বিকেলের নরম রোদটা তখন ঘরের জানালা ছুঁয়ে হালকা আলো ছড়াচ্ছে।
গেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে হেনা। তার চোখের কোণে জমে থাকা জল লুকোতে পারছে না।
আরিয়ান ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে হেনার সামনে দাঁড়ালো।
গলার স্বরটা নরম করে বললো,
— “তোর জীবন একদিন অনেক সুন্দর হবে, হেনা। চিন্তা করিস না।
যা লাগে পড়াশুনার জন্য, সব কিছু আমি দেখব।”
হেনা চোখের জল আটকাতে পারল না।
সে জানে, এই মানুষটার সাথে তার সম্পর্ক কখনোই সহজ ছিল না,
কিন্তু এই ভালোবাসার মতো নির্ভরতা আর কারো কাছ থেকে সে পায়নি।
আরিয়ান চোখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসলো,
একটা শান্ত অথচ অদ্ভুত কষ্ট লুকানো হাসি—
তারপর হেনার মাথার কাছে গিয়ে আস্তে করে বললো,
— “ভালো থাকিস, হেনা। আমি আছি। সব সময়।”
ঠিক তখন মিস্টার আমান আর তৃষা একসাথে এসে পাশে দাঁড়ালেন।
মিস্টার আমান গম্ভীর ভঙ্গিতে বললেন,
— “মিস হেনা, আপনি যদি চান, আরিয়ান না থাকলেও, আমাদের সাথে কথা বলতে পারেন।
এ বাড়িতে আপনার খেয়াল রাখার জন্য মানুষ আছে। আপনি একা নন।”
তৃষা একটু মৃদু গলায় বললো,
— “হ্যাঁ, হেনা। আপনি যেনো নিজেকে একা ভাববেন না।
আমরা সবাই চাই আপনি ভালো থাকুন।”
হেনা কিছু বলতে পারলো না।
শুধু মাথা নাড়ালো,
আর চোখ নামিয়ে নিলো— যেনো কারো চোখে তার কষ্টটা ধরা না পড়ে।
আরিয়ান একটু পিছিয়ে এসে বললো,
— “তাছাড়া… বেশি দিনের ব্যাপার না।
সব ঠিক হয়ে যাবে, হেনা।
আমি সব ব্যবস্থা করে নেব।”
এই এক বাক্যে সবাই কিছুটা সান্ত্বনা পেল,
কিন্তু হেনার চোখের ভাষা যেনো বলে গেলো—
সে এত সহজে কিছু ভুলতে পারছে না।
তার মনে আজ হাজারটা প্রশ্ন, হাজারটা কথা…
কিন্তু বলার মতো, ভরসা করার মতো একটাও ‘নিজের মানুষ’ নেই।
এরপর বিদায়ের সময় এলো।
আরিয়ান একবার তৃষার দিকে তাকালো,
তৃষাও তাকিয়ে রইলো, কিছু না বলে।
চোখে চোখে অনেক কথা—
ক্ষমা, যন্ত্রণা, প্রশ্ন, কিছুটা অভিমান, কিছুটা স্বস্তি।
মিস্টার আমান একটু মাথা নাড়লেন,
আর গার্ডকে ইশারা করলেন গাড়ি রেডি করার জন্য।
তৃষা আর মিস্টার আমান এক গাড়িতে উঠলেন,
আর আরিয়ান তার নিজের গাড়িতে চুপচাপ উঠে পড়লো। কিন্তু মনের ভিতর অনেক হিংসা কাজ করছে, তৃষা মিস্টার আমান এর সাথে।
গেট ধীরে ধীরে খুলে গেলো,
তাদের গাড়িগুলো বেরিয়ে গেলো বাংলো বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে।
হেনা দাঁড়িয়ে রইলো দরজার পাশে—
একটু ক্লান্ত, একটু নিশ্চুপ,
কিন্তু চোখে অদ্ভুত এক খালি খালি ভাব।
আজ সে প্রথমবার নিজের ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে।
আর জানে, তার যাত্রা এখনো শেষ হয়নি—
শুধু শুরু হলো আরেকটি নতুন লড়াই।
চলবে......