শিক্ষিত ঃ সত্যি ই কি?
কাজী ফাল্গুনী ঈশিতা
কিছুদিন আগে একটা ভিডিও দেখে অবাক হলাম। কোন প্রতিষ্ঠানের পদার্থ বিজ্ঞানের একজন শিক্ষক অনলাইন ক্লাস নিচ্ছেন, (বা ধৈর্য ধরে নিতে চেষ্টা করছেন ) আর কিছু ছাত্র বিভিন্ন ধরণের শব্দ, গালিগালাজ ইত্যাদি করে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। শিক্ষক ভদ্রলোক থাকতে না পেরে শেষে স্টুপিড বলে গালি দিলেন সেই ছাত্রদের, তবু শেষ রক্ষা হল না। ওই ছাত্ররা তাদের কর্মকাণ্ড চালাতেই থাকলো!
আর এক জায়গায় কোন এক বোনের লেখায় পড়লাম, অনলাইন ক্লাস নিচ্ছিলেন কোন একজন শিক্ষিকা। তাঁর চুলায় রান্না, তাই ক্লাসের ফাঁকে তাঁকে সেখানেও সময় দিতে হচ্ছিল। হঠাৎ তাঁর আড়াই বছরের শিশু কন্যাটি মনিটরের সামনে চলে আসে। একাধিক ছাত্র তখন বলে ওঠে, “বাবু, তুমি তোমার জামাটা খুলে ফেলো তো!” পড়তে পড়তে সত্যি কান্না পাচ্ছিল, মনে মনে বললাম ঃ “হায় সর্বনাশ!”
অনেক জায়গাতেই শিক্ষকদের বেতন এখন অর্ধেক। এই বেতন নিয়েও অনেক ছাত্র ছাত্রী টাল বাহানা করতে থাকেন। দয়া করে ভুলে যাবেন না, আপনাদের দেওয়া বেতনের উপরেই অনেক শিক্ষকের পরিবার চলে। অনেক সময় ছাত্র ছাত্রীকে বেতনে ছাড় দিলেও তারা বেতন সম্পূর্ণ না দিয়ে পালিয়ে যান। এটা কেন করেন আপনারা?
বেতন অর্ধেক হলেও এখন কিন্তু এই অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষকদের খরচ হয়তো কিছুটা হলেও বেড়েছে। আর তা ছাড়া এক ঘণ্টার একটা ক্লাসের জন্য ন্যূনতম তিরিশ মিনিটের প্রস্তুতি প্রয়োজন। সব কিছু সামলে, প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাস নিতে আসা ও কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দেখেছি, লিফটের ভেতর ধাক্কাধাক্কিতে ছাত্রের হাতে থাকা চা পড়ে গেলো শিক্ষকের গায়ে। কলমের কালি ঝেড়ে দিলো ছাত্র, বোর্ডে লিখতে থাকা শিক্ষকের শার্ট এ। কোথাও কোন “দুঃখিত” এর বালাই নেই কারো।
আবার শিক্ষিকাকে ছাত্রী মনে করে তাঁর প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও করতে শুনেছি কিছু ছাত্র ছাত্রীকে। কিন্তু কেন? প্রশ্ন জাগে মনে, এ কেমন শিক্ষা? যে শিক্ষা মানবতা বোধ, বা শিষ্টাচারকেই ঠিকমতো বোঝাতে অক্ষম? মানুষের প্রথম বিদ্যালয় তো তার পরিবার। সেই পরিবার থেকেই কেউ অন্য একজন মানুষকে সম্মান করতে শেখে। তবে কি পারিবারিক পরিবেশ এর জন্য দায়ী? কি জানি ভাই, বুঝতে আসলেই পারি না।
বড় তিন আপুকেই জীবনের কোন না কোন সময়ে শিক্ষকতা করতে দেখেছি। ভাইয়া ও ছাত্র পড়াতেন। আব্বুকে আজও অনেক মানুষ স্যার সম্বোধন করে, অন্য কাজের ফাঁকে উনি অনেকের শিক্ষা গুরু ছিলেন বলে।
সব দেখতে দেখতে এক্কেবারে ছোট্ট বয়সেই শিক্ষকতার প্রতি গভীর অনুরাগ জন্মেছিল মনে। সেই ২০০২ সাল থেকে আজ অবধি ছোট, বড়, মাঝারি... সব বয়সকে পড়াতে পড়াতে এখন আমার কাছের বন্ধুদের অনেকেই আমার কোন এক সময়ের ছাত্র/ ছাত্রী।
নিজের খুশিতেই যোগাযোগ রাখি আমার শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে। ছোট বয়সে যাদের কাছে পড়েছি, যারা আমায় বেড়ে উঠতে দেখেছেন। আজ প্রাপ্তবয়স্কও হয়েও আমি তাঁদের কারো কাছে মা, কারো আম্মু, আবার কারো মাই চাইল্ড। ওনাদের সাথে আমার সম্পর্কটা কেবল শ্রদ্ধার নয়, ভালোবাসার। সত্যি ভালোবাসি ওনাদের আমি, দারুণ লাগে ওই স্নেহাদ্র আচরণ।
বর্তমান প্রজন্মকে বলছি, শিক্ষক শিক্ষিকারা আপনাদের শত্রু নন। এ ধরণের কটূক্তি বা বিরক্তিকর আচরণ তাঁদের জন্য সত্যিই অসম্মানজনক। দয়া করে এ ধরণের আচরণ থেকে বিরত থাকুন। আপনাদের দেখেই শিখবে ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীরা। যদি সত্যিকার শিক্ষায় শিক্ষিত হতে না পারেন, কাগুজে বিদ্যার বাহাদুরি দেখাবেন না।
3rd July, 2020