Posts

গল্প

শুকানো গোলাপ পঞ্চম পর্ব

August 12, 2025

Mst Mukta

196
View

শুকনো গোলাপ – পঞ্চম পর্ব

সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়েই তানিশা হঠাৎ একটি গোলাপ আর চিঠি পেলো।
সে অবাক হয়ে গেলো—আমি তো ঘরেই  ছিলাম , তবুও টের পেলাম না কেন...?

চিঠির ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করলো—

"এই যে গোলাপ রাণী,"
তুমি কেমন আছো…?
অবশেষে তোমার পরীক্ষা শেষ হলো।
তার সাথে শেষ হলো আমার না ঘুমানোর রাতগুলো,
তোমার প্রতিক্ষায় কাটানো প্রতিটি প্রহর।
কি যে ব্যথা অনুভব হয়, তা শুধু আমার মনই জানে।

চোখ কিন্তু তোমাকে রোজ দেখেছে,
শুধু ছুঁয়ে দেখা হয়নি তোমার নরম তুলতুলে হাত।
তুমি রোজ আমার সাথে দুষ্টুমি করেছো—পাশে থেকেও ছিলে দূরে।

তোমাকে কল্পনা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তাম,
তাই হয়তো প্রতি রাতে স্বপ্নে এসে দেখা দিতে।

পরীক্ষার সময় আমি নিজে তোমাকে দেখতে যেতাম—
এতো পাষাণ হতে পারিনি এখনো।
পরীক্ষার হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
তুমিও হয়তো নিজের অজান্তেই আমাকে দেখেছো,
কিন্তু জানো না আমিই তোমার  সেই অদেখা ‘গোলাপ কুমার’।

তুমি এত চিন্তিত ছিলে কেন…?
পরীক্ষা ভালো হয়নি বুঝি?
না হলেও কিছু আসে যায় না—
তুমি আমার স্বপ্নের রাণী।
আমি তো আছি তোমাকে আগলে রাখতে।

তবুও তোমার ইচ্ছে তুমি পড়াশোনা করবে—
বেশ, পড়ো তাহলে।

এখন সরাসরি তোমাকে দেখতে পারি না,
তবে স্বপ্নে দেখা হয় রোজ।

আজ তোমাকে ফাঁকি দিয়েই গোলাপ দিয়ে গেলাম।
দেখলে তো—আমাকে ধরতে পারলে না।

ভালো থেকো।
খুব শীঘ্রই আমাদের দেখা হবে।"*

আগের চিঠিতেও সে লিখেছিলো—“তাড়াতাড়ি দেখা হবে”।
এবারও লিখলো—“খুব শীঘ্রই দেখা হবে”।

কে এই ছেলে? কিছুই মাথায় আসছে না।
আমি কি একটা চিঠি লিখে উত্তর দেবো?
নাহ, থাক… আগে রেজাল্ট বের হোক।
এতদিন দেখা হয়নি, আর কিছুদিন অপেক্ষা করি।

আজ তানিশা ও তার পরিবার বেশ ব্যস্ত।
পরীক্ষা শেষ, তাই সবাই ঘুরতে যাবে নদীতে নৌকা ভ্রমণে।

সব গুছিয়ে বের হওয়ার আগে সৈকত এসে বললো—
“আপু, এক্সট্রা ব্যাগ আছে? আমার ব্যাগে জায়গা নেই।”
বলে সে বিছানায় রাখা গোলাপ দেখে হাসলো—
“তুমি ফুল নিয়ে নৌকা ভ্রমণে যাবে নাকি? হা হা!”
তবু ভালো যে চিঠিটা চোখে পড়েনি।

সকাল ৮টায় সবাই বের হলো।
৯টার মধ্যে নৌকায় উঠতে হবে, না হলে দেরি হয়ে যাবে।
নদীতে ছোট বড় আরো অনেক নৌকা ভেসে চলেছে। 
নৌকায় উঠে সবাই উপভোগ করছে।
খোলা হাওয়ায় নিজেকে মেলে ধরে মনোরম দৃশ্য দেখছে তানিশা।
বাতাসে তার চুল উড়ে এসে মুখে পড়ছে।
সৈকত ছবি তুলতে ব্যস্ত।
মকবুল চৌধুরী ও রাবেয়া চৌধুরী গল্প করছেন।

নদীতে ছোট ছোট ঢেউ এসে নৌকার সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে নদীর বুকে।
রাবেয়া চৌধুরী বললেন—
“তানিশা, সাবধানে বসে থাকিস, পড়ে যাবি কিন্তু।”
মা তো বলবেই—মায়েরা সবসময় একটু বেশিই চিন্তা করে।

দুপুর হয়ে এলো।
মকবুল চৌধুরী নৌকা চালককে বললেন তীরে নোঙর করতে,
যেন দুপুরের খাবারের বিরতি নেওয়া যায়।

চালক নৌকাটা ঘোরাচ্ছিলো, হঠাৎ টার্নে ভারসাম্য হারিয়ে
চোখের পলকেই পানিতে পড়ে গেলো তানিশা!

মকবুল চৌধুরী উঠে দাঁড়ানোর আগেই পাশের একটি ছোট নৌকা থেকে
কে যেন ঝাপ দিলো পানিতে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সে তানিশাকে তুলে আনলো।
মকবুল চৌধুরী অবাক—এ তো সেই ছেলে,
যাকে দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন!
সৈকতও চিনলো—যদিও নাম জানে না,
কিন্তু অজ্ঞান অবস্থায় দেখেছিলো।

তানিশা অজ্ঞান।
মাহিম বললো—“হয়তো ভয় পেয়েছে, চিন্তা করবেন না, ঠিক হয়ে যাবে।”
তারপর কিছু বলার আগেই সে নৌকা থেকে নেমে ছোট নৌকায় চলে গেলো।
মকবুল চৌধুরী নৌকা চালককে  বাড়ির পথে এগোতে বললেন।

বাড়ি ফিরে তানিশা জ্ঞান ফিরে পেলো।
চোখ মেলে নিজেকে নিজের ঘরের বিছানায় আবিষ্কার করলো। 
তারপর ভাবতে লাগলো... 
এতোক্ষণ যা ঘটেছে সেটা কি স্বপ্ন ছিলো নাকি সে সত্যিই নৌকা ভ্রমণে গিয়েছিলো... 
মা পাশেই বসে ছিলেন । 
কেমন আছিস " মা "
এখন বুঝতে পারলো এটা স্বপ্ন ছিল না  সে নৌকা ভ্রমণে গিয়েছিলো।

সব শুনে বুঝে গেলো—যে তাকে পানি থেকে তুলেছিলো, সে আর কেউ নয়.. 
তার অদেখা  গোলাপ কুমার—মাহিম।

সে মনে মনে বললো—
“আমাকে পানির নিচ থেকে তুলতে গিয়ে সে আমাকে ছুঁয়েছে… ইস, কি লজ্জা!
তাহলে কি চিঠিতে লেখা ‘খুব শীঘ্রই দেখা হবে’ এই অর্থে ছিলো?
এত কাছে থেকেও দেখলাম না…”

মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন—
সে কিভাবে জানলো আমরা নৌকা ভ্রমণে যাবো?
হঠাৎ মনে পড়লো—সৈকত তো ছবি তুলছিলো,
ছবিতে হয়তো ধরা পড়েছে সে।

কিন্তু এখনই খোঁজা যাবে না।
আগে সব স্বাভাবিক হোক, তারপর দেখা হবে—
কোন গোলাপ কুমার আমার জন্য নদীতে ঝাপ দিয়েছিলো…

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Mst Mukta 3 months ago

    গল্পের এই পর্যায়ে এসে আপনারা কি হলে খুশী হবেন..? সুন্দর সমাপ্তি, নাকি বিরহের চাঁদরে ঢেকে যাওয়া এক অসমাপ্ত প্রেম..?অবশ্যই জানাবেন।

  • Mst Mukta 3 months ago

    আমার প্রিয় পাঠক পাঠিকা, আপনারা মতামত দিন,

  • Mst Mukta 3 months ago

    তানিশা আগামী পর্বে মুখোমুখি হবে মাহিমের।

  • Kazi Eshita 3 months ago

    তানিশা বুঝবে কবে আর?