গ্রামের নাম চরঘাট। সবার মতই সাদামাটা গ্রাম, কিন্তু একটা পুরনো পোস্ট অফিস ছিল সেখানে, আর ছিল এক বৃদ্ধ—পোস্টমাস্টার গঙ্গাচরণ।
বয়স হয়েছে, কিন্তু এখনও সকালবেলা লাল ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে সাইকেল চালিয়ে চিঠি বিলি করেন। আজকাল অবশ্য চিঠি খুব একটা আসে না। সবাই মোবাইল আর ইমেইলেই কথা বলে। কিন্তু তবুও গঙ্গাচরণ প্রতিদিন অফিসে যান, মনে করেন—“যদি কোনো একদিন কেউ একটা চিঠি পাঠায়...”
একদিন সকালে পোস্ট অফিসে ঢুকেই গঙ্গাচরণ চমকে গেলেন। ধুলোমাখা একটা চিঠি রাখা টেবিলের ওপর। খামের গায়ে লেখা—"মা'র কাছে"। ঠিকানা নেই, ডাকটিকিট নেই, শুধু নাম।
তিনি খুব ভাবলেন—“গ্রামে তো এমন অনেক মা আছেন। কার জন্য চিঠিটা?”
কিন্তু কে দিয়েছে চিঠিটা? কিভাবে এল?
চিঠির খামটা খুলে তিনি পড়তে লাগলেন। চিঠিতে লেখা—
মা,
আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? অনেকদিন তোমার সঙ্গে দেখা হয় না। জানি, শহরে আসতে তোমার কষ্ট হয়, তাই আমি এবারই আসার কথা ভাবছি।তোমার হাতের রান্না, দুপুরবেলার সেই গল্পগুলো, সব ভীষণ মিস করি।
মা, এবার ফিরে আসছি।
—তোমার ছেলে, রাজু
গঙ্গাচরণ আবেগে গলা খুঁজে পেলেন না। "রাজু... রাজু তো দশ বছর আগে শহরে গিয়েছিল, তারপর আর ফেরেনি। তার মা রেনুদি তো এখন একাই থাকে।"
পরদিন সকালে তিনি রেনুদির বাড়ি গিয়ে চিঠিটা তুলে দিলেন।
রেনুদি চিঠি হাতে নিয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে থাকলেন। তারপর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল একফোঁটা জল।
"তুই জানিস না গঙ্গা, আমি প্রতিদিন ওর জন্য চিঠির অপেক্ষা করি... আজ এত বছর পর এল ওর খবর। ধন্যবাদ তোরে।"