পোস্টস

প্রবন্ধ

এনার্জি কী

৩০ মে ২০২৪

Farseem Mannan Mohammedy

 

এনার্জি কী বা কেমন? মাটিতে পড়ে থাকা একটি ছোট কমলাকে (প্রায় ১০০ গ্রাম) তুলে টেবিলে (প্রায় ১ মিটার উচ্চতার) উঠিয়ে রাখতে প্রায় ১ জুল কাজ করা হয়। জুল শক্তির একটি একক। ১ সেকেন্ডে ১ জুল কাজ করে যেতে পারার ক্ষমতাকে ১ ওয়াট বলে। ওয়াট ক্ষমতার একক। ক্ষমতা একটি সামর্থ্য যা শক্তি খরচ বা অর্জনের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। মুখের কথায় আমরা ‘ক্ষমতার’ কথাই বেশি বলি, কিন্তু সচরাচর বোঝাই ‘শক্তির’ কথা। যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সামর্থ্যের উল্লেখে আমরা প্রায়ই মেগাওয়াটের কথা বলি, কিন্তু বোঝাই শক্তির সামর্থ্য। ওয়াট ক্ষমতা বোঝায় কিন্তু জুল বা ক্যালরি বা ওয়াট-ঘন্টা হল শক্তি মাপার একক। এটা মাথায় রাখা দরকার। একটা মজার এবং দরকারি সারণি এখানে দিচ্ছি- 
 

সারণি-১

 

ফুড ক্যালরি

(» ১ ওয়াট-ঘন্টা)

জুল

টিএনটি

শব্দের বেগে ধাবিত বুলেট (১০০০ ফুট/সেকেন্ড)

০.০১

৪০

০.০১৫

গাড়ির ব্যাটারি

০.০৩

১২৫

০.০৫

কম্পিউটার ব্যাটারি

০.১

৪০০

০.১৫

পেন্সিল ব্যাটারি (এলকালি)

০.১৫

৬০০

০.২৩

টিএনটি

০.৬৫

২৭০০

চকলেট চিপ বিস্কুট

২১০০০

কয়লা

২৭০০০

১০

মাখন

২৯০০০

১১

পেট্রোল

১০

৪২০০০

১৫

প্রাকৃতিক গ্যাস

১৩

৫৪০০০

২০

হাইড্রোজেন

২৬

১১০০০০

৪০

ইউরেনিয়াম-২৩৫

২ কোটি

৮২ বিলিয়ন

৩ কোটি

 

 

এখানে দেখা যায়, খাবার বিস্কুট বা মাখন টিএনটি’র মত বিস্ফোরক পদার্থের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি শক্তি ধরে। অথচ তাহলে বিস্ফোরণের জন্য আমরা টিএনটি ব্যবহার করি কেন? মাখন বা বিস্কুট কি পেটের ভেতরে ধুন্ধুমার বিস্ফোরণ ঘটাবে? না, তা হয়না। কারণ টিএনটি অত্যন্ত দ্রুত তার শক্তি ত্যাগ করতে পারে, অন্যেরা অত দ্রুত পারেনা, তাদের রূপান্তরের দক্ষতা কম। এখানেই শক্তি-ঘনত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য। একটি ধারণ-ক্ষমতা, অন্যটি তা বিলি করার একটি উপায়। বিস্ফোরণ কখন ঘটে? যখন অনেক সঞ্চিত শক্তি হঠাৎ উচ্চ তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়ে দ্রুত মুক্তি পায় এবং সেটা খুব ছোট স্থানে আবদ্ধ থাকে তখন একটা বিস্ফোরণন্মুখ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট গ্যাস খুব উত্তপ্ত থাকে এবং উচ্চ চাপযুক্ত থাকে। এর ফলে এটি ছড়িয়ে পড়ে। বিস্ফোরণের ফলে সঞ্চিত শক্তি তাপ ও গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।   
 

এনার্জি বিষয়ক আলোচনায় সবসময়েই ‘শক্তি’, ‘তাপ’ ও ‘ক্ষমতার’ কথা ঘুরেফিরে আসে। এখান থেকে বোঝা যায় এনার্জি অথবা শক্তি এমন একটা ব্যাপার যা কাজ করার সামর্থ্য বোঝায়।  এর সাথে আবার ‘তাপ’ সম্পর্কিত। ঐতিহাসিকভাবে থার্মোডায়নামিকসের বিশদ চর্চা থেকে আমরা জানি, শক্তি এমন কিছু যাকে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করা যায়। তাপ হল এমন কিছু যা বস্তুর তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা আমরা থার্মোমিটার দিয়ে মাপতে পারি। আণবিক দৃষ্টিতে অতিক্ষুদ্র অণুর সতত কম্পন থেকে যে শক্তি উদ্ভূত হয় সেটাই তাপশক্তি। এবার আমরা উপরের সারণিটিকে লক্ষ করি। সারণিটি বোঝার জন্য এনার্জির পরিমাপগুলি সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা দরকার। সারণিতে ১ গ্রাম পরিমাণ ভরের বিভিন্ন জিনিসের শক্তিমান দেওয়া আছে। এক গ্রাম কিন্তু বেশ ছোট একটা মাপঃ এক ঘনসেন্টিমিটার পানির ওজন এক গ্রাম। এক ঘনসেন্টিমিটার খুব ছোট একটা আয়তনঃ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের নখের সাইজ বা ক্ষেত্রফল এক বর্গসেন্টিমিটার, এর উপরে আরেক সেন্টিমিটার কল্পনা করে নিলে যে ছোট খোপটি পাওয়া যায় সেটিই এক ঘনসেন্টিমিটার বা ১ সি.সি.। এক ক্যালরিও একটা ছোট মাপ – ইংরেজিতে দুরকম ক্যালরি আছেঃ ছোট ‘সি’ দিয়ে লেখা calorie, এবং বড় ‘সি’ দিয়ে লেখা Calorie।  ১ গ্রাম পানির তাপমাত্রা ১ সেন্টিগ্রেড বাড়াতে যে তাপ লাগে সেটাই ছোট-ক্যালরি; ১ কিলোগ্রাম পানির তাপ ১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড বাড়াতে যে তাপ লাগে তা বড়-ক্যালরি বা ফুড-ক্যালরি। বড়-ক্যালরি খাদ্যের সাথে সম্পর্কিত, কেননা খাবারের অন্তর্গত শক্তির মাপ বোঝাতে আমরা বড়-ক্যালরি ব্যবহার করিঃ ১ বড়-ক্যালরি (ফুড ক্যালরি) = ১ কিলো-ক্যালরি =  ১০০০ ছোট-ক্যালরি। জুলও একটা ছোট পরিমাপ। ১ ছোট-ক্যালরি = ৪ জুল (প্রায়)।  বিদ্যুতের যে মাপ ধরে আমরা বিল পরিশোধ করি সেটা কিলোওয়াট-ঘন্টা বা সংক্ষেপে কিঃওঃঘঃ। এর অর্থ -  এক ঘন্টা ধরে ১০০০ ওয়াট ক্ষমতা বজায় রাখা হল, এর জন্য যে-পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন সেটা এক কিলোওয়াট-ঘন্টা। বিদ্যুতের এক ইউনিটের মূল্য বাসাবাড়ির জন্য ৪.৬৩ টাকা (প্রথম ধাপে, পরে ধাপে ধাপে তা বেড়ে যায়[1])। ১ কিলোওয়াট-ঘন্টা = ১০০০ ওয়াট-ঘন্টা। হিসাবের সুবিধার জন্য আমরা ধরে নিতে পারিঃ ১ বড়-ক্যালরি (ফুড-ক্যালরি) = ১ ওয়াট-ঘন্টা। ফলে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ = ১ কিঃওঃঘঃ = ১০০০ ফুড-ক্যালরি। জুলের মাপে এদের হিসাবটা এরকমঃ ১ ফুড-ক্যালরি = ৪২০০ জুল; ১ ওয়াট-ঘন্টা = ৩৬০০ জুল; ১ ইউনিট বিদ্যুৎ = ১ কিঃওঃঘঃ = ৩৬ লক্ষ জুল। 
 

আবারো উপরের সারণিতে ফেরত যাওয়া যাক। একটি চকো-বিস্কুট কী করে টিএনটি’র চাইতে বেশি শক্তি ধারণ করে? টিএনটি এমন এক রাসায়নিক উপাদান যা অত্যন্ত দ্রুত তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে, এক গ্রাম টিএনটি’র পুরোটাই শক্তিতে রূপান্তরিত হতে এক সেকেন্ডের মিলিয়ন ভাগ সময় নেয়। অথচ চকো-বিস্কুট বা যা-কিছুই আমরা খাই না কেন, হজমে সময় নেয়। পেটের ভেতর হজমি রসের সাথে তাকে মিশতে হয়, সেই দহনে অক্সিজেন লাগে, ইত্যাদি। টিএনটি’র দহনের জন্য যা দরকার তা তার ভেতরেই থাকে, আলাদা কিছু লাগে না। এভাবে ‘শক্তির হার’ ধারণাটি চলে আসে, যেটা মূলত ক্ষমতা বা পাওয়ার। এটা স্পষ্ট যে টিএনটি’র ক্ষমতা বেশি, কিন্তু মাখনের শক্তি-সঞ্চয় বেশি থাকলেও ক্ষমতা কম। 
 

তেলের সক্ষমতা আরও বেশি – বিস্কুট, কয়লা এমনকি টিএনটি’র চেয়েও বেশি।  সন্দেহ হবার কথা নয়, কালো মানিক বলে কথা! সারা দুনিয়া জুড়েই তেলের জয়জয়কার। বাতাসের উপস্থিতিতে তেল পুড়ে শক্তি উৎপাদন করে। গাড়ির এঞ্জিনে এভাবে শক্তি তৈরি হয় – একটি অন্তর্দাহী বা আইসি এঞ্জিনের সিলিন্ডারে বাতাসের সাথে পেট্রোলের মিশ্রণ ঘটিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এই বিস্ফোরণের শক্তিতে সিলিন্ডারের পিস্টনটি ওঠানামা শুরু করে এবং গাড়ি চলে। প্রতিটি গাড়ির এঞ্জিনেই, চালু থাকলে, প্রতিনিয়ত এই মিনি-এক্সপ্লোশন ঘটতেই থাকে। ‘মাফলার’  বলে একটা যন্ত্র আছে যা এই শব্দকে ‘গিলে’ ফেলে। একে খুলে রাখলে, শক্তি কিছুটা বেশি পাওয়া গেলেও ভটভট শব্দে কানে তালা লেগে যাবার জোগাড় হয়। গ্রাম-প্রতি এই শক্তি-ঘনত্বই তেলের জনপ্রিয়তার মূল উৎস। 
 

শক্তি-উৎসগুলির মধ্যে ব্যাটারির শক্তি-ঘনত্ব এত কম সেটা চোখে পড়ে। কেননা বহনযোগ্য শক্তি-উৎস হিসেবে ব্যাটারি আমাদের দৈনন্দিন সংগী। ব্যাটারির মূল শক্তি-উৎস রাসায়নিক বিক্রিয়া। একই সঙ্গে একটা গাড়ির ব্যাটারি পেট্রোলের চেয়ে মাত্র ৩৪০-ভাগ শক্তি দেয়। এজন্য গাড়ির প্রধান জ্বালানি-উৎস এখনো পর্যন্ত পেট্রোল। এ-প্রসঙ্গে হাইব্রিড গাড়ির কথা বলতে হয়। ঢাকার রাস্তায় এখন অনেক হাইব্রিড গাড়ি চলতে দেখা যায় এবং সর্বোত্তম অবস্থায় বা অপ্টিমাম কন্ডিশনে এরা অতি-উত্তম মাইলেজ দিয়ে থাকে। যেমন আমার টয়োটা সিএইচআর-২০১৯ গাড়িটি মহাসড়কে প্রতি লিটারে ২৫ কিলোমিটারের বেশি এবং মিরপুর-বুয়েট রুটে কখনো কখনো ২২ কিলোমিটার দেখায়। এখানে যান্ত্রিক এঞ্জিন একটি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি প্যাককে চার্জ করে। এই ব্যাটারি থেকে ডিসি ভোল্টেজকে এসি’তে কনভার্ট করে তিন-ফেজ মোটর চালানো হয়, যা গাড়িকে চালায়। এর ফলে গাড়ির এঞ্জিন সর্বদা একই হারে চলে এবং এর ফলে এর দক্ষতা দুই/তিন গুণ বেড়ে যায়। আবার গাড়ি যখন ‘ডিসিলারেট’ বা মন্দন করে , অর্থাৎ পাওয়ার ছাড়াই ফ্রি চলে, তখন গাড়ির চাকার ঘূর্ণনশক্তি থেকে বিদ্যুৎ বানিয়ে ব্যাটারিকে চার্জ করা হয়। সাধারণ গাড়িতে ঐ সময় হয় ব্রেক কষা হয় নতুবা এই গতিশক্তি স্রেফ তাপে পরিণত হয়।  হাইব্রিড গাড়ির সমস্যা হল ব্যাটারি প্যাকের রক্ষণাবেক্ষণঃ প্যাকের জন্য আলাদা কুল্যান্ট প্রয়োজন, তার জন্য ফিল্টার আছে – এগুলোর মেইনটেন্যান্স খরচ আছে। তবে ঢাকার মত শহরে রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত হলে কী হবে বলা মুশকিল। হাইব্রিড গাড়ির ব্যাটারি-প্যাকের নির্মাতারা ১ লক্ষ মাইল বা তারও বেশি দূরত্বে গাড়ি নির্বিঘ্নে চলার কথা বলে থাকেন। ফলে গাড়ি ৮-১০ বছর চলবে তার গ্যারান্টি আছে। এরপর বদলাতে হবে, তবে সেটা খুব সস্তা হবে না। ইনভার্টারের গ্যারান্টি ১০-১৫ বছরের। তবে ব্যাটারি প্যাক নিয়ে খুব জোর গবেষণা চলছে, ফলে ঐ সমস্যাগুলি দূর হয়ে যেতে পারে অদূর ভবিষ্যতেই। 
 

নিচের সারণিতে বিভিন্ন মাপের এনার্জির বাস্তব উদাহরণ দেওয়া হল। এর ফলে এনার্জি ব্যবহারের স্কেল সম্পর্কে একটা সাধারণ ধারণা থাকবে- 
 

সারণি-২ 

শক্তির মাপ

তুলনীয়

বাস্তব উদাহরণ

১ ওয়াট

১ জুল প্রতি সেকেন্ডে

মুঠোফোনের ফ্ল্যাশলাইট প্রায় ২.৫ ওয়াট

১০০ ওয়াট

 

বাজারের বাল্ব; বসে থাকা মানুষ

১ হর্সপাওয়ার

প্রায় ১ কিলোওয়াট (৭৪৬ ওয়াট)

ঘোড়ার শক্তি; সিঁড়ি বেয়ে ছুটে ওঠা মানুষের শক্তি

১ কিলোওয়াট

 

ছোট গ্রামের বাড়ি; ১ বর্গমিটারে আপতিত সৌরশক্তি

১ মেগাওয়াট

১ মিলিয়ন ওয়াট

ছোট শহরের শক্তি-চাহিদা; 

৪৫ মেগা ওয়াট

 

৭৪৭ প্লেন

১ গিগাওয়াট

১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ওয়াট

 বড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র; রূপপুরের একটি ইউনিট ১২০০ মেগাওয়াট

৩৭০০ মেগাওয়াট

 

ঢাকা শহরের চাহিদা (ডিপিডিসি + ডেসকো) 

১৬৪৭৭ মেগাওয়াট

 

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উৎপাদন, এপ্রিল ২০২৪

২৭ গিগাওয়াট

 

বাংলাদেশের সামগ্রিক স্থাপিত বিদ্যুৎ ক্ষমতা

৪০০ গিগাওয়াট

 

যুক্তরাষ্ট্রের গড় বিদ্যুৎ চাহিদা

২ টেরাওয়াট

২ বিলিয়ন ওয়াট

পৃথিবীর গড় বিদ্যুৎ ক্ষমতা


 

          এসব উদাহরণের সাহায্যে আমরা ভালভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে পারব, এনার্জি, শক্তি বা জ্বালানির মূল বিষয়গুলি কী।  কোনো কিছু ‘করতে’ গেলে এনার্জির প্রয়োজন, এনার্জির উৎস জ্বালানি। শক্তি ও জ্বালানি এখানে দ্বৈত সত্তা, কিন্তু ইংরেজিতে এই দ্বৈততা নেই। সেখানে ‘এনার্জি’ আর ‘ফুয়েল’ আলাদা তাৎপর্য বহন করে। কিন্তু দৈনন্দিন বাংলায় বাক্যের বা ব্যবহারের কনটেক্সট থেকে শক্তি ও জ্বালানির কোনটি বোঝানো হচ্ছে সেটা বুঝে নিতে হয়।  প্রয়াত বিজ্ঞান-লেখক ও প্রকৌশল-বিদ্যার অধ্যাপক ডঃ জহুরুল হক তাঁর ‘মানুষের শক্তি’ বইয়ে এটা নিয়ে মজা করেছিলেন, 

“আমরা বাংলা ভাষায় কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করে থাকি, যার মধ্যে ‘শক্তি’ শব্দটা আছে। কিন্তু তার মধ্যে সত্যি সত্যি শক্তির অংশ কতটুকু থাকে? ... কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের চেয়ে বেশি। তার অর্থ এই নয় যে, কুকুর ঘ্রাণ নিতে মানুষের চেয়ে বেশি শক্তি ক্ষয় করে থাকে। আবার আমরা একথাও বলি যে কুকুরের শ্রবণশক্তি মানুষের চেয়ে বেশি। তার অর্থ হল এই যে, কুকুর মানুষের চেয়ে অনেক কম আওয়াজ শুনতে পায় ... এদের সঙ্গে আমরা যে ধরনের শক্তি সম্বন্ধে আলোচনা করেছি তার কোনো সম্পর্ক নেই। আশা করি এ সম্বন্ধে এবারে ভাল করে ভেবে দেখবে, কোনটা সত্যিকার ‘শক্তি’ আর আমাদের ভাষার নিয়মে কোনটা ‘সত্যিকার’ শক্তি নয়।” 
 

ভাষার এই ‘মজার ব্যবহার’ ভাষার ক্ষেত্রে দ্বৈততা আনলেও উপরের আলোচনা এবং সারণিগুলি পর্যালোচনা করে দেখলে পার্থিব প্রয়োজনে বা উপযোগের দিক থেকে এনার্জি এবং জ্বালানির অবিচ্ছেদ্যতাও আমরা বুঝতে পারি।  বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান তাঁর বিখ্যাত ‘লেকচারস অন ফিজিকস’ বইতে এনার্জির সংজ্ঞায় লিখেছেন, 

“[শক্তির সংরক্ষণশীলতার নীতি] বলে যে, এমন একটি রাশি আছে যাকে এনার্জি বলা হয়, প্রকৃতির বহুবিধ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গিয়েও তা অপরিবর্তিত থাকে। এটা বেশ একটা বিমূর্ত আইডিয়া, কারণ এটি একটি গাণিতিক নীতি। এটা বলে যে এমন একটি সংখ্যাগত রাশি আছে যা বদলায় না, যাই ঘটুক না কেন। এটা কোনও প্রক্রিয়ার বর্ণনাও না আবার কোনো ধরাবাধা জিনিসও না। এটা এমন এক বিচিত্র তথ্য যে আমরা এমন এক ধরনের রাশি বা সংখ্যা গণনা করতে পারি, এবং তারপর যা-কিছু প্রকৃতিতে ঘটুক না কেন, আবার যখন তা পুনরায় গণনা করি, আমরা আগের সংখ্যাটাই ফিরে পাই। ... আমরা যখন এনার্জির হিসাব করি, তখন এর কিছু অংশ সিস্টেম থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, আবার কিছু ঢুকতেও পারে, কিন্তু হিসাবের সময়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে কী বেরুলো আর কী ঢুকল। দ্বিতীয়ত, শক্তির বহু রকমভেদ রয়েছে এবং এদের জন্য আলাদা আলাদা সূত্র আছে।  যেমন মহাকর্ষীয় শক্তি, বৈদ্যুতিক শক্তি, চৌম্বক শক্তি, স্থিতিস্থাপক শক্তি, রাসায়নিক শক্তি, তাপশক্তি, গতিশক্তি, বিকিরণ শক্তি, নিউক্লীয় শক্তি, ভর শক্তি।  রূপ যাই হউক না কেন, যখন ফরমুলা অনুযায়ী এদের সকলের কন্ট্রিবিউশন যোগ করা হবে, দেখা যাবে ইন আর আউট বাদে এর কোনো পরিবর্তন নাই। তাহলে ফিজিকসে এনার্জি বলতে আসলে কী বুঝায় সেটা আমরা স্পষ্ট জানি না।  এনার্জি এমন কিছু নয় যে তা নির্দিষ্ট আকারের ছোট ছোট ফোঁটায় আসে। এটা এমন এক বিমূর্ত বিষয় যে এর সূত্রগুলির বা এর প্রক্রিয়াজাত কোনো ব্যাখ্যা নেই আমাদের কাছে নেই।” 


[1] আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের মূল্য এখন ৪.৬৩টাকা এবং ৬০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারী গ্রাহকের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ১৪.৬১ টাকা। পড়ুন বিবিসি বাংলা অনলাইন, “বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম এভাবে বাড়ছে কেন?”, ৮ মে ২০২৪।