Posts

উপন্যাস

মায়া গন্ডি পর্ব৯

August 6, 2025

Mohammad Nur

57
View

মায়া গন্ডি
.
পর্ব ৯
.
মোহাম্মদ নূর
.
বর্তমান-
নজরুল আবার গাড়িটা চালু করল আর সবাইকে গাড়িতে বসতে বলল। ঠিক তখনই, কেউ তার হাত টেনে ধরল। নজরুল দেখল, এটা লতিফ মিয়া। সে বলল,
— “ওহ কাকা, ভুইলা গেছিলাম। ঐ কাকারে কিছু টাকা দিয়া দে।”

লতিফ সঙ্গে সঙ্গে তার কলার টেনে ধরল আর ফিসফিস করে বলতে লাগল,
— “লাগবো না তোর টেহা! যাহ, গেরাম ছার! এহনই যাহ! বাঁছবার চাইলে আর কুনুদিন এই গেরামে পাউ রাহিছ না! যা, যা, যাহ বের হ!”

নজরুল ভ্রু কুঁচকে সব দেখছে। লতিফ যেতে যেতে একা একাই বলল,
— “আমার কথাতে বিশ্বাস না অইলে, আজকে রাইতে কালি ঘাটে আহিছ! সব পরিষ্কার হইয়া যাইবো।”

নজরুল এক ঘোরের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছিল। হুঁশ ফিরল তার লোকদের ডাকে। সবাই ভয়ার্ত মুখে বলল,
— “ভাই, থাহার কুনু দরকার নাই, চলো আমরা যাইগা।”

নজরুল নিজেই গাড়ি চালাতে লাগল। লতিফের শেষ কথাগুলো তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।

এদিকে সাহিনা তার ছেলের লোকজনদের এমন তাড়াহুড়ো করে পাঠাচ্ছে। যেন তার ছেলেকে কোনো রাক্ষসের মুখ থেকে উদ্ধার করতে হবে। তিনি বলতে লাগলেন,
— “কে কোথায় আছো, গাড়ি নিয়ে বের হও! আমার ছেলেকে ঐ গ্রাম থেকে নিয়ে আসো!”

সাহিনা যেন পাগলের মতো হয়ে গেলেন।

ঐশ্বর্য দেয়ালে হেলান দিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। এলোমেলো চুলে, বিধ্বস্ত চেহারায় ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,
— “ভয় পাচ্ছেন? কালি ঘাট এখন পাপমুক্ত। ওখানে যদি কিছু থাকে, তাহলে তা শুধু গ্রামের মানুষের আতঙ্ক।”

সাহিনা প্রশ্ন করলেন,
— “আচ্ছা, তুমি তো বিবাহিত! তোমার স্বামী-সন্তান, মা-বাবা, ভাই বোন কোথায়?”

ঐশ্বর্য কথাগুলো শুনে আবার কান্নায় ভেঙে পড়ল। সাহিনা বুঝতে পারলেন, মেয়েটার মনে অনেক চাপা কষ্ট।

— “তুমি তো সবটা বলোনি। কী হয়েছিল তোমার সঙ্গে? যার কারণে তোমার জীবনে এই অন্ধকার নামল?
আর তুমি বলেছিলে তুমি রহমান বাড়ির মেঝো মেয়ে। তাহলে তোমার বড় যে ছিলেন সে কি ভাই ছিলেন? না বোন?”

ঐশ্বর্য চোখের জল মুখতে মুছতে ফুপিয়ে কাদতে লাগলো। তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
— “সে আমার বড় বোন — উর্মি। ধীরে ধীরে সব বলব আপনাকে। আজ মনে হচ্ছে সব বলে ফেলি।”

সাহিনা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, চুলগুলো একটু গুছিয়ে দিলেন।

ঐশ্বর্য বলল,
— “জানেন, আমার মা খুব সাহসী আর রাগী ছিলেন। আমাদের অনেক ভালোবাসতেন, বিশেষ করে আমার জন্য যেন পাগলি ছিলেন।
তিনি কখনো আমাকে কষ্টে দেখতে পারতেন না।”

(ফ্ল্যাশব্যাক – ১৯৮৭)

চোখে তীব্র আলো এসে লাগলো। সারা শরীর কাঁপছে।তার মুখে কিছু একটা লাগানো, শ্বাস নিতে কষ্ট কষ্ট হচ্ছে। ঝাপসা চোখে ঐশ্বর্য দেখতে পেলো বিছানার চারপাশে সাদা পোশাক পরা কিছু মানুষ ছুটোছুটি করছে।সে হটাত বুঝতে পারলো কেউ তার হাতে ধারালো সুইয়ের মতো কিছু গেঁথে দিল।
অল্প সময়েই সে আবার অচেতন হয়ে গেলো।

হঠাৎ ঘুম ভাঙে কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে। ধীরে ধীরে চোখ মেলে দেখে — এটা রহমান বাড়ি নয়, এটা হাসপাতাল।
তার মাথায় রবি হাত বুলাচ্ছেন। ঐশ্বর্য বলতে চাইছে ‘বাবা’, কিন্তু কণ্ঠ রুদ্ধ। কিছুই বলতে পারছে না ঘলা ভারি হয়ে আসছে।

রবি বললেন,
— “কথা বলো না মা। ডাক্তার নিষেধ করেছেন। কী দরকার ছিল ঐখানে যাওয়ার? জীবনের ৬টা দিন হারাইলা তুমি।”

ঐশ্বর্য কিছু বলতে চাইলে রবি বাধা দিলেন।
সে দাদুর কথা, হুমায়রার কথা জানতে চাচ্ছিলো,কিন্তু কিছুই বলতে পারলো না।

রবি বাইরে চলে যেতে যেতে বললেন,
— “আমি দেখি, আজই হাস্পাতাল থেকে ছুটি নেওয়া যায় কি না।
নওয়াজ, ভিতরে এসে বসো।”

নওয়াজ ভিতরে এল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।

ঐশ্বর্য অনেক কষ্টে নিজের গলাকে একটু স্থির করে বলল,
— “শোনেন” এখানে বসুন
নাওয়াজ বলল না ঠিক আছে আপনার কিছু লাগলে বোলুন।”
ঐশ্বর্য বলল “আপনিও তো ঐ রাতে ঘাটে ছিলেন। একটু বলেন না, দাদু আর হুমায়রা তারা কি সত্যি মারা গেছেন?

নওয়াজ বলল, 
আমি আসলে ঘুরিয়ে পেচিয়ে কিছু বলি না
“আপনার দাদু আর বেঁচে নেই। তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।”

ঐশ্বর্যের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল দুই ফোঁটা জল।
নওয়াজ আরো বলল,
“ঐ রাতে আপনাকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। আপনার মা আপনাকে ঐ অবস্থায় দেখে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলেন।
লাশগুলো উদ্ধার করা হয় তবে আপনার বান্ধবীকে অনেক খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি।
পরদিন সকালে নদীতে পাওয়া যায়... তার লাশ।”

ঐশ্বর্য ফিসফিস করে বলল,
— “আম্মা কোথায় আছেন?”

নওয়াজ চুপ করে রইল।

— “বলেন না কেন? আম্মা ঠিক আছেন তো?”

ঐশ্বর্য এবার কান্না চেপে রাখতে পারল না। আর বলতে লাগলো,
বলুন না আমার ভয় করছে আম্মার কিছু হয়নিতো? দয়া করে চুপ করে থাকবেন না বলুন।

নওয়াজ বলল,
— “আপনার মা যেখানে আছেন, ভালো আছেন তাঁর কিছু হয়নি।
আর আপনাকে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
আপনার বাবা জানলে রেগে যাবেন।”

বলে সে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর, ইউসুফ এসে ঢুকল রুমে। রুমে ঢুকেই বলল,
— “খালা আইছে খালা তুমারে সাহায্য করবো রেডি হইতে, আমরা গেরামে যামু।”

ঐশ্বর্য জিজ্ঞেস করল,
— “ইউসুফ, আম্মা কোথায় রে?”

এতটুকু বলতেই রেহানা এসে হাজির।
— “কিরে ঐশ্বর্য, কেমন আছিস? এখন শরীর ডা কেমন?”
— “খালা, ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?”

ঐশ্বর্য আর তার মার বিষয়ে কথা বলল না, কারণ তার খালা মানসিকভাবে একটু দুর্বল। পরে সে কিনা কি বলে বসে মনটা আরো খারাপ হয়ে যাবে।
রেহানা খালা উত্তরে বলল,
“আমি ভালা আছি, তোর বাপরে কইলাম আর একটা দিন হাসপাতাল রাহো।
হে কই, কাইলকা ঈদের একটা দিন! এই দিন মেয়েডারে হাসপাতালে থাকতে হইবো না।”

ঐশ্বর্য ঈদের কথা ভুলেই গিয়েছিল।
সব কিছু ঘোরের মতো লাগছে। সে জানতে পারল — সে ৬ দিন কোমায় ছিল।

ঐশ্বর্য থ্রিপিস পরে, উপরে হিজাব পরে নিল।
রবি হুইলচেয়ার নিয়ে এল। ঐশ্বর্য তার হাত ধরে বসে পড়ল।
নওয়াজ এসে হুইল চেয়ার ঠেলে এগোতে লাগল।

রবি বললেন,
— “কিরে ঐশ্বর্য, মনমরা হয়ে আছিস যে?”

ঐশ্বর্য বলল,
— “বাবা, আম্মা কোথায়?”

রবি স্বাভাবিক গলায় বললেন,
— “তোর আম্মা তার বাবার বাড়ি গেছে।”

ঐশ্বর্য বিশ্বাসি করতে পারল না যে তার মা তাকে এই অবস্থায় রেখে নানু বাড়ি যাবে।

তারা হাসপাতালের বাইরে এসে দাঁড়াল। গাড়ি করে স্টেশনে যাবে।
রহিম ট্রেনের টিকিট কেটেছে দুপুরের।

এই সময় এসপি আকাশ তার সরকারি জিপ নিয়ে হাজির।

ঐশ্বর্য তাকে দেখে অবাক।
‘আকাশ তো ঐ রাতে ঘাটে ছিল! তাহলে সে কীভাবে বেঁচে গেল?’

রবি গিয়ে আকাশের সঙ্গে কিছু কথা বলে এলেন।

এই ফাঁকে ঐশ্বর্য নওয়াজকে জিজ্ঞেস করল,
— “আচ্ছা, উনিও তো ঐ রাতে কালি ঘাটে ছিলেন। উনি বাঁচলেন কীভাবে?”
ঐশ্বর্য খানিকটা অবাক হলো নওয়াজের দিকে তাকিয়েও সে আকাশের দিকে তাকিয়ে দাত কিরমির কিরমির করছে। 
ঐশ্বর্য আবার জিজ্ঞেস করলো বলেন।
নওয়াজ হকচকিয়ে উঠলো আর বলল,
— “উনি ঘাটে ছিলেন না। আগুন যেখানে ধরেছে, তার কাছেই অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।”

ঐশ্বর্য বিষয়টা সহজভাবে নিল না।

আকাশ বলল,
— “গ্রামে যাচ্ছেন? চলেন, আমার গাড়িতে পৌঁছে দেই।”

রবি বললেন,
— “আমাদের টিকিট কাটা হয়ে গেছে।”

ঐশ্বর্য খেয়াল করল, আকাশ বারবার তার দিকে তাকাচ্ছে।

ঐ দিন ছিল ঈদের আগের দিন, শহরে গাড়ি পাওয়া কঠিন।
তারা স্টেশনে পৌঁছে গেল।

রহিম ভিতর থেকে বের হয়ে বলল বলল,
— “রবি কাকা, অনেক ভিড়। সিড টিকেট পাই নাই। তাই কেবিনের টিকিট কাটছি।”

রবি বললেন,
— “ভালোই করছোস, মেয়েটা ভিড়ের মধ্যে বসতে পারবে না।”

ঐশ্বর্য দেখল, রহিমের মুখে হাসি নেই।
আগে যেকোনো কথায় হাসত, এখন চুপচাপ আর মোনমরা টাইপের হয়ে গেছে।
হয়তো দাদুর মৃত্যুতে অনেক বড় ধাক্কা খেয়েছে।

ঐশ্বর্য নিজেকে দোষারোপ করছে।
— “হয়তো ঐদিন আমার বারাবারির কারণেই এতকিছু হলো! কেন একটা মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে এতজনের প্রাণ গেল!”

ট্রেন ছেড়ে দিল।

ঐশ্বর্য, ইউসুফ আর রেহানা এক পাশে, রবি, রহিম আর নওয়াজ অন্য পাশে বসেছে।
রহিম প্রথমে ঐশ্বর্যের সামনে বসেছিল, পরে বলল,
— “ভাই নওয়াজ, আমি জানালার পাশে বইতে পারি না। তুমি এইহানে বও।”

নওয়াজ ঐশ্বর্যের সামনে বসে পড়ল।

ট্রেন ময়মনসিংহ যেতে তিন ঘণ্টা লাগবে। সবাই ঘুমিয়ে পড়ল।

শুধু জেগে আছে — ঐশ্বর্য আর নওয়াজ।

ঐশ্বর্য ভেতরে ভেতরে নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করছে।
হুমায়রার কথা মনে পড়ছে।
মেয়েটার জীবনের সব আনন্দ যেন শুরুর আগেই থেমে গেল।

নওয়াজ বলল,
— “পানি খাবেন?”

ঐশ্বর্য হকচকিয়ে বলল,
— “জি মানে না লাগবে না। আপনি ঘুমাননি?”

— “না, আমি ঘুমিয়ে পড়লে আপনাকে দেখবে কে?”
ঐশ্বর্য ব্রু কুচকে বলল
— “জি? আপনি কী বললেন?”
নওয়াজ বলল
— “মানে, আপনি যদি কিছু চান বা আপনার যদি কিছু লাগে তাই জেগে আছি ”

ঐশ্বর্য বলল,
— “আচ্ছা, আপনি সবসময় মাথা নিচু করে থাকেন কেন?”

নওয়াজ — “কই না তো! আমি কই কখন মাথা নিচু করলাম?”
ঐশ্বর্য — “আমি সবসময়ই দেখি।”

নওয়াজ — “হ্যাঁ, আপনার সামনে নিচু করেই রাখি। শুধু আপনিই না, যেকোনো মেয়ের সামনে মাথা নিচু করে রাখি। এটা আমার দাদুর শিক্ষা।”

ঐশ্বর্য — “আজকাল ক’জনই বা মেয়েদের সম্মান দেয় আপনার মতো!”

ঐশ্বর্য ভাবল ছেলেটা হয়তো বানিয়ে বলছে।
কিন্তু নওয়াজ বলল,
— “পৃথিবীতে দুটো জিনিস আমি সম্মান করি প্রথম, সৃষ্টিকর্তার বিধান; দ্বিতীয়, নারী।
নারীরা মা হওয়ার ক্ষমতা রাখে। মায়েদের শক্তির সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন।”
ঐশ্বর্য অবাক বলল,
কথা ভালো বলতে পারেন।
ঐশ্বর্য জিজ্ঞেস করল,
— “আপনি কত দূর লেখাপড়া করছেন?”
নওয়াজ মাথে চুলকানোর ভঙ্গিতে বলল
— “আমি মেট্রিক পাশ করেছি।”

ঐশ্বর্য আর প্রশ্ন করল না।
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর সে আবার বলল,
— “আমাকে ঢাকা নেওয়ার কী দরকার ছিল? ময়মনসিংহেই তো ভালো হাসপাতাল আছে!”

নওয়াজ — “আমি জানি না। তবে এখন কথা বলা ঠিক হবে না আপনি বেশি কথা বলেন এবার ঘুমান।”

এই বলে নওয়াজ মুখটা রুমাল দিয়ে ডেকে ঘুরিয়ে পরলো।

ঐশ্বর্য অবাক মনে মনে ভাবলো আমি বেশি কথা বলি! আরেকটা কথা ভেবেই অবাক — “ছেলেটা আমার দিকে তাকায়ও না! অথচ মা বলতো, আমাকে যে একবার দেখে, সে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়!”

সে আনমনে বলল,
— “আজকাল এমন মানুষ খুব বিরল ছেলেটা মেয়েদের সম্মান দিতে জানে!”

তারপর হুঁশে ফিরে আসলো,
— “এইসব কি ভাবছি আমি!”
ঐশ্বর্যর তখন তার
মায়ের কথা মনে পড়ে গেল।
— “মা কি সত্যিই নানুর বাড়ি গেছে?”

ঐশ্বর্যের মন ভারি হয়ে আসছে।

ট্রেন থেমে গেল – ময়মনসিংহ জংশনে।
সেখান থেকে সবাই গাড়ি করে ব্রহ্মপুত্র নদীর ঘাটে এসে চন্দনপুর যাওয়ার লঞ্চে উঠল।

লঞ্চে বসে ঐশ্বর্য ভাবছে — “আমি বাড়ি ফিরেই নানু বাসায় চলে যাবো।

বাবাকে দেখল, একা একা রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।
রহিমকে বলল,
— “ভাই, একটু বাবার কাছে পৌঁছে দাও।”
রহিম ঐশ্বর্যকে রবির কাছে পৌছে দিলো
ঐশ্বর্য বাবাকে জিজ্ঞেস করল,
— “বাবা, কি ভাবছো?”

রবি বললেন,
— হ্যাঁ না মানে ভাবছিলাম অনেক পুরোনো কিছু কথা। তুমি তখন অনেক ছোট একটা ঘটনায় তোমার মায়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।
সবাই খারাপ ব্যবহার করতো তার সাথে, আমিও করতাম।
আমরা ভুল বুঝেছিলাম তাকে।
কষ্ট দিয়েছি।
শেষে জানতে পারি — সে নির্দোষ।
কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিলো সে আজ নিজেকে খুব কঠর আর জেদি বানিয়ে নিয়েছে। সমাজের মানুষের কটু কথা শুনতে শুনতে আজ সে নিজেকে এক শক্তিশালী অট্টালিকা গরে তুলেছে। আমার ভুলের কারনে 
আজও হয়তো সে আমাকে ক্ষমা করেনি।”

ঐশ্বর্য আর জিজ্ঞেস করলো না কি কয়েছিলো কারণ সে কিছুটা আন্দাজ লাগিয়ে নিয়েছে কি হয়েছিলো। সে বুঝতে পারে, বাবা সত্যি অনুতপ্ত। আর বলে
— “তোমার কি দাদুর জন্য মন খারাপ হয় না?”

রবি — “যুদ্ধের সময় অনেক মানুষকে চখের সামনে মরতে দেখেছি তাই অভ্যস্ত। কিন্তু জন্মদাতা পিতা তো কষ্ট তো হয়েছেই।তবে মৃত্যু সবার জন্য।”

এই সময় রেহানা কাছে আসতে চাইল।
নওয়াজ বলল,
— “এতোদিন পর দুজনে মন খুলে কথা বলছে — বলতে দিন।”
রেহানা বুঝতে পারলো বিষয়টি। 
লঞ্চ এগোতে লাগল।আসেপাশে এতো সুন্দর মনোমুগ্ধকর প্রকৃতি সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলছে। সামনে ভেসে উঠল চন্দনপুর গ্রামের একটা অংশ।

ঐশ্বর্য ভাবল — “আর একটু পরেই তো কালি ঘাটের কিছু অংশ দেখা যাবে।”

সে লঞ্চের বাঁ দিকে একাই হাত দিয়ে চাকা ঘুরিয়ে এগিয়ে এসে তাকাল। দেখল — নদীতে লাল কাপড়ে চিহ্নিত একটা স্থান।

রবি পেছনে এসে তার কাধে হাত রেখে বলল,
— “অনেক আগেই এই ঘাটটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। আমরাই কখনো মানুষ চলাচল করতে দেখিনি।”

ঐশ্বর্য বুঝল — বহু বছর আগেই এ ঘাট পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।

আকাশ ঘন অন্ধকার হয়ে আসছে মনে হচ্ছে তীব্র বৃষ্টি নামবে।

লঞ্চ চন্দনপুর ঘাটে এসে ঘেশলো।

ঐশ্বর্য ঘাটের দিকে তাকায়, আর ঠিক তখনই সে আরেকটি হৃৎপিন্ড কাপানো দৃষ্য দেখতে পেলো ...
.
.
ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
পর্ব ১০ – শিগগির আসছে পাশে থাকবেন। 

Comments

    Please login to post comment. Login