মানুষ দিবস
কাজী ফাল্গুনী ঈশিতা
নারী দিবস নিয়ে চারিদিকে শোরগোল। আমি দেখি, আর হাসি । নারী দিবস না হয়ে মানুষ দিবস পালিত হতে পারে না বিশ্বে?
আজ সকালে দৈনিক প্রথম আলোর পাতায় একটা খবর পড়ে গায়ে কাঁটা দিল। এগারো বছরের নিষ্পাপ মিষ্টি একটি মেয়ের ছবি দেখে খবরটা পড়ার উৎসাহ পেয়েছিলাম। মেয়েটি তার আপন বাবার লোভের বলি। মেয়েটিকে হত্যা করার বিনিময়ে হত্যাকারী তার বাবাকে ৩০ লাখ টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। টাকার লোভে মেয়েকে হত্যার অনুমতি দিয়েছিলেন বাবা।
খবরটা পড়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। আহারে আধফোটা কলি, কি দোষ ছিল ওর? সে মুহূর্তে চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল বুকের মাঝে পরম যত্নে গেঁথে রাখা কয়েকটি মুখ। একজন আমার ভাইঝি, দুজন ভাইপো, একজন ভাগ্নি আর একটা ছোট্ট ভাগ্নে। সন্তান তুল্য এই ছোট ছোট মানুষগুলো পৃথিবীর দুই প্রান্ত থেকে আগলে রাখে আমায়। মনে হল, এই অকালে ঝরে যাওয়া মেয়েটিকে আগলে রাখার কেউ কি ছিল না?
বাংলাদেশের গণ পরিবহনে ওঠা ও যে কোন নারীর জন্য যুদ্ধ। কিছু মানুষ এই যুদ্ধের জন্য হয়ত নারীর পোশাক কে দায়ী করবেন। ভাইরে, আজকাল তো বোরখা পরেও নারীর রেহাই নাই। কিছু অকাল কুষ্মাণ্ডের কাছে তো নারী মানেই ভোগ্যপণ্য! কেন এমন করেন রে ভাই? কোন নারী শরীর অশোভন ভাবে ছোঁওয়ার আগে নিজের বোন বা স্ত্রীর মুখটা মনে পরে না কেন?
প্রায়ই পত্রিকার পাতায় চোখে পড়ে, দু তিন বছরের ছোট্ট শিশুর ধর্ষিত হবার ঘটনা। এ সব পড়লে ধর্ষণকারী ওই পুরুষটিকে পায়ের জুতো খুলে পেটাতে ইচ্ছা করে আমার। কেন? ওই শিশুটির নিষ্পাপ হাসি আপনার মন কে শান্তি দেয় না? তুলতুলে হাতের আদর টের পান না আপনি? তবে কেন ওই শিশুটির শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশের প্রতি কু নজর আপনার? কত খানি মানসিক বিকারগ্রস্ত হলে ওই ছোট্ট শরীর আপনার মনে কাম জাগাতে পারে?
আজও আমাদের দেশে যৌতুকের জন্য স্ত্রীর শরীরে আগুন লাগিয়ে দেন স্বামী। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে অ্যাসিডে ঝলসে যায় মেয়েদের মুখ। কেন এমন হয়?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাঝে মধ্যে এমন একটা ভিডিও চোখে পড়ে, যেখানে মেয়েদের মাসের বিশেষ কয়েকটা দিন নিয়ে মারাত্মক ব্যাঙ্গ করা হয়। দেখে আমার মনে হয়, যে পুরুষ ওই ভিডিওটি বানিয়েছেন, তাকে গিয়ে বলে আসি ঃ ও ভাইজান গো, আপনার জন্মদাত্রী প্রতিমাসে এই সময় টা পার করেছিলেন ঠিকমত, যে জন্য আপনি পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন। এ কথাটা ভুলে যাবেন না যেন!
শিক্ষার শুরু আসলে পরিবার থেকে। মায়েদের বলছি, আপনার ঘরে থাকা ফুটফুটে পুত্রসন্তানটিকে নারীদের সম্মান করতে শেখান। সে শুধু আপনার সন্তান নয়, কারও ভাই, বন্ধু, কারও ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী। আপনার ঘরে থাকা কিশোরী মেয়েটিকে ছোট বা বড় ভাইয়ের কিছু কিছু দায়িত্ব নিতে শেখান। পুত্র হোক বা কন্যা, তাকে সুস্থ বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে শেখান বিপরীত লিঙ্গের সাথে। দেখান, ছোট ভাই বা বোনকে বুকে টেনে নিলে কতখানি মানসিক শান্তি মেলে। সুন্দর সম্পর্ক রাখুন জীবনসঙ্গীর সাথে। আপনাকে দেখেই শিখবে আপনার সন্তান।
অপরদিকে বাবাদের বলবো, রান্নাঘর বা অন্য যে কোন দিকে স্ত্রীকে সাহায্য করুন। নিজেদের একান্ত কিছু সময় রাখুন। সব কাজ ই কিন্তু কাজ। আলাদা ছেলেদের কাজ বা মেয়েদের কাজ বলতে কিছু নেই। আজ আপনাকে দেখেই আপনার মেয়ে জানবে ভবিষ্যতে পুরুষের কাছে কেমন আচরণ আশা করবে সে। আপনি বাবা, নিজের মেয়ের ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না দয়া করে। বাবা মেয়ের সম্পর্কটি একজন নারীর জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে।
আসুন না, কেবল নারী বা পুরুষ না হয়ে, মানুষ হয়ে বাঁচতে শিখি।
10th March 2020