হেনা বাংলো বাড়িতে একা।
চারদিক নীরব, শুধু মাঝেমধ্যে দূর থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ যেন তার নিঃসঙ্গতা আরও বাড়িয়ে তুলছে।
হেনা বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে।
একটা ফোন আসবে কি না…
একটা মেসেজ, একটুখানি খোঁজ…
কিন্তু না, স্ক্রিনটা নীরবই পড়ে আছে।
সে মনে মনে বলতে লাগলো,
“আরিয়ান বাবু… আমার মতো একটা মেয়েকে ভালো পরিবেশে এনেছেন, আশ্রয় দিয়েছেন—এইটুকুই তো অনেক।
আমি কি এমন সৌভাগ্যের মানুষ?
এই ভালোবাসা, এই যত্ন… এটা কি সত্যিই আমার প্রাপ্য?”
চোখে খানিকটা জলের কুয়াশা এসে জমেছিল, ঠিক তখনই ফোনটা বাজতে লাগলো।
স্ক্রিনে ভেসে উঠলো—Arian Sir 📞
হেনার মুখে হঠাৎ একটা চেপে রাখা খুশির ঢেউ খেলে গেল।
সে দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করলো—
“হ্যালো?”
আরিয়ান ওপাশ থেকে বললো—
“তুই ঠিক আছিস তো? কোনো সমস্যা হয়েছে?”
হেনা তাড়াতাড়ি উত্তর দিলো,
“না না, আমি ঠিক আছি।”
তার গলার সুরেই বোঝা যাচ্ছিল কতখানি স্বস্তি আর ভালোবাসা সে লুকিয়ে রাখতে চাইছে।
আরিয়ান আবার জিজ্ঞেস করলো,
“খাইছিস?”
হেনা হালকা হেসে বললো,
“হ্যাঁ, খেয়েছি।”
তারপর এক মুহূর্ত চুপ থেকে আরিয়ান বললো—
“শোন… আজ অনেক বড় একটা ধকল গেল। কাল সকালে অফিসে খুব চাপ থাকবে।
তবু আমি সময় বের করে আসবো তোর কাছে।
তুই চিন্তা করিস না… আমি আছি।”
হেনা শুধু বললো,
“আচ্ছা।”
একটা ছোট্ট শব্দ, কিন্তু সেই শব্দের মধ্যে যেন হাজারটা না বলা অনুভূতি, বিশ্বাস, আর একটা মেয়ের একাকীত্বে আশ্রয়ের অনুভব লুকিয়ে ছিল।
ফোন কেটে যাওয়ার পর হেনা ফোনটা বালিশের পাশে রেখে হালকা করে হাসলো।
চোখ বুজে জানালার দিকে তাকালো—
সেই জানালা দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছে ঘরের ভেতর।
হেনার মনে হলো আজ বহুদিন পর ঘরের এই নিস্তব্ধতা একটু কম নিঃসঙ্গ মনে হচ্ছে।
ওদিকে, আরিয়ান ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লো।
আজকের দিনের ঝড় তার শরীর আর মন—দুটোই ক্লান্ত করে তুলেছে।
কিন্তু ফোনটা রাখার পর সে একটু হালকা বোধ করলো।
হেনা ভালো আছে জেনে যেন নিজের মধ্যেও একটা আশ্বাস ফিরেছে।
কিন্তু মিস্টার আমান আর তৃষার ঘরে—
তাদের চোখে এখনও ঘুম নেই।
বিছানার একপাশে তৃষা, সোফার কোণে মিস্টার আমান—
দুজনেই নিঃশব্দে তাকিয়ে আছে অন্ধকারের দিকে।
কেউ কিছু বলছে না,
কিন্তু ভেতরের অস্থিরতা আর বেদনা চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে।
এই রাতটা যেন কারো জন্যই শান্তির না।
ভালোবাসা, ভুল, প্রতিজ্ঞা আর অসম্পূর্ণ অনুভূতির মধ্যে ডুবে থাকা একেকটা মানুষ, একেকটা সম্পর্ক।
এইভাবেই রাতটা পার হলো…
নীরবে, গোপনে, আর একেকটা হৃদয়ের গভীরতম কোণে রয়ে গেল অস্পষ্ট কিছু প্রশ্ন, আর ভয়।
সকাল হয়েছে পাখির কিচিরমিচির শব্দে আর হঠাৎ চিৎকার কান্নার আওয়াজ তৃষা মিস্টার আমান লাফ দিয়ে উঠে বের হলো ....
চলবে........