এইভাবে ধীরে ধীরে গাড়ি বাসার সামনে এসে থামলো।
মিস্টার আমান আর তৃষা গাড়ি থেকে নামলো।
তাদের মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও এক ধরনের নীরবতা যেন ছেয়ে আছে।
গাড়ির শব্দ শুনে দাদি সামনের বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন।
দাদি বললেন—
“এই কী ব্যাপার! তোমরা আজই চলে এলে?
আমি তো ভেবেছিলাম আরও দুই দিন ঘুরে ফিরে, মজা করে আসবে!”
তৃষা একটু হেসে বললো—
“দাদি, আপনার কথা মনে পড়ছিল খুব, তাই ভাবলাম আর দেরি না করি।”
মিস্টার আমান পাশে দাঁড়িয়ে হেসে বললেন—
“আপনাকে ছাড়া ঘোরাঘুরি তেমন ভালো লাগে না দাদি।”
দাদি ঠোঁটে মুচকি হাসি এনে বললেন—
“এটা আবার কেমন কথা হলো! আমি তো বুড়ো মানুষ, তোমরা ঘুরে ঘুরে একটু আনন্দ করবে—এটাই তো আমার ভালোলাগা।”
তৃষা বললো—
“না দাদি, আপনি না থাকলে মনই ভালো থাকে না।”
দাদি এবার একটুখানি আদরের সুরে বললেন—
“আহারে আমার পুতু-পুতি দুজনের মুখেই এক কথা!
চলো চলো, ভেতরে এসো। তোমাদের জন্য কিছু স্পেশাল রান্না করিয়েছি।”
তৃষা আর আমান ধীরে ধীরে দাদির পেছন পেছন বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়লো।
বাড়ির চেনা গন্ধ, দাদির উপস্থিতি আর সেই শীতল ছায়ার মতো ভালোবাসা—
সবকিছু মিলিয়ে যেন এক নতুন প্রশান্তি ছেয়ে গেল তৃষার চোখে মুখে।
ওইদিকে আরিয়ান বারবার ম্যাসেজ করছে, ফোন দিচ্ছে—একটা পর একটা।
তার মনটা অস্থির হয়ে আছে, তৃষা উত্তর দিচ্ছে না, ফোনও ধরছে না।
বারবার সময় দেখে, বারবার কল করে, আবার থেমে যায়।
"হয়তো ব্যস্ত... হয়তো রাগ করেছে..."
নিজেকেই নিজে বোঝাতে থাকে।
কিন্তু তৃষার দিকে বাস্তবতা ভিন্ন।
সে এখন খুব ব্যস্ত, নতুন একটা বাস্তবতা তাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে।
হেনা রুমের এক কোণে চুপচাপ বসে আছে।
তার মুখে স্পষ্ট ক্লান্তি, চোখে চাপা আতঙ্ক।
রাত হয়ে গেছে—এই নতুন বাড়ি, জমিদারি স্টাইল,
অচেনা পরিবেশ, পরিচিত কেউ নেই।
সার্ভেন্টরা যথেষ্ট যত্ন নিচ্ছে,
কিন্তু সেই ভরসার জায়গাটা তো অন্য।
হেনা বারবার বালিশের পাশে রাখা বাটন ফোনটা হাতে নিচ্ছে,
আবার রেখে দিচ্ছে।
"কল করবো? না থাক, ও তো এখন তৃষার সঙ্গে..."
ভেতরে ভেতরে একটা টানাপোড়েন কাজ করছে।
হঠাৎ করে একটা হালকা শব্দে চমকে উঠে,
ফোনটা আরও শক্ত করে ধরে।
তাকিয়ে থাকে ফোনের স্ক্রিনে—
"আরিয়ান বাবু" নামটা জ্বলজ্বল করছে মাথায়।
তবুও... সে চুপ।
চোখে অদ্ভুত এক দ্বিধা—
"আমি কি ফোন করে ওকে বিরক্ত করবো?
ও তো এখন তৃষার সঙ্গে, ওদের তো সব ঠিক হয়ে গেছে..."
হেনা জানে, এখন ফোন করাটা স্বার্থপরতা হবে।
তবুও... ভয়টা জায়গা করে নিচ্ছে হৃদয়ে।
এত বড় বাড়ি, এত অচেনা মুখ...
এমন রাতে একা একা একটা মেয়ে কতটা নিরাপদ, সেটা সে জানে।
আরিয়ান ওদিকে অস্থির, তৃষা চুপ,
আর হেনা—ভয়ে, দ্বিধায় আর একটুকরো সাহসে গাঁথা একটা অপেক্ষার গল্প হয়ে বসে আছে।
মিস্টার আমান বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে, সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছেন। করো পথের কাটা হতে চান না....
চলবে......