আশার ঝুলিটা অনেক বড়
ক্ষনিকের এই জীবনে চাহিদার কোন কমতি নেই যেন। তৃপ্তি আসে না কোন কাজে। দূর থেকে যা সঠিক মনে হয় কাছে গেলে সৃষ্টি হয় সন্দেহ। জীবন আপন গতিতে চলতে থাকে, হারিয়ে যায় মাঝপথ থেকে কিছু ব্যক্তি বা জীবন্ত স্মৃতি। এইতো বছর পেরিয়ে গেল দেখতে দেখতে। বুক ভরা আশা নিয়ে যারা জীবন দিয়েছিল ২৪ এর জুলাই-আগস্টে। কেউ বা জীবন না দিলেও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছে। কোন কিছুই থেমে থাকেনি কারো জন্য। কিন্তু কারো আশা কি পূর্ণ হয়েছে আদৌ? দেশ কি মুক্ত হয়েছে বৈষম্য, ক্ষমতা
,লুটতরাজ থেকে? যে জাতির রক্তে পাকাপোক্ত হয়ে মিশে আছে দুর্নীতি দিয়ে গড়া সে কি পারবে বোনের অশ্রু মুছে দিতে? মায়ের বুকে ফিরিয়ে দিতে পারবে সীমান্তে বলি হওয়া ফেলানি, বুয়েটের আবরার বা মেজর সিনহা কিংবা আমাদের হিরো আবু সাইদ ভাইকে? কিছুদিন ফাঁকা বুলি মারিয়ে আবার যে যার মত ক্ষ্মতার তোশামদে মেতে উঠবে। ন্যায়পরায়ণ শাসক পেতে হলে ছোট বেলা থেকেই ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা দিতে হবে ন্যায়পরায়নতার কাণ্ডারি সিরাতে নববি (স) এর জীবনী। তবেই তারা শিখবে ন্যায়পরায়ণতার অর্থ কি? শিক্ষা দিতে হবে অর্ধ-জাহানের শাসক হযরত উমরের (রা) এর জীবনী। তবেই সে ক্ষমতার আধিপত্য মোকাবিলা করে সত্যের শাসন কায়েম করতে পারবে। দুঃখের বিষয় আমরা কতটুকু শিক্ষা দিই দ্বীনের জ্ঞান তাদেরকে? নৈতিকতার 'ন' কি শিক্ষা দেওয়া হয় আজকাল বাচ্চাদের। তাহলে তারা বড় বড় ধর্ষক, টেন্ডারবাজ না হলে কি হবে। আমাদের ক্ষমতার উদ্দেশ্য থাকে আমরা সম্পদের পাহার গড়ব,ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স করব, বাড়ি-গাড়ি করে আমোদ-ফুর্তি করে জীবন অতিবাহিত করব। তখন আমাদের মনে থাকে না জনতাকে দেওয়া কথাগুলো। আমরা ভুলে যাই কাদের রক্তের উপর দারিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছি। মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা আহজাবের ৩৩ নং আয়াতে এরশাদ করেনঃ "অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে"। মানুষের স্বাভাবিক ক্ষমতার প্রতি লোভ জানতে নিচে কিছু বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। প্রখ্যাত ইতালিয়ান রাজনীতিক, কূটনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ ও রাজনৈতিক দার্শনিক,নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি তার বই "THE PRINCE"এ বলেন,একজন ব্যক্তি ক্ষমতা লাভ ও তা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনে অসৎ বা নির্মম কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তার মতে "END JUSTIFY THE MEANS" অথাৎ লক্ষ যদি মহৎ হয়, তবে পথটা কিছু নিষ্ঠুর হলেও গ্রহণযোগ্য। ইমাম গাজ্জালি (রহ) বলেন,ক্ষমতার প্রতি আসক্তি এক ধরনের আত্মার রোগ। এই রোগ মানুষকে অহংকারী,মিথ্যাবাদী, দিমুখী ও দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে। ইসলাম মানুষকে আত্মসংযম, খোদাভীতি এবং জবাবদীহিতার চেতনার মাধ্যমে ক্ষমতার এই অন্ধ লালসা থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেয়। আমার স্পষ্ট করার বিষয় হল, আমাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্যের মিল থাকা উচিত এবং তা ইসলাম অনুসারে ঠিক করা উচিত। আমাদের মুল থেকে সংস্কার করা এখন সময়ের দাবি। অন্যথায় আমাদের থেকে জাতি ভালো কিছু পাবে না। যথারীতি ক্ষমতার পালাবদল ঘটবে আর আমরা আশা নিয়েই থাকব কিন্তু শুদ্ধ নিয়ত আর সুন্দরভাবে পরিচালনা করার অভাবে ক্ষ্মতায় থাকা মানুষগুলো অমানুষে পরিণত হবে এবং পূর্বের সময় থেকে আরও শক্তিশালী হয়ে রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠবে। এখন আমাদের উচিত সবকিছু মন থেকে লালসা মুক্ত ভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা করা। কেননা মহান আল্লাহ সুরা রা'দে এরশাদ করেন, মহান আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না যতক্ষন সেই জাতি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা না করেন। পরিশেষে মহান আল্লাহর কাছে শুধু এই কামনা তিনি যেন বাংলাদেশ নিয়ে যারা পূর্বে খেলেছে তাদের শাস্তি দেন এবং নতুন কোন জালিমকে ক্ষমতায় বসিয়ে আমাদের পরীক্ষা না করেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে হিদায়াত দান করুণ। মহান আল্লাহ আমাদের দেশকে আদর্শ দেশ হিসেবে কবুল করুণ। আমিন।