পোস্টস

চিন্তা

উল্টানো চোখের কারসাজি

৩০ মে ২০২৪

অরিত্র আহমেদ

আল মাহমুদের একটা কবিতা আছে ‘উল্টানো চোখ' নামে। কবিতায় আল মাহমুদ বলছেন তাঁর চোখে এখন আবরণের কোনো অস্তিত্ব নেই। কোনো বক্তা বক্তৃতা করলে তিনি বক্তৃতা শুনতে পান না। বরং বক্তার জিহ্বার ওপর বক্তার আত্মাটাকে দেখেন। কেউ সেজদায় নত হলে আল মাহমুদ দেখেন এক কলস ভর্তি লোভ উপুড় হয়ে পড়েছে। অর্থাৎ দৃশ্যের আড়ালের দর্শন, কর্মের আড়ালের লক্ষ্যটাকেই আল মাহমুদ দেখতে পান তাঁর বিশেষ ‘উল্টানো চোখ' দিয়ে।

 
অবক্ষয়ের কালে এরকম উল্টানো চোখ নিয়ে জন্মালে সমস্যা আছে। কারণ অবক্ষয় যখন আসে, তখন মানুষ জানে না তার লক্ষ্য কী। মুখে বলে একটা জিনিস পাওয়ার কথা, কিন্তু মনে চায় অন্য জিনিস। শুধু মানুষ নয়, প্রতিষ্ঠানগুলিও সেই একই কাজ করে। জেনে হোক, না জেনে হোক, সবাই ভণ্ড হয়, সবাই অসৎ হয়, কারো কোনো বলবার মতো স্বাতন্ত্র্য থাকে না। এখন কেউ যদি তার উল্টানো চোখ দিয়ে এই ভণ্ডামিটা দেখে ফেলে, এই জোচ্চুরিটার কথা জেনে যায়, তো প্রথমে তার অবস্থা হবে ভূত দেখার মতো। এ কী করে সম্ভব? এই পচনের বিস্ফোরণ! প্রত্যেকটা পুরনো মূল্যবোধ বিধ্বস্ত, প্রত্যেকটা নতুন মূল্যবোধ গর্ভপাতের ফলে প্রায় মৃত, চারদিকে কেবল একটা জিনিসই প্রতিষ্ঠিত ও কার্যকর- সুবিধাবাদ। মানুষকে এসব বোঝাতে চাইলে তারা হাসবে, অবিশ্বাস করবে, বলবে, ‘ভালোটা দেখতে পাও না?’ ‘অমুক খুব নিরাশাবাদী’ ব’লে ঠাট্টা-মশকরাও করবে আচ্ছামতো। 

কিন্তু কখনো না কখনো দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় সবার। তখন চোখ উল্টে না গেলেও মানুষ সত্যিটাই দেখতে পাবে। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত? উল্টানো চোখ-ওয়ালা পাগলরা নিজের মনে ‘শিল্পের একক প্রদর্শনী’ নিয়েই জীবন পার করবে। যদিও ওই নিঃসঙ্গ প্রদর্শনীটাই বাস্তবের সারাৎসার, সমাজের সংক্ষিপ্ত ভাষ্য!