Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব - ৯৭)

August 3, 2025

Boros Marika

55
View

আরিয়ান বলতে লাগলো, “আমি ঠিক আছি… তোমরা কি বলছো মা শোনো… একটু শুনে নাও।”
সাবিরা বেগম একটু কড়া গলায় বললেন,
“মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে, তোর সামনেই… তখন তুই নিশ্চুপ ছিলি, কোনো কথা বলিসনি, তাহলে এখন এইসব বললে আমরা কি ভাববো?”

আরিয়ান একটু চুপ করে থেকে ধীরে কিন্তু স্পষ্ট গলায় বলল,
“তুমি জানো না মা, কি হয়েছিল। আমি বিয়ের রাতে ফেঁসে গিয়েছিলাম, অনেক বড় একটা ঝামেলায়…
আমি আসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি।
আর এখন আমি কিছুতেই তৃষাকে ছেড়ে দিতে পারবো না।”

সফিক সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন,
“এই কথাগুলো আমরা আগে শুনিনি কেনো? আর এখন তো সব শেষ, তৃষা কারো ঘরের মেয়ে…”

আরিয়ান মৃদু কণ্ঠে বলল,
“না বাবা, সব শেষ হয়নি। আমার বস মিস্টার আমান চৌধুরী নিজেই বলেছেন, তিনি তৃষাকে ডিভোর্স দিয়ে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবেন।
তিনি জানেন, আমি ওকে কতটা ভালোবাসি… তিনি বাধা হবেন না।”

সাবিরা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের এক কোণে গিয়ে দাঁড়ালেন।
পেছন ফিরে বললেন,
“এটা কখনও সম্ভব না।
যেটা হয়ে গেছে, সেটা হয়ে গেছে…
একটা মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে, তাকে ফের নিজের ঘরে আনা…
এই সমাজে, এই বাস্তবতায়, সেটা কখনোই কল্যাণ বয়ে আনে না।
জীবনে অনেক কিছুই ভুল হয়, কিন্তু সেই ভুল বারবার করা… সেটা ঠিক নয় আরিয়ান।”

আরিয়ান দাঁড়িয়ে রইলো নিজের জায়গায়।
চোখে জল টলটল করছে, কিন্তু সে কাঁদছে না।
ওর গলাটা ভারি হয়ে এসেছে।
তবুও বললো,
“মা, আমি জানি, তুমি আমাকে ভালোবাসো…
আমার ভালোর জন্য বলছো, কিন্তু আমি সত্যি বলছি—
যদি তৃষাকে না পাই, আমি নিজেকে আর সামলাতে পারবো না।”

সফিক সাহেব এবার নীরব।
চোখ সরিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে রইলেন।
ঘরে এক অদ্ভুত চুপচাপ পরিবেশ নেমে এলো—
যেখানে একদিকে সমাজের বিধান, আর অন্যদিকে ছেলের অন্ধ ভালোবাসা।
আর এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়েছেন এক মা ও বাবা, যাদের হৃদয় এখন দ্বিধায় টালমাটাল।

সাবিরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়লেন।
চোখের পানি আর থামছে না।
হাতের আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে বললেন,
“আমার দশটা না, বারোটা না, একটা সন্তান তুই…
তাও যদি আমাদের কথা না ভাবিস, আমি আর কি বলব…”

তার গলায় কাঁপুনি, হৃদয় বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে যেনো।
সফিক সাহেব পাশে দাঁড়িয়ে আছেন, কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না।
তিনি জানেন, ছেলের মুখের কথা, ছেলের চোখের চাহনি, তার ব্যথা—সব সত্য।
কিন্তু তিনি জানেন এই সমাজের কঠিন বাস্তবতা…
আর মায়ের চোখে এখন একটাই ভয়—
এই সমাজ যদি ছেলেকে ভেঙে দেয়, সে কি বাঁচবে?

সাবিরা বেগম কাঁপা কাঁপা গলায় আবার বললেন,
“তুই তো আমাদের বুকের ধন…
তোর খুশি মানে আমাদের প্রাণ,
কিন্তু বল তো, তুই কি সেই খুশির জন্য এমন পথ বেছে নিচ্ছিস,
যে পথে তোর প্রতিটি পা কাঁটা হয়ে বিঁধবে তোর নিজেরই গায়ে?”

আরিয়ান চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
তার চোখে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো…
সে এগিয়ে এসে মায়ের হাতটা ধরলো, কিন্তু কিছু বললো না।
শুধু মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
মায়ের হাতের কাঁপুনি সে টের পাচ্ছিলো।

এই মুহূর্তে ঘরে কোনো শব্দ নেই—
শুধু নিঃশ্বাস, চাপা কান্না, আর অজানা এক ভয়।
আরিয়ান জানে সে যদি আজ চুপ থাকে, তবে সে চিরকাল হারাবে তৃষাকে।
তবে সে এটাও জানে, তার মা যদি আজ কাঁদে,
তবে সেই কান্না সারাজীবন ওর বুকের মাঝে পুড়বে।
 

চলবে...
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login