আরিয়ান ধীরে ধীরে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।
চোখে এক অদ্ভুত চিন্তার ছায়া।
তৃষাকে দেখতে পাচ্ছে না কোথাও—
সে কি রুমে আছে? না ছাদে? না হয়… গার্ডেনে?
পা টেনে টেনে এগিয়ে গেলো গার্ডেন এরিয়ার দিকে।
নরম বাতাস বইছে, গাছের ছায়া দুলছে…
আর ঠিক তখনই, দূর থেকে চোখে পড়লো এক দৃশ্য।
তৃষা মিস্টার আমানের সামনে দাঁড়িয়ে, হালকা হাসিমুখে কথা বলছে।
মিস্টার আমান হালকা ঝুঁকে কিছু বলছিলেন,
আর তৃষা তাঁর কপালের ওপর থেকে কি যেনো ধুলো মুছে দিয়ে ফেললো—
হয়তো খুব স্বাভাবিক এক কেয়ারিং মুহূর্ত,
কিন্তু আরিয়ানের চোখে সেটা ছিল অন্য কিছু।
চোখের পাতা ভার হয়ে এল, মনের মধ্যে চাপা রাগ… হিংসা…
এক ধরণের অদম্য অস্বস্তি শুরু হলো।
"তৃষা… আমার তৃষা… আর ওই মিস্টার আমান…"
ভাবনার গভীরে গর্জে উঠলো এক অশান্ত আগুন।
আরিয়ান গা টান করে হাঁটতে শুরু করলো সেদিকে।
প্রথমে ধীরে, তারপর একটু দ্রুত।
তৃষা ও আমান তখনো কথায় মগ্ন।
আরিয়ান কাছে যেতেই তৃষা আচমকা বিষয় পরিবর্তন করে বললো,
— “আচ্ছা মিস্টার আমান, আপনি গার্ডেনটা এমন যত্নে রাখেন কিভাবে?
ফুলগুলো তো যেনো রঙে রঙে কথা বলে!”
তৃষা ইচ্ছাকৃতভাবে কথার টপিক ঘুরিয়ে দিলো।
আরিয়ানের উপস্থিতি সে টের পেয়েছে।
আর মিস্টার আমানও কেমন যেনো চুপচাপ, মুখে এক চাপা অভিব্যক্তি।
আরিয়ান সব বুঝলো… কিন্তু কিছুই বললো না।
চোখে এক চাপা যন্ত্রণা, ঠোঁট আঁকড়ে থাকা এক রাগ…
কিন্তু মুখে কোনো শব্দ নেই।
তবুও, সেই মুহূর্তে কেউ না কেউ বুঝে গেলো—
আরেকটা ঝড় আসছে… হয়তো মনেই, নয়তো বাস্তবে।
গার্ডেনের আকাশটা ধীরে ধীরে কমলা ছোঁয়া নিতে শুরু করেছে।
বিকালের রোদ গাছের পাতা ছুঁয়ে ছায়া ফেলছে তৃষা আর আরিয়ানের মুখে।
মিস্টার আমান একটু চুপচাপ ভঙ্গিতে চারদিকে তাকিয়ে বললেন,
— “বিকাল গড়িয়ে পড়ছে… এখন যেতে হবে।”
স্বরে ছিলো সেই চিরচেনা সৌজন্য,
কিন্তু মন যেনো কোথাও ভারী হয়ে আছে।
তিনি একটু থেমে বললেন,
— “সবাই গুছিয়ে নিন। তাছাড়া শহরে ফিরেই অনেক কাজ আছে।
এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।”
এই বলে তিনি আরেকবার চারপাশটা একবার দেখলেন, যেনো কিছু মনে রাখার চেষ্টা করছেন।
তৃষা এক মুহূর্তের জন্য তাকালো আমানের দিকে।
তার চোখে যেনো প্রশ্ন—
আপনি কি সত্যিই ঠিক আছেন?
কিন্তু মিস্টার আমান কিছু বললেন না।
তিনি শান্ত মুখে ঘুরে গেলেন,
আর ধীরে ধীরে হেঁটে চলে গেলেন ভিতরের দিকে।
গার্ডেনের রঙ তখন আরও গাঢ়।
তৃষা আর আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে পাশাপাশি, কিন্তু কতটা দূরে…
তৃষার চোখ ছায়াময়, ঠোঁট নড়ছে না।
আরিয়ান মাঝে মাঝে তার দিকে তাকাচ্ছে,
কিন্তু কিছু বলছে না।
বাতাস কেবল তাদের চারপাশে নিঃশব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
যেনো প্রমাণ দিচ্ছে—
একটা দিন শেষ হচ্ছে, কিন্তু কিছু প্রশ্ন এখনো উত্তর চায়।
চলবে......