রাত প্রায় ১১টা বাজে। ঢাকা শহরের কমলাপুর স্টেশন তখন ফাঁকা হতে শুরু করেছে। শীতের কুয়াশা নেমে গেছে চারপাশে। প্ল্যাটফর্মের আলো গুলো যেন আধো-আলোতে কেঁপে কেঁপে জ্বলছে।
রফিক নামের একজন লোক শেষ ট্রেন ধরতে এসেছে। হাতে ছোট্ট একটা পুরোনো স্যুটকেস। ভেতরে কি আছে কেউ জানে না। তার চোখে ক্লান্তি, ঠোঁটে অদ্ভুত এক অর্ধেক হাসি।
ট্রেনের হুইসেল বেজে উঠলো, আর তখনই রফিক লক্ষ্য করলো—গাড়ির শেষ কামরায় এক নারী বসে আছে। সাদা শাড়ি, ভিজে চুল, মুখে শান্ত অথচ ভৌতিক এক হাসি। চারপাশে আর কেউ নেই।
রফিক দ্বিধায় পড়ল। তবুও সে উঠল ওই কামরাতেই।
নারীটি ধীরে ধীরে বলল—
"তুমি ঠিক সময়ে এসেছো… আমি অপেক্ষা করছিলাম।"
রফিক অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল—
"আপনি আমাকে চেনেন?"
নারীটি উত্তর দিল না, শুধু স্যুটকেসটির দিকে তাকিয়ে রইলো।
ট্রেন চলতে শুরু করল, জানালার বাইরে শহরের আলো মিলিয়ে গেল কুয়াশায়।
হঠাৎ ট্রেন থেমে গেল মাঝপথে। রফিক চারদিকে তাকিয়ে দেখলো—
স্টেশন নেই, লোক নেই, আলো নেই…
শুধু কুয়াশার ভেতরে অসংখ্য ছায়া এগিয়ে আসছে, যেন তারা এই কামরার ভেতর ঢুকতে চায়।
নারীটি ধীরে ধীরে বলল—
"স্যুটকেসটা খুলে দাও… সময় শেষ হয়ে আসছে।"
রফিক কাঁপা হাতে স্যুটকেস খুললো—
ভেতরে শুধু একটি পুরোনো পকেটঘড়ি, যার কাঁটা ১১টায় আটকে আছে।
নারীটি হাসলো—
"এখন তুমি আমার সঙ্গে চলবে… শেষ ট্রেনের সময় শেষ হয়ে গেছে।"
ট্রেন আবার চলতে লাগল, কিন্তু এবার কোথায় যাচ্ছে তা রফিক জানলো না…
কারণ, পরদিন সকালবেলায় কমলাপুর স্টেশনে পাওয়া গেল একটি পুরোনো স্যুটকেস—
ভেতরে কেবল একটি পকেটঘড়ি, আর একটি ছোট্ট কাগজে লেখা—
"শেষ ট্রেন মিস করো না…"