Posts

গল্প

দেখা না দিলে বন্ধু কথা কৈওনা 🥰

August 6, 2025

farddin on fire

116
View

**দেখা না দিলে বন্ধু, কথা কৈও না**
মোঃ ফারদিন মন্ডল বোরহান

---

বর্ষার বিকেল। আকাশ জুড়ে কালো মেঘ, মাঝেমাঝে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে। শহরের ব্যস্ততা যেন আজ একটু কম। চারদিক কেমন নিস্তব্ধ। এক চায়ের দোকানের বেঞ্চিতে বসে আছে দুই পুরনো বন্ধু—রিফাত আর সোহান।

দুজনেই কলেজের বন্ধু। আগে প্রতিদিন দেখা হতো, একসাথে ক্লাস, আড্ডা, গল্প, ঝগড়া—সবই ছিল। এখন সময় বদলেছে। কাজ, পড়াশোনা, পরিবার—সবই ব্যস্ত করে রেখেছে। কিন্তু আজ হঠাৎ সোহান ফোন করল,
– "দোস্ত, দেখা করবি?"
রিফাত একটু অবাক হলেও রাজি হয়ে গেল। কারণ, সোহানের কণ্ঠে যেন একটা অচেনা ক্লান্তি ছিল।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রিফাত বলল,
– "কি রে? তুই তো সাধারণত এভাবে ডেকে আনে না। সব ঠিক আছে তো?"

সোহান চুপচাপ। চোখ নামিয়ে নিচে তাকিয়ে থাকল। কিছুক্ষণ পর বলল,
– "রিফাত, তোকে একটা কথা বলার ছিল অনেকদিন ধরে, কিন্তু সাহস পাইনি।"

রিফাত একটু সোজা হয়ে বসল।
– "কি কথা বল?"

সোহান গভীর নিঃশ্বাস নিল,
– "তুই কি জানিস, আমি তোর প্রতি একটু অন্যরকম অনুভব করতাম? মানে, বন্ধুত্বের বাইরেও?"

রিফাত থমকে গেল। কয়েক সেকেন্ড যেন সময় থেমে গেল। চারপাশের আওয়াজ, বৃষ্টি, গন্ধ—সব মিশে এক অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি করল।

– "তুই কি বললি?" রিফাতের কণ্ঠে মৃদু বিস্ময়।

– "হ্যাঁ। আমি তোর প্রতি... ভালোবাসা অনুভব করতাম, সেই কলেজ সময় থেকেই। তুই বুঝিসনি, আমি কখনও বলিনি। ভাবছিলাম, সময় গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু গেল না। বরং বড় হয়েও মনটা আটকে আছে তোকে ঘিরেই।"

রিফাত কিছু বলল না। চোখ মেলে তাকাল সোহানের দিকে। ছেলেটার চোখে জল। সে চিরকাল হাসি-ঠাট্টার আড়ালে লুকিয়ে রাখত সব অনুভূতি। রিফাত ভাবছিল, এ কি সেই সোহান, যার সাথে সে লাস্ট বেঞ্চে বসে হাসতে হাসতে সময় কাটাত?

– "তুই রাগ করলি?"

– "না রে। রাগ করব কেন? তুই তো একটা সত্যি কথা বললি।"

– "তাহলে কথা থামলি কেন?"

– "কারণ... আমি কনফিউজড। আমি তোকে বন্ধু ভেবেই দেখেছি এতদিন। এখন তোর এই অনুভূতির জায়গায় আমি কোথায় দাঁড়াব, বুঝতে পারছি না।"

সোহান হেসে ফেলল।
– "আমি জানি। তোকে বাধ্য করব না কিছুই। শুধু এতটুকু বলব, যদি কখনও আমার সাথে দেখা না করতে চাস, তাও ঠিক আছে। কিন্তু... দয়া করে কথা বলিস না, রিফাত। আমার মনটা ভেঙে যাবে তোর স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারে। আমি হয়তো তখন আর ঠিক থাকতে পারব না।"

রিফাত চুপ করে বসে থাকল। সেই মেঘলা বিকেল যেন আরও ভারি হয়ে উঠল।

---

তারপর কয়েক মাস কেটে যায়।

সোহান আর কোনোদিন ফোন করে না, মেসেজও না। রিফাত প্রথম দিকে চিন্তা করত, খোঁজ নিত সোশ্যাল মিডিয়াতে, কিন্তু কোথাও সোহানের কোনো আপডেট নেই।

রিফাত বুঝতে পারে, সে সোহানকে মিস করছে। সেই হাসি, সেই ঠাট্টা, সেই গভীর চোখের চাহনি—সবই মনে পড়ে।
একদিন সে সাহস করে পুরনো কলেজে যায়, সেই বেঞ্চে গিয়ে বসে, যেখানে তারা বসত।

একটা চিঠি বের করে পকেট থেকে। লিখেছে নিজেই। সোহানের জন্য।

---

**চিঠির অংশবিশেষ:**

*“সোহান,
তুই বলেছিলি দেখা না দিলে, কথা কইও না।
আমি কথা রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। তুই যে আমার জীবনের এমন একটা জায়গায় ঢুকে গেছিস, যেখান থেকে তোকে বের করা যায় না।
আমি জানি না, আমি ভালোবাসি কিনা তোকে সেইভাবে। কিন্তু আমি জানি, আমি তোকে হারাতে চাই না।
তুই বলেছিলি, কিছু বলতে না পারলে তোর মন ভেঙে যাবে। কিন্তু আমি বলি—চুপ করে থাকলেও মন ভাঙে রে।
তুই কোথায় আছিস এখন? আমি তোকে খুঁজছি।
দয়া করে যদি কখনও এই চিঠি তোর হাতে পড়ে, একটা দেখা দে।
তারপর তুই না চাইলেও আমি চুপ করে যাব। কিন্তু অন্তত শেষবার একটা কথা বলার সুযোগ দে।*”

---

চিঠি সে রেখে দেয় বেঞ্চের নিচে, যেখানে তারা একদিন একসাথে বসেছিল।

---

### কয়েক সপ্তাহ পর...

রিফাত তার বাসার দরজায় শব্দ পায়।
খুলে দেখে একজন ডেলিভারি ম্যান একটি খাম দিয়ে গেল। ওপরে লেখা:

**"রিফাতের জন্য — দেখা দিলাম, এবার কথা বলা যাবে। - সোহান"**

রিফাত খামের ভেতরে একটি ছোট নোট পায়,
*"আমি দূরে গিয়েছিলাম, নিজেকে গুছিয়ে নিতে। তোকে ছাড়া কিছুই গুছায়নি। তোকে মিস করেছি প্রতিদিন।
তুই যদি এখনও আমার বন্ধু হতে চাস, তবে চলি আবার সেই চায়ের দোকানে।
আর যদি কিছু বেশি হবার ইচ্ছা থাকে... তবে আজ আমি এক কাপ চা কিনে বসে আছি তোর জন্য।"*

---

রিফাত আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজের চোখে চোখ রাখে।
সে জানে না সে প্রেমে পড়েছে কিনা।
কিন্তু সে এটুকু জানে—
আজ সে যাবে।
দেখা হবে।
এবং এবার, কথা হবে।

---

**শেষ**

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 3 months ago

    দেখা হবার পর কি হলো?