আকাশটা কালো হয়ে আসছে, মনে হয় কথাও খুব বৃষ্টি হচ্ছে। যার রেশ মেঘের শহরের উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকার নামিয়ে ঝুম বৃষ্টি নামলো।
মেঘ বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোবাসে। কিন্তু কোনো একটা কারণের জন্য তার আর এটা পছন্দ নয়। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সে একটু দূরের একটা ছাউনী যে আশ্রয় নেয়।
সে অন্যমনস্ক হয়ে ভাবতে থাকে, বৃষ্টি ভেজা এক বিকেলের কথা। তখন মেঘ সবে অনার্সে পড়ে। কলেজ শেষ করে মেঘ দাঁড়িয়ে আছে তার বাসের আশায়। কিন্তু মুষলধারে বৃষ্টির কারণে বাসটা আসতে দেরি হয়। মেঘ খেয়াল করলো বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তার পাশে একটা সুদর্শন ছেলে এসে দাঁড়ালো। সে বড়জোর মেঘের থেকে বছর পাঁচেক বড়ো।
মেঘ খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কারো সাথে মিশতে চাই না। একা থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু রূপে, গুণে কোনো অংশে কম না।
দুজন দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মূলত প্রথম দেখায় তারা একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করে।
বর্তমানে মল্লার ভালো জব করে আর মেঘ সে মাস্টার্স পড়ছে পাশাপাশি পরিবারের হাল ধরতে কিছু টিউশন করায়। এবং কিছু ইন্টারভিউ দিচ্ছে।
বর্তমান যুগে বাবার টাকা না থাকলে ভালো চাকরি পাওয়া খুব কঠিন কাজ। মেঘের অবস্থা ও ঠিক তেমন।
এখন মেঘ আর মল্লারের পথ ভিন্ন। এমন কি দুজনের মধ্যে যোগাযোগ পর্যন্ত নেই। বর্তমানে মল্লার বিদেশে থাকে আর তার একটা প্রেমিকা আছে।
মেঘ বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের হাল ধরতে কিছু টিউশন করায়। ঠিক তখনই মল্লার মেঘের কাছে ভালোবাসার প্রস্তাব নিয়ে আসে। কিন্তু না চাইতেও মেঘ মল্লারের ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করে। কারণ তখন তার কাছে তার বৃদ্ধা মা আর বারো বছরের ভাইয়ের দায়িত্বটা সবচেয়ে মনে হয়েছিল।
মল্লারের ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করায় মল্লার তা মেনে নিতে পারেনি। তার ঠিক কিছুদিন পরেই মল্লার বিদেশে চলে যায়। কিন্তু মেঘের প্রত্যাখ্যান মল্লারের মনে কাঁটার মতো বিঁধে ছিল। আজও মল্লারের সেই দিনের কথা মনে হলে তার মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলে।
অন্যদিকে মেঘ যে মনে মনে মল্লারকে ভালোবেসেছিল কিন্তু কখনও প্রকাশ করতে পারেনি। সে এখনো মল্লারকে ভালোবাসে।
কিন্তু সে জানে না মল্লার এখন কোথায়। যখন বৃষ্টি হয় মেঘের তখন মল্লারের কথা মনে পড়ে। কারণ তাদের প্রথম দেখা এই বৃষ্টিতেই হয়েছিল আর সে এই বৃষ্টিতেই মল্লারকে প্রত্যাখ্যান করেছিলো। তখনই মেঘ মল্লারকে শেষবার দেখেছিলো।
তাই যখন বৃষ্টি হয় মেঘ মনে মনে ভাবে,"মল্লারের কি মনে আছে তার কথা?"
সেতো মল্লারকে এখনো ভুলতে পারেনি।