
বড় ভাই, সমবয়সী এমন কি ছোটরাও ওর ভালো মানুষের সুযোগ নিয়েছে। দিনভর গাধার খাটুনি ও রাতভর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চলতো ওর উপর। আশপাশের সবার কাছে ও কেমন জানি একটা পাঞ্চিং বেগে পরিণত হয়েছিল। সবার রাগ, ফুর্তি সবকিছুর জন্যই ওকে পরিণতি ভোগ করতে হতো। এমনকি কেয়ারটেকার বা বড় ভাইদের নির্যাতনের শিকার হয়ে এসে অন্যরা ওর উপরে রাগ ঝাড়তো। দিনে দিনে ওর উপর নির্যাতন বেড়েই গিয়েছে। ধীরে ধীরে ও স্বাস্থ্য হারাচ্ছিল, অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। কিন্তু কিছু করার ছিল না। ওকে সহযোগিতা করার মতন কেউই ছিলনা। কিন্তু, এর আরো কিছু ভিন্ন রকমের প্রভাবও পড়ছিল ওর উপর। দিনরাত পরিশ্রমের ফলে ওর শরীরের আকার আকৃতি পরিবর্তিত হচ্ছিল। ওর নরম শরীর ধীরে ধীরে কংক্রিটের মত শক্ত আকার ধারণ করেছে। তার মাংসপেশি সব ফুলে উঠেছে। কিন্তু এর ব্যবহার ওর জানা ছিল না। এসব পর্যবেক্ষণ করার সুযোগও পেতো না ও। ওর জীবনে যৌবন ও কৈশোরের নতুন পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এবং সবচেয়ে বড় পরিবর্তন, তার ভেতর থেকে কিছু জিনিস হারিয়ে যাচ্ছিল।
.
তার 'মানবিক গুনা বলী'; 'অনুভুতি' এবং 'ভয়'।
.
.
.
To be continued...
এতক্ষণ যাবত মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন সবাই।
আল্লাহ হাফেজ।