Posts

উপন্যাস

তোমার জন্য....( পর্ব - ১০১)

August 3, 2025

Boros Marika

50
View

যাই হোক...

এরপর দাদীকে ধীরে ধীরে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ে দিল আমান।
চাদরটা পায়ের নিচ পর্যন্ত গুছিয়ে দিয়ে বললো,
“দাদী, দুই দিন একা একা কিছু করবেন না। আপনার পাশেই ইন্টারকম আছে—যা প্রয়োজন, কল দিবেন।”

দাদি হালকা মাথা নাড়লেন।
তাঁর চোখে সন্তুষ্টি, মুখে একটা শান্ত হাসি।

এরপর মিস্টার আমান ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেলেন।
তৃষা তখন চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল, কিছুটা অস্থির মনে।

রুমে ঢুকেই আমান বললো,
“আপনি রেডি থাকবেন, একসাথে বের হবো। আজ উকিলের কাছে যেতে হবে।”

তৃষা গম্ভীর হয়ে গেলো।
বিবেকে একটা অদ্ভুত ধাক্কা লাগলো।
কী বলবে বুঝে উঠতে পারছিল না।
কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আস্তে করে বললো,
“আজ না যাই… দাদীর শরীর এখনো ভালো না। এই সময় তার পাশে থাকলে উনি খুশি হবেন।”

একটু নীরবতা…
তারপর মিস্টার আমান বললেন,
“আচ্ছা… তবে আগামীকাল রেডি থাকবেন।”
এই বলে সোজা ওয়্যারড্রোবের দিকে এগিয়ে গেলেন, অফিসের জন্য রেডি হতে লাগলেন।

তৃষা আর কিছু বলল না।
চুপচাপ নিচে নেমে এল রান্নাঘরে।
এটাই ছিল তার প্রথম বার রান্নাঘরে আসা।

সার্ভেন্টরা একটু অবাক হয়ে তাকালো।
একজন ফিসফিস করে বললো,
“আজ ম্যাডাম নিজে রান্নাঘরে?”
আরেকজন বললো,
“দেখো দেখি, সত্যি তো! ম্যাডাম এসেছেন।”

তৃষা কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে সোজা গিয়ে গ্যাস জ্বালালো।
গাজর কেটে নিলো, দুধ-চিনি মেপে নিলো।
গাজরের হালুয়া বানাতে লাগলো মন দিয়ে।
গোটা রান্নাঘরে তখন মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে।

তারপর বাকি সার্ভেন্টদের বললো,
“তোমরা তোমাদের কাজ করো। আমি হালুয়া করছি।”

সবাই একটু অবাক হলেও কেউ কিছু বললো না।
সবাই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

তৃষা একে একে নাস্তা গুছিয়ে টেবিলে সাজিয়ে রাখলো।
তারপর নিজেই উপরে গিয়ে দাদিকে সাবধানে ধরে নিচে নিয়ে এলো।

নাস্তার টেবিলে তখন সবাই আসছে।
দাদি, আমান—সবাই একসাথে বসলো।

হালুয়ার গন্ধে দাদি বললেন,
“আজ তো ঘরে খুব সুন্দর ঘ্রাণ আসছে!”

এক চামচ মুখে দিয়েই দাদির চোখে বিস্ময় আর মুখে প্রশংসা,
“এই হালুয়া কে করেছে বলতো! খুব মজা হয়েছে, কাল আবার করে দিও।”

আমান এর মুখটা একটু অবাক হয়ে উঠলো।

পাশ থেকে একজন সার্ভেন্ট বললো,
“ম্যাডামই করেছেন আজকের হালুয়া।”

দাদি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না।
চোখ বড় হয়ে গেলো।

তারপর সঙ্গে সঙ্গে নিজের ওয়ালেট আনার ইশারা করলেন পাশের সার্ভেন্টকে।
সার্ভেন্ট গিয়ে ওয়ালেট নিয়ে এলো।
দাদি ভেতর থেকে পাঁচ হাজার টাকা বের করলেন।

তৃষার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
“তুমি এই বাড়ির বউ। আজ প্রথম কিছু করেছো—এইটুকু আশীর্বাদ হিসেবে রাখো।”

তৃষা কিছু বলতে গিয়েও কিছু বলতে পারলো না।
শুধু হাসলো।
তার চোখে যেন একটুকরো শান্তি।

এরপর নাস্তা শেষ হলো।
মিস্টার আমান অফিসে যাওয়ার আগে থেমে দাঁড়িয়ে বললো,
“আজ হালুয়া খুব ভালো হয়েছে।”

তৃষা হেসে ফেললো।
এই প্রথম আমানের মুখে সরাসরি কোনো ইতিবাচক কথা পেল।

কিন্তু তারপরই মিস্টার আমান একটা স্থির কণ্ঠে বললেন,
“কিন্তু… এসব করলে দাদি পড়ে কষ্ট পাবেন। তিনি আপনার মায়ায় পড়ে যাবেন।”

এই বলে কিছু না শুনেই সোজা বেরিয়ে গেলেন অফিসের দিকে।

তৃষা দাঁড়িয়ে রইলো।
মুখের হাসি মিলিয়ে গেলো।
চোখের ভেতর একটা দৃষ্টি, যেন কিছু হারানোর ভয়।

চলবে....
 


 

Comments

    Please login to post comment. Login