তৃষা খুব অপ্রস্তুত অনুভব করতে লাগলো। মিস্টার আমান এর সামনে একটা অদ্ভুত মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরি করছিল।
বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে সে আস্তে করে চুল আঁচড়াতে লাগলো।
তারপর ধীরে ধীরে বিছানায় উঠে বসলো।
মিস্টার আমান তখনও সোফায়, নীরব হয়ে চোখ বন্ধ করে আছেন কি না বোঝা যায় না, কিন্তু নিঃশ্বাসে চাপা একটা ভার—তা ঘরের বাতাসেই ছড়িয়ে পড়েছে।
ঠিক তখনই তৃষার ফোনটা বেজে উঠলো—
একটা ক্ষীণ ম্যাসেজ টোন।
তৃষা হাত বাড়িয়ে ফোনটা তুলে নিলো। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো — আরিয়ান
হৃদয়টা যেন একটু থেমে গেলো…
সে চোখ তুলে চুপিচুপি মিস্টার আমানের দিকে তাকালো।
মিস্টার আমান চোখ বন্ধ করেই ছিলেন, কিন্তু তৃষা বুঝতে পারলো—তিনি সবটাই শুনেছেন।
তৃষা চুপচাপ ম্যাসেজ খুললো—
“ঘুমোতে পারছো না জানি… কিন্তু তৃষা, একটা কথাও যদি বলো, আমি সব ছেড়ে তোমার কাছে আসবো…”
তৃষা তাড়াতাড়ি রিপ্লাই দিলো—
“রাত অনেক হয়েছে, এখন ঘুমাও। কাল সকালে কথা হবে।”
আর কোনও শব্দ নয়, আর কোনো অতিরিক্ত আবেগ নয়—
তৃষার মনে হচ্ছে মাথার ভিতর কেমন একটা ভারী ঝড় বইছে।
নিজের কাছে নিজেই অপরাধী সে।
একটা সম্পর্ক ছেড়ে আরেকটা সম্পর্কে এসে দাঁড়ানো…
সেটা ভালোবাসা হোক বা না হোক, দায়বদ্ধতা তৈরি করে।
কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো।
তারপর হঠাৎ মিস্টার আমান ধীর গলায় বললেন—
“তৃষা, কাল সকালে রেডি থাকবেন। উকিলের কাছে যাবো। আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রেখেছি।”
তৃষা চমকে তাকালো।
এত তাড়াতাড়ি!
অবিশ্বাস আর অবাক হয়ে সে তাকিয়ে রইলো মিস্টার আমানের দিকে।
তার গলায় কোনো রাগ নেই, কোনো অভিমানও না—
শুধু পরিশ্রান্ত এক মানুষ কথা বলছে,
যার চোখে রক্তিম ক্লান্তি, আর মনে একরাশ অপূর্ণতা।
তৃষা কিছু বললো না।
তার মুখে কোনও শব্দ এল না—
শুধু গলার নিচে আটকে গেলো একটা ব্যথা।
নিজের কাছে নিজের অপরাধবোধ মাথা তুলতে লাগলো।
ঘরের বাতাস ভারী হয়ে উঠলো।
বিছানায় তৃষা, সোফায় মিস্টার আমান—
দুজনেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে,
কিন্তু কারো চোখেই ঘুম নেই।
এই সম্পর্কে হয়তো ভালোবাসা নেই,
কিন্তু একটা অদ্ভুত শ্রদ্ধা, একটা নিরব টান—
তা আজও আছে।
যা হয়তো ভালোবাসার থেকেও ভারী।
কিন্তু তবুও…
তৃষা জানে, কিছু সম্পর্ক না চাইতেই শুরু হয়, আর কিছু…
চাইলেও শেষ হয়ে যায়।
মনের ভিতর ধুক ধুক করছে, আগামী কাল আমাদের এই সম্পর্ক শেষ করে আবার আরিয়ান এর কাছে ফিরে যাব......
চলবে....