Posts

চিন্তা

জনতা পথ দেখায়, চোখ খোলা রাখবার দায় আপনার!

August 5, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

81
View

টাইমলাইনে দ্য ডেইলি স্টারের আজকের ফ্রন্ট পেজের ছবি ছেপেছি। ৫ আগস্ট ২০২৪ -এ যুগপৎভাবে সংক্ষুব্ধ ও উচ্ছ্বসিত জনতার করতলে জাতীয় সংসদ। ছবিটির রিচ খুবই কম। রিঅ্যাকশন দু চারটা যা এসেছে তাও আবার হাসির ইমু। জানি না কেন?

আ.লীগ এখনো বিশ্বাস করে না তারা পরাজিত হয়েছে। অথচ দেশ চালাচ্ছে তারাই যারা আ.লীগকে বিতাড়িত করে দেশছাড়া করেছে। বিশেষত গত বছর ৫ আগস্টে সেনাপ্রধানের মুখে যাদের নাম সর্বাগ্রে এসেছিল তারাই এখন সর্বময় পাওয়ারে।

গণ-অভ্যুত্থানের ৫ মাস্কেটিয়ার কি কিছু পেয়েছে? হ্যাঁ তারা আনকোরা রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। তাদের দুইজন তরুণ সদস্য সরকারে আছে। রাষ্ট্রীয় নীতিনির্ধারণী জায়গায় তাদের স্টেক ভালোভাবেই আছে। তাদের কথাই ইন্টেরিম গভমেন্টের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার‌।

বিএনপি কি কিছুই পায়নি? অবশ্যই পেয়েছে। তাদের শীর্ষ নেত্রী কারামুক্ত হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন। দ্বিতীয় নেতা লণ্ডন থেকে নিয়মিত নেতাকর্মীদের সাথে কম্যুনিকেট করছেন এবং সার্বক্ষণিক তদারকিতে রাখতে পারছেন। হাঁট-মাঠ-ঘাট প্রায় একচ্ছত্রভাবে তাদেরই নিয়ন্ত্রণাধীন। বিশেষকরে স্থবির হয়ে পড়া তাদের রাজনীতি আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

দেশের যারা মুসুল্লি শ্রেণি, নিজেদের জানপ্রাণ দিয়ে লড়েছেন, তারা কী পেলেন? একমাত্র এরাই বঞ্চিত আছেন। পিনাকী ভট্টাচার্যের মতো রাহবার প্রাপ্তি ছাড়া তাদের আর কোনো বস্তুগত অর্জন নাই। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো জনপরিসরে বড় সমাবেশ করে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছেন -তাদেরও অধিকার আছে ক্ষমতার পাদপ্রদীপের কাছে যাওয়ার। স্রেফ ওই পর্যন্তই। তারা রাজনীতির কী বুঝেন? তারা দেশ চালাতে পারবেন না? গণতন্ত্রের উপযোগী তারা না -তলে তলে এইসব বাহানায় চিরায়ত নিয়মে ক্ষমতার বহুদূরে তাদেরকে শোভা হিসেবে রেখে দেওয়া হবে। আর ক্ষমতাসীনরা নিজেদের আত্মম্ভরিতার পৃষ্ঠায় লিখে রাখবে, 'তোমরা দূর থেকেই দেখতে খুব সুন্দর! পিপীলিকার মতো পাখা গজায়ে এদিককার আগুনে ঝাপ দিতে এসো না।' মিস্টার ভট্টাচার্য মনস্তাত্ত্বিক কন্টেন্ট বানাবেন, তোমরাই তো সব, তোমরাই সকল, তোমরাই ইন্তিফাদা, তোমরাই ইনকিলাব! আসলে পুরোটাই ঠন ঠনা ঠন ঠন।

অপরদিকে দেশের যারা প্রকৃত মালিক, সেই প্রান্তিক কৃষক, শ্রমজীবি, মুটে, মজুর, জেলে, কামার, কুমোর, দুধওয়ালা, মুরগিওয়ালা, আইসক্রিমওয়ালা এবং জুতো সারাইকারী -কী পেল? কিছুই না। আগেও তাদের দীর্ঘশ্বাস সঙ্গী ছিল, আর এখন দীর্ঘশ্বাসে ক্রমাগতভাবে যোগ হচ্ছে বিচিত্র নাভিশ্বাস। এক গাজীপুরেই গেল এক বছরে শত কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বেকারত্ব বরণ করে নিয়েছে প্রায় লক্ষ মানুষ।

যে কথা শুরুতে বলছিলাম। ছাত্রজনতার প্রবল প্রতাপের মুখে শেখ হাসিনা ও তার সভাসদরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। জনরোষকে তাদের তরফে মেটিক্যুলাস ডিজাইন নামের ষড়যন্ত্র দিয়ে ঢেকে দেয়া হলেও -মাত্র একপক্ষকালের আন্দোলনের তোড় ১৫ বছরের শক্তিধর আ.লীগ যে, সামাল দিতে পারল না-সেই ব্যর্থতা তারা মানতে চায় না। উপরন্তু কোনো অনুশোচনা না করে হুমকি দেয় -এই আসছি, আসব করে সবাইকে দেখে নেয়ার! কাউকে দেখে নেয়ার আগে নিজেদের দিকেই ফের তাকিয়ে দেখুন না। আপনাদের ভুল রাজনীতির জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে এত মানুষ শহীদ হলো, কত পুলিশের পরিবার ভাঙল -সেই দায় আ.লীগ কেন নেবে না?

যদি বিগত তিন তিনটা জাতীয় নির্বাচনের অভিশাপে গণতন্ত্র বিনষ্ট না হতো, তাহলে আজকে যারা ক্ষমতাসীন তারা কি এতটা বিদ্রোহী হয়ে উঠত, দেশজুড়ে এইভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চলত? এক কথায় উত্তর হলো না। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পালাবদল হলে নিশ্চিত ভোটাধিকার পাওয়া মানুষকে এমন বেপরোয়া না হলেও চলে।

উদারনৈতিক গণতন্ত্রকামী আমরা চাই দেশের সর্বমানুষ সহাবস্থানে থেকে সুন্দর সময় কাটাক। কেন ক্ষমতার জন্য একজন মানুষ অপরের প্রতি হিংস্র ও প্রতিশোধপরায়ণ হবে। কেন যার যার চেতনাকে উর্ধ্বে তুলে ধরে অন্যকে আন্ডারমাইন করবে? কেন আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে একটা রাষ্ট্র জনকল্যাণমূলক হয়ে উঠবে না? আমরা প্রেমময় ও শান্তিবাদী হতে চেয়েছিলাম। আমরা তো সত্য ও সুন্দরের পূজারি হতেই চেয়েছিলাম। অথচ এখনো আমরা যতটা অনুমান করি দেশটা ৫ আগস্টে এতটা ত্যাগ স্বীকার করার পরও নিজেকে সামান্যতম বদলে নিতে পারল না। আমরা যেন দেখি অতীতের ছায়াগুলো আরো দৈত্যাকারে বেড়েই চলেছে। এর অন্যতম বড় কারণ চোর, বাটপার, লুটেরা, বদমাশদের অবস্থার কোন হেরফের হয়নি। যে যার জায়গায় বহাল তবিয়তে আছে। ক্ষেত্রেবিশেষ কারো কারো শক্তি আরো বেড়েছে।

'মানুষ' সংস্কারের ছিটেফোঁটাও আমরা কোথাও দিখছি না। আমাদের আশাভঙ্গের দিন আর কবে ফুরাবে? কী একাত্তর, কীবা চব্বিশ -বীর জনতা সবাইকে হাতধরে পথ দেখায় ঠিকই। কিন্তু চোখ বন্ধ রেখে চারিধারে না তাকানোর দায়টা কেবলই আপনাদের দুয়ারে কড়া নেড়ে যায়! অথচ আপনি জানান দেন, এই পৃথিবীতে আপনার চেয়ে বেশি আর কেউ ভালো দেখে না!

কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতায় যেমনটা বলে রেখেছেন:
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দেখে তারা;
যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই -প্রীতি নেই -করুণার আলোড়ন নেই
পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।
যাদের গভীর আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি
এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক ব'লে মনে হয়
মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা
শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।

লেখক: সাংবাদিক 
৫ আগস্ট ২০২৫

Comments

    Please login to post comment. Login