অফিসের সব কাজ শেষ করে ক্লান্ত ভঙ্গিতে বাড়িতে ঢুকলেন সফিক এহসান।
গেট পেরিয়ে সোজা ড্রইংরুমে এসে সোফায় বসতেই গলা দিয়ে একটা হালকা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো।
তার মুখে একটু ক্লান্তির ছাপ, চোখে চিন্তার রেখা।
এদিকে রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছিল বাসার কাজের আওয়াজ।
সাবিরা বেগম ছুটে এলেন—
“শুনছো? এই নাও, ব্যাগটা দাও। এক গ্লাস পানি দিচ্ছি।”
তিনি তাড়াতাড়ি সফিক এহসানের অফিস ব্যাগটি হাতে নিলেন,
তারপর ট্রেতে রাখা ঠান্ডা পানি এনে হাতে ধরিয়ে দিলেন।
সাবিরা বেগম একটু চিন্তিত মুখে বললেন,
“কি হয়েছে? অফিসে খুব চাপ ছিল নাকি?”
সফিক এহসান একটু ধীরে গলায় বললেন,
“তোমার সুমহান পুত্র কি করছে, সেটা নিয়ে তোমার কোনো খোঁজখবর আছে?”
এই কথা শুনে সাবিরা বেগম একটু অবাক হয়ে গেলেন।
“কেনো এমন কথা বলছো? কিছু হয়েছে বুঝি?”
সফিক এহসান গম্ভীর গলায় বললেন,
“না তেমন কিছু না। তৃষার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে যা অবস্থা, ছবি তে চোখের উপর—কি করছে, কোথায় আছে, কিছুই জানো না তুমি।”
সাবিরা বেগম চিন্তার সরে বললেন,
"সাবিরা বেগম বলেন হে সেই সকালে নাস্তা করে বের হলো এখনো আসার নাম নেই, কোনো ফোন ও করলো না ছেলেটা। তৃষাকে ভুলতে তো সময় লাগবে তাই না। তুমি টেনশন নিও না।”
সফিক এহসান চুপচাপ পানির গ্লাস শেষ করলেন,
কিন্তু তার মুখের চিন্তার রেখাটা মিলিয়ে গেল না।
এই বলতে বলতেই আরিয়ান ঘরে ঢুকলো।
মুখে একরাশ হাসি, চোখে স্বস্তির ছাপ।
আজ অনেকদিন পর ওর চেহারায় এমন হালকা মন, এমন মুক্ত হাসি—যেটা সফিক সাহেব আর সাবিরা বেগম বেশ কিছুদিন ধরেই দেখেননি।
সফিক সাহেব ড্রইংরুমে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন, আর সাবিরা বেগম তখন চা নিয়ে আসছিলেন।
আরিয়ান ঘরে ঢুকতেই দু’জনের চোখ ওর দিকে পড়ল।
সফিক সাহেব চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন,
“এই ছেলে! আজ তোকে দেখি একদম বদলে গেছিস রে—এই হাসিখুশি মুখটা কতদিন পর দেখছি!”
সাবিরা বেগম পাশে বসে বললেন,
“আল্লাহ জানে কি হয়েছে, এমন মুখে হাসি তো বহুদিন দেখিনি… খুব ভালো লাগছে।
আর শোন, আজ আমরা ঠিক করেছি—তোর জন্য মেয়ে দেখব।
এবার তোকেও একটা গার্হস্থ্য জীবন শুরু করতে হবে বাবা। আমরা তো বুড়ো হচ্ছি…”
এই কথা বলতেই আরিয়ান এক চিলতে হাসি দিয়ে গম্ভীর হয়ে বলল,
“মেয়ে দেখতে হবে না মা।”
সাবিরা বেগম ও সফিক সাহেব দুজনেই অবাক হয়ে তাকালেন ওর দিকে।
“কেনো রে?”—জিজ্ঞেস করলেন সফিক সাহেব।
সাবিরা বেগম একটু চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
“তোর....." এই টুকু বলতেই...
আরিয়ান এবার একটু শান্ত কণ্ঠে বলল,
“হ্যাঁ মা, আছে। আমি তৃষাকে বিয়ে করব।
নতুন করে কারো কথা ভাবতে চাই না, মেয়ে দেখার দরকার নেই।”
এই কথা শুনে সফিক সাহেব ও সাবিরা বেগম কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে।
ওদের চোখে বিস্ময়, ভাবনা, আর কেমন যেন এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
তারা দুই জন ভাবতে লাগলো ছেলে বুঝি পাগল হয়ে গেছে....
সাবিরা বেগম কান্না জুড়ে দিল, আরিয়ানের বাবা আমার ছেলে মনে হচ্ছে মাথায় সমস্যা হয়ে গেছে। জলদি ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলো।
চলবে.....