Posts

গল্প

"কন্টকসজ্জা "

August 4, 2025

Rezwana Roji

111
View

হ্যাঁ বাজি !

আতিকের এবার নতুন বাজির শিকার হলো নিহা। এবার নিহার মন নিয়ে বাজিতে মাতলো আতিক ।আতিক ভাবলো এই বাজিতে হেরে গেলে বন্ধুদের কাছে মুখ দেখাতে পারবেনা সে, তাই ভেবেচিন্তে খেলায় নামতে হবে ।

প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে নীহার সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলে কি করতে হবে অনেক ভেবেচিন্তে বের করল ওর সাথে বন্ধুত্ব করতে গেলে প্রথমে তাকে অতি ভদ্র ছেলে হতে হবে , সারাদিন  কেমিস্ট্রির এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত থাকে ,আর অনেক বেশি ভদ্র ছেলে হয়ে নিহার পাশাপাশি থাকে ,নিহা প্রথম বর্ষের হওয়ায় অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারে না,তখন আতিক তাকে সুন্দরভাবে সবকিছু বুঝিয়ে দেয়, আস্তে আস্তে নিহার যেন ভরসা র জায়গা হয়ে উঠেছে আতিক, যে কোন প্রয়োজনেই নিহার মাথায় আগে আতিক এর কথাই আসে।

এভাবে দেখতে দেখতে আতিক এর কাছ থেকে একদিন কেমিস্ট্রির নোট চেয়ে বসলো নিহা, 

এভাবেই আজ নোট কাল বই নিতে নিতে দুজনে বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠলো ।নিহার জন্য কত কিছুই না করতে হয় আজকাল। লাইব্রেরীতে সারাক্ষণ বসে থাকতে হয়, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকাও খেতে হয়। দিনে দিনে ওদের বন্ধুত্ব যেন বেড়েই চলেছে নিহা শুধু আতিককে বন্ধুই ভাবছে কিন্তু আতিক তো ভাবছে অন্য কিছু । আতিক এর মনের খবর কি আর নিহা জানে? না জানে না, জানলে কি আর আতিক এর সাথে বন্ধুত্ব করতো?

একদিন লেকের ধারে খুব কাছাকাছি বসে আছে দুজন, হালকা ঝিরি ঝিরি বাতাসে কিছুক্ষণ পর কিছু নাম না জানা ফুলের মিষ্টি সুবাস ভেসে আসছে, বাতাসে আজ যেন মিশে আছে অপূর্ব মাদকতা ‌আর সেই মাদকতায় যুক্ত হয়েছে নিহার সৌন্দর্য,

হ্যাঁ,আজ নিহাকে যেন অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে, আতিক তাকিয়ে আছে নিহার দিকে, আতিকের বুকের মধ্যে যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে ,কিন্তু নিহা!

 তার মনোযোগ তো শুধু বইয়ের দিকে।

বইয়ের ফাক দিয়ে নিহত কপালটা দেখা যাচ্ছে কপালে সুন্দর একটা কালো টিপ কি যে মিষ্টি লাগছে নিহাকে,

আতিকের ইচ্ছা করছে নিহার কপালে একটা চুমু এঁকে দিতে নিজেকে আর সামলাতে পারছে না সে , আতিক আবেগের বসে তাই করে বসলো।

কিন্তু নিহা এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না তাই নিহা আতিককে এক ঝটকায় সরিয়ে দিতে গিয়ে ডান হাত টা গালে গিয়ে ঠেকলো, এবং রাগ দেখিয়ে দ্রুত পায়ে  সেখান থেকে বেরিয়ে গেল, দূরে কয়েকজন দাঁড়িয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করছিল আর বিদ্রুপের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল।

আতিকের মাথায় যেন খুন চেপে গেল আতিকের চোখ দুটো রক্তের মত লাল হয়ে আছে, স্থির করতে পারছে না সে নিজেকে। কোথাকার পাড়াগাঁয়ের একটা মেয়ে আজকে সবার সামনে চড় মেরে বসলো ?এসব মেয়েদের কাছে সামান্য ব্যাপারগুলো যে এত বড় হয় তা জানা ছিল না ।

আজ পর্যন্ত কোন মেয়ে না বলারও সাহস পায়নি আর নিহা ?

নিহা ওকে এত বড় অপমান করল ?এই অপমানের প্রতিশোধ সে নেবেই । আর বন্ধুদের সাথে বাজিতে কখনো হারিনি সে এবারও তার অন্যথা হবে না নিশ্চয়ই!  

আতিক এবার মাথা ঠান্ডা করে বসলো নতুন করে অভিনয় শুরু করতে হবে,না নিহার সাথে কোন রাগারাগি করা চলবে না বরং ওর কাছে গিয়ে হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে হবে,

যে করেই হোক প্রেমের ফাঁদে ফেলতেই হবে তাকে,  সবার আগে নীহার মনে বিশ্বাস অর্জন করতে হবে তাহলে নিহা চোখ বন্ধ করে যেকোনো কাজ করে ফেলবে, আর একান্ত কাছে টেনে নিয়ে দূরে সরিয়ে দিলে একটা মেয়ে জন্য এটা কম কষ্টের হবে না আর নিহাকেও কাছে পাওয়া হবে একান্ত আপন করে।অহংকারও ধুলোয় মিশিয়ে যাবে একবারে। এই ভেবে নিয়ে চলল আতিক।


 

এদিকে ঘরে ফিরে নিহা কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না ।

নাহ,, আতিকের সঙ্গে এমন ব্যবহার করা একদমই উচিত হয়নি তাকে বুঝিয়ে বলা উচিত ছিল।

খুব খারাপ লাগছে নিহার আতিকের জন্য আবার মনে মনে বলছে কিন্তু এটা ঠিক যে আতিক যা করেছে সেটা অশোভনীয় একবার ফোনটা হাতে নিল কিন্তু না ভুল তো ভুলই ফোন করবেনা সে,

আতিকের বোঝা উচিত যে এটা তার ভুল অনুমতি ছাড়া কোন মেয়ের হাত ধরা টাও অন্যায়। এসব কথা ভাবতে ভাবতে ফোনে একটা এসএমএস চলে এলো সেখানে শুধু লেখা ছিল একটু জানালার পাশে আসবে? 

নিহা জানালা খুলেই দেখে আতিক এই শীতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে এবং হাতজোড় করে নিহার কাছে ক্ষমা চাইছে নিহা কিছুতেই ক্ষমা করতে রাজি নয় কিন্তু আতিকও ছাড়বার পাত্র নয় এভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো সে, নিহা এবার পর্দা টেনে চুপচাপ শুয়ে পড়ল , না কিছুতেই শান্তি পাচ্ছেনা সে, আতিক এর জন্য মন কেমন করছে,নিহার একবার ভাবলো আতিক হয়তোবা চলে গিয়েছে প্রায় তো ঘন্টা হতে চলল কিন্তু না অতিক কিছুতেই হাল ছাড়বেনা। প্রায় ঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে রইল সে, নিহা শুয়ে থেকেও শান্তি পাচ্ছে না জানালার পর্দাটা ফাঁক করে সে তাকিয়ে দেখে আতিক তখনও দাঁড়িয়ে এবার নিহার মনটা একটু হালকা হয়ে এলো, 

নিহা এবার আতিককে ফোন করে বলল তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম, কাল ক্যাম্পাসে তাড়াতাড়ি এসো দেখা হবে। 

আতিক এবার বাড়ির দিকে রওনা হল যেতে যেতে ভাবছে কোন মেয়েকে কাছে পেতে এতটা কষ্ট পেতে হয়নি তাকে এর প্রতিশোধ সে নিজেই, শীতে হাত-পা সব হিম হয়ে আসছে।

আর নিহা, নিহা ভাবছে অন্য কথা শুয়ে শুয়ে সে কতইনা স্বপ্নের জাল বুনছে কারণ নিহার জীবনে প্রথম প্রেম এটা ,প্রথম প্রেমের সিক্ত পরশে ওর মন ছুয়ে গেল।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যেন একটু বেশিই সাজাতে ইচ্ছে করছে নিজেকে, আগে তো কখনো এমন হয়নি?

আজ কোন ড্রেস পরবে সেটা নিয়েও ভাবতে হচ্ছে অনেক, অনেক ভেবে লাল রঙ্গের একটা ড্রেস পরে সেজেগুজে ক্যাম্পাসে এলো সে।

কিন্তু আতিক কোথায়?

 আতিকের কোন খবর নেই ।প্রায় দুপুর হতে চলল তবু আতিকের কোন খোঁজ নেই নিহা খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল ফোনটাও তুলছে না সে।  নিহার এত চিন্তা হচ্ছিল আতিকের জন্য কাল রাতে কতক্ষণ ঠান্ডার মধ্যে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়ল না তো? অসুস্থই যদি হয় তাই বলে ফোনটা রিসিভ করবে না সে! 

ফোনটা রিসিভ করে জানাতেই তো পারে যে ,সে অসুস্থ । না আর কিছুই ভালো লাগছে না, দুচোখ গড়িয়ে জল চলে এলো নিহার। এমন সময়,,

চলবে,,,,,

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 4 months ago

    সাবধান মেয়ে, ফাঁদে পা দিওনা