Posts

গল্প

মামার বিয়ে

August 4, 2025

এম ইউ ওহাব

81
View



 

রাজু আজ খুবই ব্যস্ত, সেই কাক ডাকা ভরে উঠে তার মায়ের ফরমায়েশ খাটতে খাটতে একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, তার যথেষ্ট কারণও রয়েছে কারণ অনেকদিন বাদে তার মামা বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরছেন, তার মামা তার মায়ের একমাত্র ছোট ভাই , সুতরাং বোনের , ছোট ভাইয়ের প্রতি স্নেহ,  ভালোবাসা থাকবে এটাই স্বাভাবিক , রাজুর মামা একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার , এমন কোন দেশ নাই,বা কোন জাত বেজাত বন্দর নাই  যেখানে  রাজুর মামার  পায়ের ছাপ পড়ে নাই। সেই মামা প্রায় সাত বছর পর দেশের  মাটিতে পা দিচ্ছে, কাজেই রাজু ব্যস্ত থাকবে এটাই স্বাভাবিক, তাও আবার বিদেশ থেকে দেশের মাটিতে  পা দিয়ে সরাসরি রাজুদের বাড়িতে উঠবে তাই সকাল থেকে রাজু রকেটের মতো ছুটছে যাতে তাদের  বাড়িতে তার মামার আদর আপ্যায়নের  কোনরকম ত্রুটি না হয়, এটা তার মায়ের অলঙ্ঘনীয়  আদেশ। রাজু যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, ইতিমধ্যে সে তার বন্ধুদের কাছে  তার মামার সম্বন্ধে যতগুলো অদ্ভুত গল্প বলেছে, তার  চক্ষু কর্ণের বিবাদ ভঞ্জনের জন্য  তারাও আজ রাজুর সাথে দল দিয়েছে তার মামাকে এক নজর দেখার জন্য। 


 

রাজুর মামা এক অদ্ভুত প্রকৃতির মানুষ, বয়স প্রায় চল্লিশের কাছাকাছি, রাজুর মা তাকে বারবার অনুরোধ  করা সত্ত্বেও বিয়ের পিঁড়িতে  বসতে রাজি হননি, তার মামার ধারণা পৃথিবীতে যত অশান্তি হয়, এই অশান্তির মূলে রয়েছে মেয়ে মানুষ, সুতরাং বিয়ে করে বাইরের অশান্তি নিজের ঘরে আনার মত বোকামি তিনি কিছুতেই করবেন না। তাই পৃথিবীতে যত চিরকুমার বিখ্যাত লোক আছে তাদের নিয়মিত  অনুসরণ করেন  এবং তাদেরকে আদর্শ হিসেবে  মানেন । রাজুর মামা জাহাজ চালানোর পাশাপাশি আরও একটি বিশেষ গুণতা রয়েছে তিনি ভালো ছবি আঁকতে জানেন, এর জন্য চির কুমার চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান ছিলেন তার আদর্শ গুরু।  

কিন্তু রাজুর মা এবার প্রতিজ্ঞা  করেছেন যেভাবে হোক তার ছোট ভাইকে এবার বিয়ের পিঁড়িতে বসাবেন, ইতিমধ্যে রাজুর মা  তার মামার জন্য কয়েকটি পাত্রী ও  দেখে রেখেছেন। 


 

প্রায় সন্ধ্যের কাছাকাছি সময়ে  রাজুর মামা রাজুদের বাড়িতে পদার্পণ করলেন, রাজুর মামার দৈহিক গঠন বলতে গেলে অসাধারণ, প্রায় ৬ ফিট লম্বা, গায়ের রং ফর্সা, নিয়মিত শরীরচর্চা করেন,  একটাই সমস্যা তার মাথার মাঝখানে ক্রিকেটের মাঠের  ৩০ গজ বৃত্তের মতো একটা বিশাল টাক রয়েছে এজন্য তিনি  মাথায় নিয়মিত ক্যাপ পড়েন, তার মামা সকালে যখন  সাদা পোশাকে শরীরচর্চা করেন তখন দূর থেকে তাকে দেখে বড়লাটের মত লাগে, মনে হয় লট মাউন্টব্যাটেন  দূর থেকে হেঁটে আসছেন। 


 

পরের দিন সকাল বেলায় রাজু মামা রাজুর হাতে একটা লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিলেন এবং বললেন এগুলো বাজার থেকে কিনে নিয়ে আয় , পাশ থেকে রাজুর মা বললেন লিস্ট আমার কাছে দে দেখি কি কি আনতে হবে, লিস্ট দেখে রাজুর মা বললেন এসবই কেনা আছে তোর অত  চিন্তা করতে হবে না

রাজুর মন খারাপ হয়ে গেল, কারণ এসব কেনার জন্য রাজুর মামা যে  টাকা দিতেন তার একটা অংশ তার পকেটে থেকে যেত । সকাল বেলা হতেই রাজুদের আত্মীয়-স্বজন  তাদের বাড়িতে আসা শুরু করলো, রাজুর মামা সবাইকে কিছু না কিছু দিয়ে সন্তুষ্ট করলেন, সবই বিদেশী জিনিস,  উপহার পেয়ে সবাই   খুবই খুশি,  রাজুকে একটা  টি শার্ট দিয়েছেন মামা, সেটা রাজুর গায়ে মানিয়েছে ও ভালো, এটা তার বন্ধুদের দেখানোর জন্য সে একেবারে ব্যস্ত হয়ে পড়ল , বিকেলবেলা টি-শার্ট গায়ে দিয়ে বন্ধুদের দেখানোর জন্য বেরোবে এমন সময় মামা ডাক দিয়ে বললেন, রাজু চল ইভনিং  ওয়ার্কটা সেরে আসি,তুই তো অনেক বড় হয়েছিস রে রাজু , তোর মায়ের কাছে সব খবর পাই, পথে হাঁটতে হাঁটতে মামা রাজুকে বললেন আরে তোর বন্ধুদেরকে একটাকেও তো দেখলাম না।  তুই কি বন্ধু-বান্ধবের সাথে মিশিস না? 

শোন বেশি বেশি করে বন্ধু-বান্ধবের সাথে মিশবি  তাহলে মনটা ভালো থাকবে। বিদেশে একটা লোকের মিনিমাম বিশটা বন্ধু  থাকে,  এজন্য তাদের মন সবসময় ভালো থাকে,  এজন্য তারা বেশি দিন বাঁচে। 

রাজু একটু সাহস করে বলল আচ্ছা মামা তোমার কয়টি বন্ধু আছে?  মামা বললেন তা প্রায় ১০-১৫টা তো হবেই, রাজুর একবার ইচ্ছা হচ্ছিল  জিজ্ঞেস করে  মেয়ে বন্ধু কয়টা আছে?  কিন্তু মেয়েদের সম্বন্ধে মামার যা ধারণা, এজন্য সাহস পেল না। 

সন্ধ্যার সময় বাসায় ফিরলে তার মা রাজুকে  উদ্দেশ্য করে বলল মামাকে নিয়ে কোথায় বেরিয়ে ছিলি  তোর বড় খালা অপেক্ষা করে করে এইমাত্র চলে গেল, আগামীকাল আবার আসবে  রাজুর বড় খালা শুচিবাই প্রকৃতির মেয়ে মানুষ, সে রাজুর মামার মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত ভালো করে পরীক্ষা করে দেখবে আগের মত আছে কিনা, 

এতোটুকু খারাপ দেখলে কেঁদে কেঁদে নিজেই অসুখ বাঁধিয়ে ফেলবে। 


 

রাত্রে খাবারের পর রাজুর মামার বিয়ের সম্বন্ধে কথাবাত্রা শুরু হলো, রাজুর বাবাই প্রসঙ্গটা প্রথমে তুললেন , তিনি  বললেন দেখো শালক ভাইয়া, বয়স তো অনেক হলো এবার একটা বিয়ে শাদী করে সংসারী হও, সন্ন্যাসী হয়ে কে কবে সুখী হয়েছে বল? 

রাজুর মামা বললেন দুলাভাই এই কথাটা  বাদ দিয়ে অন্য যদি কোন কথা থাকে বল আমি মনোযোগ দিয়ে শুনবো, এবার রাজুর মা গম্ভীর গলায় বললেন আমরা  তোর অনেক পাগলামি সহ্য করেছি  আর না আমি অনেকগুলো মেয়ে দেখেছি তোর জন্য, এর মধ্যে যেটা তোর পছন্দের  তার সাথে এবার তোকে আমি বিয়ে দিব। সারা জীবন ব্যাচেলার থাকবি, বংশের খুব সুনাম হবে না....  মামা এবার একটু জোর গলায় বললেন বেশতো  রাজু বড় হচ্ছে ওকেই বিয়ে দাও না, যা খরচ লাগে আমি দিবো, তোমরা সবাই খুশি হবে, বংশও  রক্ষা হবে, কি রাজু, রাজি তো! 

রাজুর মা রাজুর দিকে  তাকিয়ে  বললেন এখনো তুই  দাঁড়িয়ে আছিস বড়দের মাঝে কথাবার্তা হচ্ছে যা এখান থেকে, এরপর থেকে প্রতিদিন  রাজুর মামার জন্য পাত্রী দেখা শুরু হলো , রাজুর মামা প্রতিটা পাত্রীর কোন না কোন দোষ ধরে রিজেক্ট করে দেন।

অবশেষে ক্লান্ত হয়ে রাজুর মা  রাজুর মামাকে বললেন আমি হার মানছি তোর কাছে, তোর আর বিয়ে করা লাগবে না, যত তাড়াতাড়ি পারিস  বিদেশে চলে যা , একটা চায়না, জাপানি যখন তোর ঘাড়ে চেপে বসবে , তখন বুঝবি সংসার কি জিনিস, কথায় আছে না বাঙালি দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝেনা। 


 

প্রায় দু সপ্তাহ হয়ে গেল  রাজুর মামার বিয়ে নিয়ে কথাবার্তা এক প্রকার বন্ধ হয়ে গেছে, রাজু নিয়মিত তার ক্যাম্পাসে  যাওয়া আসা করছে, তার মামা তাদের বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে  ঘুরে সময় ব্যায় করছেন, তিনি আর তিন সপ্তাহ থাকবেন এরপরে সোজা চট্টগ্রাম থেকে  শিপে চাকরিতে যোগ দিবেন।  এদিকে রাজুর সব বন্ধুরা মিলে তারা একটা নতুন আইডিয়া খুঁজে বের করতে লাগলো যেভাবে হোক মামাকে  বিয়ে দিতেই হবে, তাদের ক্যাম্পাসে  ফাইনাল ইয়ারে একটা সুন্দরী মেয়ে ছিল, মেয়েটি রাজুর এক বন্ধুর খালাতো বোন, রাজু ভাবলো এই মেয়েটিকে যদি তার মামার পেছনে লাগিয়ে দেওয়া যায় তাহলে তাদের মিশন হয়তো সাকসেসফুল হতে পারে। কিন্তু তার মামা মেয়ে দেখলে দশ আর দুর থেকে হাঁটার চেষ্টা করেন, এইটাই যা সমস্যা , কিন্তু কোন কাজে হতাশ হলে চলবে না , জ্ঞানীরা বলেন" একবারও না পারিলে দেখো শতবার, কেন তাহা পারিবে না বলো বারবার " রাজুর বন্ধুরা এবার কোমর বেঁধে নামলেন, প্রথমে তারা রাজুর মাকে মেয়েটির  কথা জানালেন, রাজুর মা শুনে হতাস সুরে  বললেন দেখো বাবারা আমি তো পারলাম না, তোমরা পারো কিনা একটু চেষ্টা করে দেখো, কয়েকদিন পর রাজুর মা মেয়েটিকে দেখে আসলেন এবং মেয়েটি তার পছন্দ হয়েছে বলে জানালেন। 


 

মেয়েটির নাম সোমা, রাজুর  ক্যাম্পাসের চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী, নাক মুখের গঠন ভালো  তবে রংটা একটু চাপা, খুবই চটপটে স্বভাবের মেয়ে রাজুরা আশা করছে এই মেয়ে দিয়েই তার মামাকে বশ করা সম্ভব হবে। সব বন্ধুরা মিলে একটি মাস্টার প্লানও তৈরি করে ফেলল, যশোরে কোন একটা নাম করা শপিং সেন্টারে মেয়েটির সাথে তার মামার সাক্ষাৎ ঘটিয়ে দেওয়া হবে, সাক্ষাতের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী  অ্যাকশন প্লান দেয়া হবে, সিটি প্লাজা যশোরের একটি নামকরা শপিং সেন্টার, সেখানে তারা ভেনু ঠিক করে ফেলল, জুতা কেনার ওসিলায় রাজু তার মামাকে নিয়ে লিফটে  যেই দোতলায় উঠেছে, অমনি মেয়েটির সাথে রাজুর মামার ধাক্কা লাগলো, মেয়েটি ইচ্ছাকৃতভাবে তার হাতের  পার্স ফেলে  দিল, রাজুর মামা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না, তিনি সাথে সাথে sorry বলে মেয়েটিকে বললেন আপনার কোথাও লাগেনি তো!  মেয়েটি  নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, এত জোরে  ধাক্কা দিলেন, আঘাত লাগবেনা না এটা আপনি কি করে আশা করেন, মেয়ে মানুষ দেখলে আপনাদের মাথা ঠিক থাকে না তাই না? যতসব.... রাজু বলল, দেখুন আপনার ভুল হচ্ছে আমার মামা সেই প্রকৃতির লোকই না, তিনি মেয়েদের যথেষ্ট সম্মান করেন,  মেয়েটি আরো গভীরভাবে বলল, হ্যাঁ তার নমুনা তো দেখতেই পাচ্ছি। মেয়েটির সাথে যে ছেলেটি ছিল সে রাজুকে দেখে বললো, আরে রাজু যে, তুই এখানে কি করছিস, 

- মামাকে নিয়ে জুতো কিনতে এসেছিলাম, কিন্তু তুই এখানে? 

-  আমার বোনের সাথে একটু শপিং এ এসেছিলাম কিন্তু এই ভদ্রলোকটা আমাদের মুডটাই নষ্ট করে দিল।

-  আরে কাকে কি বলছিস, এ তো আমার মামা, তোকে যে মামার কথা বলেছিলাম শিপে চাকরি করে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার!

ছেলেটি এবার  বিনয়ী হয়ে  মাথা নিচু করে বলল সরি মামা ভুল হয়ে গেছে, মেয়েটি একটু দূরে মাথা নিচু করেছিল, ছেলেটি তার বোনকে  উদ্দেশ্য করে বলল আপা, ইনি রাজুর মামা, মস্ত বড় ইঞ্জিনিয়ার, তুমি যা ভাবছো তিনি সেই প্রকৃতির লোক নন।


 

মেয়েটি এবার বিনয়ের সুরে বলল, দেখুন এসব মার্কেটগুলোতে না অনেক ধরনের বকাটে ছেলেরা থাকে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে মেয়েদের সাথে এভাবে ধাক্কা লাগায়, আমি ভেবেছিলাম আপনি  তাদেরই মত কেউ.... সরি আমাদের ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দেবেন। 

রাজুর মামা এবার একটু স্বাভাবিক হলেন, বললেন না না এতে সরি বলার কি আছে আমিই তো ধাক্কা দিয়েছিলাম, ভুল তো আমারই। 

মেয়েটি আবার বলল ভুল আমারও  হয়েছে, আমার আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল। 

মেয়েটির সাথে  রাজুর যে বন্ধু ছিল সে যেমন বিনয়ী তেমনই চালাক, মামার  হাত ধরে বলল, পরিচয় যখন হল, চলুন না একসাথে চা খাওয়া যাক , আপনি কত জ্ঞানী লোক  কত দেশ-বিদেশ ঘুরেন, আপনার সাথে চা খাওয়া তো সৌভাগ্যের  ব্যাপার । 

এবার রাজুর পালা, সে আগ বাড়িয়ে বলল মন্দ হয়না কি বলেন মামা! 

মামা নরম সুরে  বললেন সবাই রাজি হলে আমার আপত্তি নেই।

চায়ের আড্ডায় তারা নানান বিষয়ে আলাপ হল, কখনো দেশ, কখনো বিদেশ, কখনো সাগর কখনো পাহাড়, কখনো গান, কখনো সিনেমা, একটা রোমান্টিক তাই সবার মন যেন ভরে উঠলো, বিদায় বেলায় মেয়েটি রাজুর মামাকে বলল,  সময় পেলে আমাদের বাসায় আসবেন  আব্বা আম্মা খুব খুশি হবেন, ভদ্রতার খাতিরে  রাজুর মামা বললেন আপনারাও রাজুদের বাসায় আসবেন ভালো লাগবে। 


 

পরের দিন সকালবেলায়  রাজু বাসার বাইরে যাচ্ছিল  উদ্দেশ্য বন্ধুদের সাথে আলাপ গতকালকের মিশনটা তারা কতটা সাকসেসফুল করতে পেরেছে, মামা ড্রইং রুমে বসে ছিলেন,তিনি  রাজুকে বললেন, চলো তোর সাথে মর্নিং ওয়ার্কটা সেরে আসি। 

পথে হাঁটতে হাঁটতে মামা রাজু কে বললেন, গতকাল কি একটা বিশ্রী  কান্ড ঘটলো বলতো, তাই ভাবছি সামনের ছুটিতে আর বাংলাদেশে আসবো না, বিদেশে ঘুরে ঘুরে কাটিয়ে দেবো, রাজু মামার হাত ধরে বলল, কি যে বলো মামা, কতদিন পর এলে, বাবা-মা কত খুশি হয়েছেন, নানা নানি হয়তো বেঁচে নেই, কিন্তু তোমার বোনদের প্রতি  তোমার একটা দায়িত্ব আছে, সেটাকে  তুমি অস্বীকার করতে পারো? 

মামা একটা দম নিয়ে বললেন, হ্যাঁ ওরাই তো আমাকে মানুষ করেছে, স্নেহের বাঁধন বড় বাঁধন, এটাকে অস্বীকার করবে সাধ্য কার, চল রাজু আগামীকাল আমরা কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি, 

- তা মন্দ হয় না, কিন্তু আমার তো জুতা কেনা হলো না মামা 

-  চল আজকে কিনে দেবো তবে ওই মার্কেটে আর নয় অন্য মার্কেটে। 

-  তাই হবে মামা, যশোরে কি শুধু একটা মার্কেট, এটার থেকে ভালো  শপিং কমপ্লেক্সে  যাবো। 


 

রাজু তার প্লান মত তার বন্ধুকে জানিয়ে দিল আমরা জেস টাওয়ারে যাচ্ছি তোরা ওখানে চলে আয়, রাজু ও তার মামা জেস  টাওয়ারে  ঢোকা মাত্র তার বন্ধু এবং তার বোনের সাথে দেখা, মামা মেয়েটিকে  দেখা মাত্রই পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু মেয়েটি মামাকে দেখামাত্রই বললেন কি সৌভাগ্য আমার, আপনার সাথে আবার দেখা হলো, শপিং করতে এসেছিলাম , কেনাকাটা শেষ এখন বাসায় ফিরছি, আপনারা বুঝি এইমাত্র আসলেন? ভালো জায়গায় এসেছেন এখানে অনেক ভালো ভালো জিনিস ফিক্সড প্রাইসে কিনা যায়। 

মামা একটু লাজুক মুখে বললেন, আমি তো অতটা চিনি না রাজুই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে, রাজু তার মামার দিকে তাকিয়ে বলল আমরা  দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গল্প না করে একটা রেস্টুরেন্টে বসলে ভাল হয় না... তৃতীয়তলায় একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে।

মেয়েটি হাসতে হাসতে  বলল, না রাজু আমাদের  অতটা সময় হবেনা, তাছাড়া তোমার মামাও খুব ব্যস্ত মানুষ আমাদের মত সাধারন মানুষের সাথে সময় কাটানোর মত সময় কি তোমার মামার হবে? 

মামা এবার আর চুপ থাকতে পারলেন না, তিনি বিনয়ের সাথে বললেন, গতকালকের মতো কি আজকেও ঝগড়া করবেন, আজ কিন্তু আমি কোন অপরাধ করিনি, রাজু বলল  চলুন না, কতটুকু বা সময় ব্যয় হবে। তাছাড়া আগামীকাল আমরা বেড়াতে যাচ্ছি, হয়তো এরকম সুযোগ আর ভবিষ্যতে আসবেনা। 

চা খেতে খেতে তারা অনেক রকমের আলাপ করল, মামার দেশ বিদেশের গল্প, বেড়াতে যাওয়ার গল্প, বিদায় বেলায় মেয়েটি বলল, এখনো তো বেশ কদিন আছেন এদেশে, আসুন  না আমাদের বাড়িতে একবার, বাবা- মা খুবই খুশি হবেন। 

মামা মৃদু হেসে বললেন, হ্যাঁ হাতে তো সময় অল্প তবে চেষ্টা করব একবার যেতে, আপনার বাবা মাকে আমার সালাম দিবেন। 

বাসায় ফেরার সময়  মামা রাজুকে জিজ্ঞাসা করল , মেয়েটি তোমার বন্ধুর কি হয়! 

- আমার বন্ধুর খালাতো বোন, আমাদের ইউনিভার্সিটিতে পড়ে, ফাইনাল ইয়ার কেমিস্ট্রির ছাত্রী, খুব ট্যালেন্ট আমাদের ক্যাম্পাসে মেয়েদের মধ্যে ওই তো ডিবেট করে, কয়েকবার ডিবেটে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খুব চটপটে স্বভাবের তবে আমাকে খুব স্নেহ  করে, ওই তো এডমিশনের  সময়  আমাকে অনেক রকমের হেল্প করেছিল। মামা চলো না -একবার ওদের বাসা থেকে ঘুরে আসি, খুব ভালো লাগবে ওর বাবা কলেজের শিক্ষক। তুমি তার সাথে গল্প করে মজা পাবে। 

 মামা একটু দীর্ঘশ্বাস করে বলল হ্যাঁ একবার  যাওয়া উচিত মেয়েটি যেভাবে বলল।  চল আগামীকাল ঘুরে আসি তারপরে সব বিষয় নিয়ে ভাবা যাবে। 


 

রাজু, রাজুর বন্ধুরা খুবই খুশি তাদের প্লান ঠিকমতো কাজ করছে, তবে তাদের ভয় হচ্ছে একবার যদি তার মামা বুঝতে পারে, তবে তা হিতে বিপরীত হলে যে কত মারাত্মক হতে পারে, সেটা ভেবে তারা মাঝে মাঝে নীরৎসাহিত হয়ে পড়ে, কিন্তু ভেঙে পড়লে চলবে না মামাকে এবার বিয়ে দিতেই হবে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত ফলাফল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। তার মামা সব দিক থেকে স্মার্ট মেয়েটির জন্য, যে কোন মেয়ে তার মামাকে দেখলে  পছন্দ না করার কোন কারণ নেই, মাথায় একটু টাক এই যা সমস্যা, তবে সেটা তো মামা সব সময় ক্যাপ পরে ঢেকে রাখেন। কত ফুল টাকওয়ালা পুরুষ ডাকসাইটে সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করে সংসার করছে, তার মামা পারবে না কেন, রাজু ও  রাজুর বন্ধু প্রতিজ্ঞা  করল তারা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে। পরের দিন মামা -ভাগ্নে সাগরদাঁড়ি মাইকেলের বাড়ি ঘুরে আসলো, মামা সেখানে অনেকগুলো ছবি তুললেন, "দাঁড়াও পথিক -বর/জন্ম যদি  তব বঙ্গে /তিষ্ট ক্ষনকাল "!

 কবির এই অমর বাণীর পাশে  মামা অনেকগুলো ছবি তুললেন।  রাজুকে বললেন বিদেশে যেয়ে তিনি এই ছবিগুলো বন্ধুদের দেখাবেন। 

পরদিন রাজুর মা রাজু কে বললেন হারে রাজু  তোরা মামা- ভাগ্নে সাগরদাড়ি  ঘুরে আসলি আমাকে তো একবারও বললি না আমিও সাথে যেতাম আমিও তো অনেকদিন ওখানে যায় না, তোর বাবা অনেক আগে নিয়ে গিয়েছিল , তুই তখন খুব ছোট। 

মামা বললেন আপা বড্ড ভুল হয়ে গেছে, তোমার কথা মাথায় আসেনি। তুমি, দুলাভাই সাথে গেলে আরো ভালো লাগতো। 

রাজু এই সুযোগে আগ বাড়িয়ে বলল বেশ তো কালকে চলো না সুমা আপুদের  বাড়িতে বেরিয়ে আসি,, বেশি দূরে তো নয় , মা বললেন তা মন্দ হয় না, ওরা তো বারবার যাওয়ার জন্য বলছে, মেয়েটাকে দেখলে একেবারে চোখ জুড়ে যায়। কিন্তু তোর মামা কি রাজি হবে, সে তো মেয়ে মানুষ দেখলে দশ হাত দূর দিয়ে হাটে। 

- কি যে বলো মা, মানুষকি সব সময় এক রকম থাকে , গতপরশু তো সোমা আপুদের সাথে আমাদের দেখা হল, মামাকেও তো যেতে বলেছে।  মা বললেন দেখ তোর মামা যদি রাজি হয় ভালো, না হলে আমরা দুজনে বেড়িয়ে আসবো, মামা আর চুপ  থাকতে পারলেন না, বললেন বেশতো তোমরা সবাই গেলে আমি আর বাড়িতে একাকী  কি করব , তবে সাথে দুলাভাইকেও নাও, মা বললেন না রাজুর বাবার আর প্রয়োজন কি? এই যাব আর আসব, রাজুর বাবার বাসায় আসতে একটু রাত হয়, তার আগেই আমরা চলে আসব। 

রাজু আর এক মুহূর্ত দেরি করল না, সে সাথে সাথে তার বন্ধুকে ফোন করে জানিয়ে দিল কেল্লাফতে, আগামীকাল সোমা আপুদের বাড়িতে যাচ্ছি , তুই সব খবর তাদের জানিয়ে দে, আমি এখনই সোমা আপুকে ফোন দিচ্ছি, আপু যেন একটু  সেজেগুজে থাকে। 

পরের দিন মামার পোশাকে একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেল, মামা সাধারণত  টি-শার্ট ছাড়া পাঞ্জাবি পরেন না, আজ তিনি পাঞ্জাবি পরলেন, ক্লিন শেভ করলেন, যথারীতি মাথায় ক্যাপ পড়লেন, এসব দেখে মা বললেন, আরে ছটু, বিদেশে  থেকে কি তোর রুচি বোধ একেবারে বদলে গেছে, পাঞ্জাবির পড়ে কি কেউ ক্যাপ মাথায় দেয়, মামা বললেন আপা ক্যাপ হল এযুগের ফ্যাশন, তোমরা পুরনো ধাছের  লোক এসব কিছু বুঝবে না, কিরে রাজু তুই কি বলিস! 


 

- ঠিক বলেছ মামা, আমি তোমার সাথে ১০০ ভাগ একমত। যেটা এখন সব থেকে বেশি বেবানান সেটাই এখন ফ্যাশন। তুমি মায়ের কথায় কান দিয়োনা তো মামা , আমি বলছি তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে। মা বললেন বুঝিনারে বাবা  এখন তোদের হাল ফ্যাশন, রেডি হয়ে নে তোরা অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। 


 

রাজুদের বাড়ি থেকে সোমাদের বাড়ি কিলো চারেক হবে, হামিদপুর খুবই সুন্দর একটি জায়গা, নড়াইল যেতেই প্রথমেই হামিদপুর। রাজুরা প্রায় এগারোটার দিক সুমাদের বাড়িতে পৌঁছালো, রাজুর বন্ধু তাদেরকে স্বাগত জানালো, সুমা আজ একটা মেরুন কালারের জর্জেটের শাড়ি পরেছে, খোপায় বেলি  ফুলের মালা দিয়েছে, তাকে দেখতে  আজ সত্যি অন্যরকম লাগছে, তার সাজ দেখে তার মা বললেন, আরে সোমা তুই কি আজ কোথায় বেরোবি, সোমা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল কি যে বল মা,  বাসায় না মেহমান আসছে  মা বিষয়টা বুঝলেন মেয়ের মাথায়  হাত দিয়ে বললেন সত্যি মা আজ তোকে খুব সুন্দর লাগছে। তোর বাবা দেখলে খুব খুশি হবে।  আধা ঘন্টা বাদ রাজুরা সোমাদের বাসায় আসলো সোমা এসে রাজুর মায়ের পা ছুয়ে সালাম করল, মা সোমার চিবুক  স্পর্শ করে বললেন সুখী হও মা, দেখো তুমি যে ঘরে যাবে , সে ঘর আলোকিত করবে এই আমি বলে রাখলাম। সুমা রাজুর মাকে বলল আন্টি,  মা আজ অনেক রকমের রান্না করেছেন, সন্ধ্যে  পর্যন্ত কিন্তু আমাদের এখানে থেকে যেতে হবে। এরপর রাজুকে বললেন, রাজু তোমার মামার যদি স্পেশাল কোন মেনু থাকে,আমাদের বললে আমরা তৈরি করে  খাওয়াবো, উনিতো বিদেশে থাকেন, কত রকমের দামি খাবার খান, আমাদের রান্না খাবার কি ওনার মুখে রুজবে। রাজু  মামার কাঁধে হাত রেখে বললেন মামা দেও তো দেখি একটা শক্ত মেনু, দেখি  সোমা আপু কিভাবে তৈরি করে। মামা বললেন  আমার আপার যা পছন্দ আমার তাই পছন্দ, আমার আপার হাতের রান্না খেয়ে আমি বড় হয়েছি। এবার রাজুর মা বললেন রাজু তোরা একটু বাইরে যাতো বাবা, তোর মামার  সাথে একটু কথা বলব, সবাই বাইরে গেলে রাজুর মা  তার ছোট ভাইয়ের কাঁধে হাত রেখে বললেন,হারে আজও কি তুই আমাকে অপমান করবি! মামা মাথা নিচু করে বললেন, আপা, কখনো কি তোমার কথার অবাধ্য হয়েছি,তোমাদের স্নেহ, আশীর্বাদের হাত মাথার উপর ছিল বলেই আজ আমি এত দূর  আসতে পেরেছি, ছোট ভাইয়ের কথায় বোনের  চোখে পানি চলে আসলো, সে তার ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল দেখবি তুই অনেক সুখী হবি।


 

বিদায় বেলায় রাজুর মা  নিজের গলার হার খুলে, সোমার গলায় পরিয়ে দিলেন , বললেন অপস্তুত হয়ে এসেছিলাম মা,  এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু দেবার ক্ষমতা নেই আমার, সুখী হও মা! 


 

প্রায় দু সপ্তাহ পর রাজুর মামার বৃহস্পতিবার  বিয়ের দিন  ঠিক হলো, রাজুর এখন ঘুম হারাম, বাবা মায়ের আদেশ কোন আত্মীয় যেন দাওয়াতে বাদ না যায়, ইতিমধ্যে বিয়ের কার্ড ছাপাতে দেওয়া হয়েছে, এই  ব্যাপারে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল এমন সময় মামা বললেন, রাজু আমি একটু বাইরে যাব চলো একসঙ্গে যাওয়া যাক, রাজু বলল না মামা তুমি বাড়িতে থাকো আমার মাথায় এখন অনেক  ঝামেলা, কতগুলো আত্মীয় বাড়িতে ছুটে  হবে তুমি জানো, তুমি বরঞ্চ বাড়িতে থেকে একটু রেস্ট নাও, মামা বললেন  কেন তোর তো জুতা  কেনা হলো না! 


 

- আর মামা জুতা,যে  ঝামেলা মাথায় চেপেছে, এটা শেষ হোক তারপরে দেখা যাবে।

- না রাজু, ব্যস্ততা আরো বাড়বে, এখনই সময় চল আমার সাথে। রাজু বুঝলো, জুতা কেনার অসিলাই  মামা তাকে কিছু বলতে চান। ঠিক আছে চলো। 

পথ চলতে চলতে মামা বললেন রাজু তোর সোমা আপা আমাকে পছন্দ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে খোঁজখবর না নিয়েই তোরা বিয়ে ঠিক করে ফেললি!

পরে যদি কোন ঝামেলা হয়! রাজু  একটু দাঁড়িয়ে তার মামাকে বলল, দেখো মামা আমরা এযুগের ছেলে, আমরা ইশারাই অনেক কিছু বুঝি, তোমাকে পছন্দ করবে না বাংলাদেশে এমন মেয়ে একটাও কি আছে?  আচ্ছা,  বুঝেছি তুমি সোমা আপুর সাথে  একটু দেখা করতে  চাও তো, ব্যবস্থা করে দিচ্ছি বিকেল বেলায় রেডি থাকো,এখন বলো সোমা  আপু তোমার সাথে কোথায় দেখা করবে? মামা বললেন, যে কোন একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হলে ভালো হয়, 

রাজু বলল না মামা ভাল হয় না, এর ভিতরে তো অন্ধকার থাকে তুমি তো আপুকে ভালোভাবে দেখতে পারবেনা, তুমি বরঞ্চ গার্ডেন পার্কে তার সাথে দেখা করো, তাহলে দুজন দুজনকে ভালো দেখতে পারবে এবং ভালোভাবে আলাপ করতে পারবে। মামা তোমাকে আর এখন আর আমি সময় দিতে পারবো না, তুমি বরঞ্চ এখানে ঘোরাফেরা করে বাড়িতে ফিরে যাও, আমি এবং আমার আরো দুজন বন্ধু মিলে আমাদের অন্য কাজ আছে। সময় হাতে খুবই কম, মাকে তো চেনো,অতিথি আপ্যায়নে  এতোটুকু এদিক ওদিক হলে  মাথার চুল একটা থাকবে? এই বলে রাজু তার কাজে বেরিয়ে গেল। 


 

বিকেলবেলা শহরের গার্ডেন  পার্কে মামা আগে থেকেই অপেক্ষা  করছিল সোমার জন্য, সোমাকে রাজু সাড়ে চারটার সময় দিয়েছে, সাড়ে চারটা বাজতে এখনো ১৫ মিনিট বাকি আছে, হঠাৎ সোমাকে রিকশা থেকে নামতে দেখে  রাজুর মামার দেহে যেন প্রাণ ফিরে এলো, তারা সুবিধামতো একটা জায়গায় বসে কুশলাদি বিনিময় করল, মামা  অনেকক্ষণ  আকাশের  দিকটা তাকিয়ে  ভাবতে লাগলো কিভাবে আলাপটা শুরু করা যায়, এমন সময় সোমা বললো, এভাবে চুপচাপ থাকবেন, তাহলে ডেকেছেন কেন? বেশি সময় থাকতে পারবো না দুই সপ্তাহ পর আমার বিয়ে, অনেক কাজ তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন। 

মামা এত সুন্দর বাতাসেও ঘামতে শুরু করলো, তারপর একটু দম নিয়ে বলল, দেখুন আমি তো, চাকরির সুবাদে অধিকাংশ সময় দেশের বাইরে থাকতে হয়, বাইরে থাকতে আপনার কোন আপত্তি নেই তো! 

- আপত্তি থাকবে কেন, বিয়ের পরে স্বামী -স্ত্রী একসাথে থাকবে এটাই তো নিয়ম, সেটা দেশে হোক  বিদেশ হোক, কেন আপনি কি বিয়ের পর আমাকে দেশে রাখতে চান!

-  আপনাকে অন্তত মাস্টার্সটা কমপ্লিট করার আগ পর্যন্ত দেশে রাখতে চাই। তারপরে আপনার ইচ্ছামত যে দেশ ভালো লাগবে সে দেশেই আমরা বসবাস করতে চাই। 

- সেটা আমারও ইচ্ছা, আপনি আমাকে আপনি না বলে তুমি বলাই ভালো, কারণ দুদিন পর তো তুমিই বলতে হবে, তাই এখন থেকে অভ্যাসটা করা ভালো।

আর শুনুন বিয়ের দিন  আমার অনেক বান্ধবীরা আসবে তাদের সাথে স্মার্টলি কথা বলবেন, কারণ আমার স্বামী সম্বন্ধে  তাদের অনেক বড় ধারণা  দিয়েছি, বিয়ের আগে  আমাদের আর দেখা না করাই ভালো, কারণ আমরা দুজনেই ম্যাচিউরড, আশা করি বিষয়টা বুঝতে পেরেছেন। মামা একটু বিষন্ন সুরে বললেন 

আজকে আপনাকে  মানে তোমাকে  এখানে ডেকেছি খুশি হওনি? 


 সোমা একটু বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার কি মনে হয় আমি অখুশি হয়েছি! হবু স্বামীর সাথে কথা বলছি, এটা যে কোন মেয়ের তাদের জীবনের সেরা সময়, আপনি আজ আমাকে ডেকেছেন আমি যে কত খুশি হয়েছি, সেটা কি সবাইকে চেঁচিয়ে  জানাতে হবে। শহরে আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন আছে, বিয়ের আগে তারা এভাবে আমাদেরকে দেখলে অন্য কিছু ভাবতে পারে।  

মামার যেন  ঘাম দিয়ে জ্বর  ছাড়লো, সাহস পেয়ে বলল, তোমার পছন্দের গয়নার ব্যাপারে আমাকে বলো  আমার আপাকে জানিয়ে দেবো।

সোমা আগের মত গম্ভীরভাবে বলল এটা মেয়েদের ব্যাপার  আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে। মামা বুঝলো আর বোধহয় সময় ব্যয় করা ঠিক হবে না,একটু দম নিয়ে বলল চলো তোমাকে রিক্সায় উঠিয়ে দেই, সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এল, সোমা  বলল হ্যাঁ সেই ভালো, বাড়িতে মা বাবা অপেক্ষা করছেন। এ সময় মেয়েদের বাহিরে বেরোনো মা-বাবা পছন্দ করেন না। 

রিকশা খানিক দূর যাওয়ার পর সুমা রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলল সোমা  হাতের ইশারায় মামাকে ডাকলেন, মামা কাছে গেলে সোমা  মামার  হাত ধরে হেসে বলল, বিবাহের আসরে  তোমাকে দেখার অপেক্ষায় থাকলাম, ততদিন  ভালো থেকো... 


 

আশ্চর্য মেয়ে মানুষের জাত, বাইরেটা দেখে বোঝার উপায় নেই ভিতরে যে কতটা তোলপাড় করছে, মামা অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত রিক্সার দিকে এক  দৃষ্টিতে  তাকিয়ে রইলেন। কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন মামাই ভালো বলতে পারবেন, হঠাৎ কোথা থেকে রাজু মিরাক্কেলের মত হাজির হয়ে মামাকে বলল, তোমাদের কি কথা বলা শেষ, সোমাআপু কই? মামা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে  বললেন এইতো এইমাত্র চলে গেল, তবে দেখা না হাওয়াই  ভালো ছিল রাজু! মেয়ে মানুষদের জগৎটাই আলাদা, কিছুই বুঝার উপায় নেই, রাজু মামার কাঁধে হাত দিয়ে বল ওসব কথা ছাড়ো মামা ওসব হিসাব  বিয়ের পর করবে এখন বাড়িতে চলো। 


 

প্রায় দু সপ্তাহ পর আজ রাজুর মামার বিয়ের দিন, মামাকে সেরকম ভাবে সাজানো হয়েছে, দুজন বন্ধুকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মামার মাথার মুকুট যেন কোন অবস্থাতেই খুলে না যায়, যেভাবে হোক  মামার মাথার বিশাল আকৃতির টাক কোন অবস্থাতেই যেন প্রকাশ না পায়। সোমাকেও লাল বেনারসিতে আজ অপরূপা লাগছে।  আনন্দ ও  বিশাল লোক  সমাগমের মধ্যে দিয়ে তার মামার বিয়ে হয়ে গেল। 

 বাসর রাত, রাজুর বন্ধুদের ইচ্ছা হচ্ছিল সারা রাত জেগে তার মামার বাসর ঘরে  কান পেতে শোনা নববধূকে তার মামা কিভাবে সম্ভাষণ জানায়, কিভাবে যেন  মা বুঝতে পারলেন, তিনি রাজুকে ডেকে বললেন, দেখ রাজু তোরা যদি এই দুষ্টুমি করিস, তোর মামা কিন্তু যথেষ্ট মাইন্ড করবে, এরপর আর রাজুরা কান পাতার সাহস করেনি।

বিয়ে বাড়ি, পরের দিন সবাই একটু দেরি করে উঠলো, রাজু  ঘুম থেকে উঠে দেখলো অনেক দেরি হয়ে গেছে, মামার ঘরের দিক তাকিয়ে দেখল আমার ঘর এখনো বন্ধ আছে, প্যান্ডেলের লোক সকাল বেলা আসার কথা এখনো তারা আসেনি তারা এসেছে কিনা দেখার  জন্য বাড়ির বাইরে বেরোলো, সামনে তাকিয়ে  তার চোখ ছানাবড়া, দেখল  মামা  সকাল বেলা মর্নিং ওয়ার্ক করে বাড়িতে ফিরছে, মামাকে রাজু বিস্ময়ের সুরে  বলল মামা  আজকেও মর্নিং ওয়ার্ক করতে বেরিয়েছো গতকাল না  তোমার বাসর ঘর ছিল! মামা, ভাগ্নের কাঁধে হাত রেখে বললেন, হ্যাঁ ছিল, বাসর ঘর থাকলে মর্নিং ওয়ার্ক করা যাবে না কোন কিতাবে লেখা আছে, শোন তোর সাথে জরুরী কথা আছে, এজন্য সকালবেলায় বাইরে তোর জন্য অপেক্ষা করছি।

  - মামা প্লিজ, এক্ষুনি বল, আমার ভয় করছে, বাসর ঘরে সুমা আপুর সাথে কোন ঝামেলা করনি তো! 

  মামা বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললেন, হ্যাঁ উভয়পক্ষ যখন সমান সমান  তখন ঝামেলা হবে বৈকি! কাল রাতে তোর সোমা আপুর সাথে আমার এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে, যা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। 

-  মামা প্লিজ হেঁয়ালি করো না, তাড়াতাড়ি বল আমার তো হাত -পা কাঁপছে, কত কষ্ট করে যে তোমাদের বিয়ে দিলাম, সেটা আল্লাহপাক ভালো জানেন। এখন বলো কি হয়েছে.... এ বিষয়ে মাকে কিছু বলেছো? 

মামা, ভাগ্নের ঘাড়ে আরো জোরে একটা চাপ দিয়ে বললেন, এসব বিষয়ে গুরুজনদের বলা যায় না, কিন্তু ভাগ্নেকে বলা যায়, তাহলে শোন্ গত কালকের ঘটনাটা বলি....


 

তখন  রাত প্রায় আড়াই থেকে তিনটা হবে, তোমার সোম আপুর সাথে অনেক রকমের গল্প হল, এখন ঘুমাবার পালা, তোমার সোমা আপু বললো,দেখতো ঘরের দরজাটা ভালো করে লাগানো আছে কিনা, আমি নিচে নেমে ঘরের দরজাটা ভালো করে পরীক্ষা করে আবার বিছানায় আসলাম, আমার মাথায় যথারীতি বরের  মুকুট, তোমার আপু বললো,মাথার মুকুট টা খুলো, মাথার মুকুট নিয়ে কি রাতে ঘুমাবে, এই বলে  তোর আপু নিজ হাতে আমার মাথার মুকুটটা খুলে দিতেই আমার মাথার বিশাল গোলা আকৃতির  টাক বেরিয়ে পড়ল, তোমার আপু এক দৃষ্টিতে আমার মাথার বিশাল টাকের দিকে চেয়ে থাকলো,  আমি ভাবলাম এখনই  বোধ হয় কুরুক্ষেত্র শুরু হয়ে যাবে, অথবা দরজা খুলে বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে, কিন্ত এরপরে যা ঘটলো,তা সত্যি মীরাকল, অবিশ্বাস... এমন সময় মামার মোবাইল বেজে উঠলো, রাজু বলল বন্ধ করতো  মামা মোবাইল বাংলা চ্যানেলের মত বিজ্ঞাপন বিরতি দিও না, আমার যে আর  তর সইছে  না মামা, প্লিজ তাড়াতাড়ি বলো না- তারপরে কি হলো.. 

মামা একটু দম নিয়ে বললেন, যা বলছিলাম তোমার সোমা আপু এক দৃষ্টিতে  আমার মাথার টাকের দিকে চেয়ে আছে আমি টেনশনে দরদর করে ঘামছি, এমন সময় তোর সুমা আপু বলল একটু কাছে আসো, আমি কাছে গেলে আমার বিশাল আকৃতির টাক মাথায় একটা চুমু খেয়ে বলল, আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসি, তোমার এই বিশাল আকৃতির টাক কেও তেমন  ভালোবাসি। এখন থেকে মাথায় আর ক্যাপ পড়বে  না, এই আমার আদেশ, আমি বিনয়ের সাথে তোমার সোমা আপুকে বললাম, এ আদেশ যথাযোগ্য ভাবে পালন করা হবে মহারানী... 


 

রাজু আনন্দে লাফিয়ে উঠে বলল, ও মামা ইউ আর সো গ্রেট, বাসর ঘরে তুমি তো একবারে মাত করে দিয়েছো মামা,  আর দেরি নয় আগামীকালের বৌভাতের পরেই তোমরা মধুচন্দ্রিমায় বেরিয়ে পড়ো, ইতিমধ্যে সমস্ত আয়োজন আমি করিয়ে রেখেছি। কিন্তু মামা তোমার তো সবই তো হল  কিন্তু আমার জুতা তো কেনা হলো না! 


 

মামা রাজু কাঁধে হাত রেখে বললেন, চল এখনই বেরিয়ে পড়ি, আজ যশোর শহরের যত জুতা আছে সব তোকে কিনে দেবো, একথা শুনে মামা- ভাগ্নে দুজনে অট্টহাসিতে  ফেটে পড়লো। পাশের একজন পথচারী তাদের দুজনকে এভাবে হাসতে দেখে বলে উঠলো  যশোর শহরে আস্তে আস্তে পাগলের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে, এ কথা শুনে মামা-ভাগ্নে আরো জোরে হেসে উঠলো।  



সমাপ্ত 







 











 









 

  








 

Comments

    Please login to post comment. Login

  • সবাইকে মামার বিয়ের গল্পটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি, আশা করি গল্পটা আপনাদেরকে অনেক আনন্দ দেবে, ভালো থাকবেন।

  • মামার বিয়ে এটি একটি রম্য রচনা, আশা করি পাঠকদের ভালো লাগবে। এটি আমার এই অ্যাপসে প্রথম প্রকাশিত গল্প, সবার শুভ কামনা করছি।