Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব - ১০০)

August 3, 2025

Boros Marika

50
View



 

তাড়াতাড়ি বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এল আমান।
হাঁপাতে হাঁপাতে চোখ পড়লো সোফার দিকে—
দাদি বসে আছেন, আর সার্ভেন্টরা তার পায়ের কাছে বসে আছে।
দাদির মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট।

আমান ছুটে গেলো কাছে।
"দাদি! কী হয়েছে?"—ভয়ে কাঁপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো।

একজন সার্ভেন্ট বললো,
"স্যার, দাদির পায়ে হঠাৎ মোচড় লেগেছে… খুব ব্যথা পাচ্ছেন।"

আর কথা না বাড়িয়ে আমান সাথে সাথেই ফোনটা বের করলো।
ডাক্তারের নম্বরে ফোন দিলো—
"ডাক্তার সাহেব, এক্ষুনি আসতে হবে। খুব জরুরি… দাদির পায়ে ব্যথা, বসতেই পারছেন না।"

ডাক্তার বুঝে শুনে বললেন আসছেন।
পনেরো-বিশ মিনিটের মধ্যেই ডাক্তার এসে হাজির।
তাড়াতাড়ি দাদির পা পরীক্ষা করে বললেন—

"পায়ের রগে টান লেগেছে, আর একটু মচকে গেছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
কয়েকদিন বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ব্যথার জন্য ওষুধ দিচ্ছি, আর গরম সেঁক দিতে হবে।"

ডাক্তারের আশ্বাসে আমান একটু হাঁফ ছাড়লো।
সার্ভেন্টদের নির্দেশ দিলো—
"গরম পানির ব্যাগ আর ব্যথার ওষুধ ঠিকমতো দিতে হবে।
দাদিকে একদম বিরক্ত করা যাবে না।"

দাদি তখন হালকা হেসে বললেন,
"এই বয়সে এমন একটু-আধটু তো হবেই রে বাবা। তুই এত চিন্তা করিস না।"

কিন্তু আমান দাদির চোখের নিচের ভাঁজগুলোর দিকে তাকিয়ে বুঝে নিলো—
এই বয়সেও দাদির কষ্ট সহ্য করতে তার নিজের কষ্ট হাজার গুণ বেশি।
 

তৃষা সব কিছু শুনে একবার দাদির দিকে তাকালো।
তারপর কোনো কথা না বলে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।

চুপচাপ গ্যাস জ্বালালো।
এক গ্লাস দুধ বসালো ফুটতে।
দুধে একটু হলুদ আর কালো জিরা মিশিয়ে কুসুম গরম করে নিলো।
তারপর ছোট একটা ট্রেতে গ্লাসটা রেখে আবার ফিরে এলো দাদির কাছে।

দাদির সামনে বসে বললো,
“এই দুধটা খেয়ে নিন, ব্যথা কিছুটা কমবে।”

দাদি একটু অবাক হয়ে বললেন,
“না মা, এখন আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।”

তৃষা মৃদু হেসে বললো,
“না খেলে চলবে না। এই দুধ ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে।”

দাদি কিছু বলার আগেই তৃষা গ্লাসটা তার ঠোঁটের কাছে ধরে দিলো।
জোর করেই নয়, কিন্তু মমতায়…
দাদির চোখে যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি ভেসে উঠলো।
একটু একটু করে দুধটা খেয়ে নিলেন।

এই দৃশ্য দেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডাক্তার একটু অবাকই হয়ে গেলেন।
মুচকি হেসে বললেন,
“দেখুন, ঘরে যদি এমন বউ থাকে… তাহলে কই, কেউ অসুস্থ থাকবে?”
“খুব ভালো করেছো মা। এই সময় এই দুধটাই ওষুধ।”

দাদির মুখে হালকা হাসি ফুটে উঠলো।
তৃষার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“আল্লাহ তোকে ভালো রাখুক মা। তুই যে কতটা আশীর্বাদ, তা তুই নিজেই জানিস না।”

রুম জুড়ে তখন এক অদ্ভুত শান্তি।
কিন্তু সেই শান্তির ভিতরেও একটা অস্থির ছায়া।

সেই ছায়াটা তখন আমান।
দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ, কিন্তু মুখটা কালো হয়ে ছিলো।
চোখে গভীর চিন্তার ছাপ।

দাদি কী জানে, কী বোঝে—
না, কিছুই না।

তবে আমান জানে,
তৃষা চিরদিনের জন্য চলে যাবে আরিয়ানের কাছে,
ডিভোর্সের জন্য উকিলের সঙ্গে দেখা করতে হবে আজ।

এই মেয়েটা এখনো তার সংসারে, তার পাশে, তার দাদির সেবায়—
কিন্তু আর কিছুদিন পর এই ঘরেই থাকবে না।
এই ভাবনাটাই আমানের বুকের ভেতর ছুরি হয়ে বিঁধতে লাগলো।

চলবে.....
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login