Posts

গল্প

চাঁদপুরের সেই ভূতুড়ে স্কুল: যেখানে বন্ধ হয়নি বাচ্চাদের কণ্ঠ

August 12, 2025

liya lili

Translated by Liya

73
View

চাঁদপুরের এক ধুয়ে ধুয়ে যাওয়া গ্রামে, যেখানে ঘন জঙ্গলের ছায়া পড়ে পথকে অন্ধকারে মোড়া করে, দাঁড়িয়ে আছে একটি পরিত্যক্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দিনের বেলা এই স্কুলের বারান্দায় ধুলো জমে, আর জানালা দোলা দিয়ে বাতাসে ঝাঁকুনি খায়। কিন্তু রাতে? রাতে সেই স্কুল যেনো জীবন্ত হয়ে ওঠে, অদ্ভুত আওয়াজ আর কণ্ঠস্বর দিয়ে গ্রামবাসীদের নিদ্রাহরণ করে।

গ্রামের লোকজন নিশ্চিত যে, রাতের অন্ধকারে স্কুলের ক্লাসরুম থেকে বাচ্চাদের কাঁদার, হেসে ওঠার, আর মাঝে মাঝে গানের আওয়াজ শোনা যায়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেখানে তো কোনো ছাত্র নেই!

একশো বছরেরও বেশি আগের সেই রাতে ঘটে গিয়েছিল এক ভয়াবহ দুর্ঘটনা। স্কুলের এক ক্লাসরুমে অগ্নিকাণ্ডের ফলে বহু শিশু আর শিক্ষক জীবন হারিয়েছিলেন। সেই রাতের আগুন যেনো শুধুমাত্র কাঠ-পাথর পুড়িয়ে নিভে যায়নি, বরং অনেক নির্দোষ প্রাণের আত্মা সেই স্কুলের ভিতরে বন্দি হয়ে রয়ে গেছে। তারা মুক্তি পায়নি, তাই এখনো তাদের আর্তনাদ ছড়ায় বাতাসে।

গ্রামবাসীর কথায়, ওই দুর্ঘটনার পর স্কুলটির চারপাশে এক অদৃশ্য অভিশাপ নেমে আসে। কেউ বলেছে, “স্কুলের নিচের মাটিতে হয়তো কোনো অভিশপ্ত বস্তু চাপা পড়ে আছে, আর ওই অভিশাপ রাতের অন্ধকারে প্রাণ ফিরে পায়।”

সেই অভিশপ্ত শক্তি মানুষের মনে ভয় জাগায়, আর বাচ্চাদের কণ্ঠস্বরের আকারে নিজেকে প্রকাশ করে। অনেকেই রাতের বেলা স্কুলের পাশ দিয়ে গেলে হঠাৎ ঠান্ডা বাতাসে শিহরিত হয়, এমনকি কেউ কেউ অদৃশ্য হাতছানি পাওয়ার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছে।

এক রাতে গ্রামের কিছু সাহসী যুবক ওই স্কুলে গিয়েছিল। তারা দেখেছিল ক্লাসরুমে মৃদু আলো জ্বলছে, আর দূর থেকে শিশুরা যেনো গানের সুর তুলছে। একে একে দরজায় কড়াকড়ি দেয়া হলেও ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেয়নি। হঠাৎ গাঢ় অন্ধকারে তারা অনুভব করে কোনো অদৃশ্য শক্তি তাদের পিছু নিলো। সেই অভিজ্ঞতা তাদের জীবনের জন্য এক স্মরণীয় আতঙ্ক হয়ে রয়ে যায়।

অনেকে মনে করে, এই ঘটনা শুধু আত্মার বন্দিত্ব নয়, বরং মনের এক অদ্ভুত খেলা। রাতের নিস্তব্ধতা আর একাকীত্ব মানুষের মনে ভয় ও বিভ্রান্তি তৈরি করে, আর ছোট ছোট শব্দ তাদের কণ্ঠ বলে মনে হয়। কিন্তু এতো দূর গিয়ে এই স্কুল থেকে আসা আওয়াজ কেউ মিথ্যা বলে না—কারণ সেগুলো এত বাস্তব, এত কাছের যে তা অস্বীকার করা যায় না।

আজও চাঁদপুরের লোকজন ঐ স্কুলের পাশে রাত কাটাতে সাহস পায় না। কারণ তারা জানে, সেখানে বন্ধ হয়নি বাচ্চাদের কণ্ঠ—সেই কণ্ঠ যে আজো রাতের অন্ধকারে ঘুরছে, ঘুম ছিনিয়ে নিচ্ছে, আর নিঃশ্বাস থমকে দিচ্ছে।

তুমি কি কখনো সাহস করে ওই স্কুলের পাশে রাত কাটাবে? তোমার সাহস থাকলে, হয়তো তুমি শুনতে পাবে সেই কণ্ঠস্বর… যেখানে বন্ধ হয়নি বাচ্চাদের কণ্ঠ।

Comments

    Please login to post comment. Login