Posts

গল্প

"কন্টকসজ্জা "-তৃতীয় পর্ব

August 13, 2025

Rezwana Roji

205
View

এমন সময় পিছন থেকে নিহার কাঁধে কে যেন হাত রাখল নিহা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে হাসিমুখে আতিক দাঁড়িয়ে ,

নিহা অশ্রু সজল চোখ নিয়ে তাকিয়ে শুধু বলল এতক্ষণে তোমার আসার সময় হল আর ফোনটা রিসিভ করছিলে না কেন ?

তুমি কি জানো আমার কি সব চিন্তা হচ্ছিল? 

আতিকের হাতের স্পর্শ এবার নিহার ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে গেল, আতিক নিহার ঠোঁট দুটো হালকা চাপ দিয়ে বলতে লাগলো চুপ , একদম চুপ ; আমাকে কিছু বলার সুযোগটা তো দাও !

ফোনটা রিসিভ করলে কি আর এমন মুখটা দেখতে পেতাম? আমার জন্য কতটা দুশ্চিন্তা হয় তোমার।

 এবার চোখ বন্ধ কর তারপর বলছি নীহার চোখে এক হাত  দিয়ে চেপে ধরে বলল এবার হাতটা দাও।

হাত বাড়িয়ে দিল নিহা।

নীহার হাতে একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি হাতে দিয়ে বলল -এই খারাপ ছেলেটার দায়িত্ব সারা জীবনের জন্য নেবে না নিহা?

 বিয়ে করবে আমায় ?আমি তো খারাপ ছেলে তাই দায়িত্বটা যে তোমাকেই নিতে হবে, আর তুমি যদি আমায় সত্যিই ভালোবাসো তাহলে আমায় ফিরিয়ে দেবে না নিশ্চয়ই! 

নিহা কোন কিছু না ভেবেই আতিককে হ্যাঁ বলে দিল। যে মেয়েটা কাল অবধি আতিককে শুধু বন্ধুই ভেবেছিল ,,,,সেই নিহা এক পলকেই আতিককে ভালোবেসে ফেলল। 

আর আতিকও জানে যে নিহাকে একান্ত কাছে পেতে হলে এমনটাই করতে হবে। 

আতিক একটা মুচকি হাসি দিলো কিন্তু নিহা তো দেখতে পেল না কারণ নীহার তো চোখ দুটো বন্ধ।

 আর মনের খবর নিতে হলে অবশ্যই মনের চোখ খোলা থাকা দরকার কিন্তু মনের চোখ আল্লাহ প্রদত্ত নয় ,মানুষের মন অবধি আরেকটা মানুষ সহজে পৌঁছাতে পারেনা, সেটা সময় সাপেক্ষ। তাইতো নিহা চোখ বন্ধ করেই হ্যাঁ বলে দিল, 

আতিক আবার বলল সকাল থেকে কি করলাম শুনবে না?আজ সকাল থেকে আমি আমাদের স্বপ্নের নিড় খুঁজতে গিয়েছিলাম, খুঁজেও পেয়েছি ‌।

আর হ্যাঁ বিকালবেলা শাড়িটা পড়ে লেকের পারে এসো রাহাত খালিদ আর রিনিও আসবে ওখানে ,

আমরা আজই বিয়ে করব এবার খুশি তো? আমায় এবার বিশ্বাস হলো তো যে তোমায় কতখানি ভালবাসি? বিকেল ঠিক চারটার দিকে আসবে কিন্তু।

কি আসবে তো ?

নিহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো 

আতিক এর চোখে মুখে কি যে আনন্দ  ,বাজিতে জেতার আর নিহাকে একান্ত কাছে পাবার আতিকের মনে শুধু নিহাকে কাছে পাবার লোভ।

 নিহা তো আর জানে না ,আতিকের মনের কথা ও শুধু উপরের খুশিটাই দেখল খুশিতে নিহা আতিকে জড়িয়ে ধরে বলল সত্যি কেউ কাউকে এত ভালবাসতেপারে ?

আমার জানা ছিল না!

আতিক নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিল আর মনে মনে বলল: সবই জানতে পারবে কয়েকটা দিন পর,,,,,,

বিকেল চারটার দিকে সেই শাড়িটা পড়ে সেজেগুজে আয়নায় দেখছে নিহা নিজেকে লাল শাড়িটা পড়ে একদম নতুন বউয়ের মত লাগছে তাকে। লাল শাড়ির মতোই রঙিন সুতোই কতই না স্বপ্ন গুনছে নিহার মন ।চোখ জুড়ে কতই না রঙ্গিন স্বপ্ন ।

এমন সময় রেনু বলে উঠলো কিরে এত সাজগোজ কেন ?কোথায় যাবি আজ? 

রেনু ওর রুমমেট। 

আজ আমার এক বন্ধুর জন্মদিন সেখানেই যাচ্ছি আজ ওর বাসাতেই থাকবো।

বলেই বেরিয়ে পড়ল নিহা, আজ ওর ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। সময় মত সবাই ওখানে উপস্থিত হলো ওদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কাজ সম্পন্ন হল।

নিহা মহা খুশি, সে তো জানেই না যে এটা শুধু একটা দলিল মাত্র নিহাকে একান্ত কাছে পাবার।

যাই হোক নতুন বউকে সবাই মিলে আতিক এর ভাড়া বাসায় নিয়ে এলো,

বাসাটা পরিপাটি করে সাজানো প্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে।

বাসাটা এক রুমের হলেও বাসাটা থেকে চোখ ফেরানো দায়, সুন্দর একটা ডাইনিং সুন্দর একটা বেলকনি নিহার যেন স্বপ্নের সংসার!

নিহা যেন খুশিতে আত্মহারা,

সবাই নিহাকে রেখে চলে গেল। 

কিছুক্ষণ পরে আতিকের ফোনে একটা কল এলো আতিক নিহাকে বলল তুমি থাকো আমি একটু আসছি, বলে বেরিয়ে গেল আতিক।

আতিক চলে যাবার পর নিহা বসে বসে স্বপ্নের একটা সংসার রচনা করছে ।

এদিকে নিহা যেমন স্বপ্নজাল রচনা করছে অপরদিকে আতিক সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে বাজিতে জেতার পার্টি করছে ঘরে নতুন বউ রেখে।

 পার্টি শেষে নিহার জন্য খাবার নিয়ে রাত প্রায় বারোটা নাগাদ ফিরলো সে।

বেচারি নিহা অপেক্ষা করতে করতে কাতর হয়ে পড়েছে অশ্রু সজল চোখ দুটো তার স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে ।নিহা মাথা নিচু করে আতিককে বলল এত দেরি করলে যে? 

আতিক খুব নরম সুরে বলল হসপিটালে এক বন্ধুর মা ভীষণ অসুস্থ সেখানেই ছিলাম এতক্ষন। সরি,,,,, কিছু মনে করো না,

যাই হোক বাদ দাও এসব কথা চলো উঠে পড়ো তোমাকে খাইয়ে দেই।

 নিহা বলল তুমি খাবে না ?

-না আমি খাব না রাহাত জোর করে আমায় খাইয়ে দিয়েছে তোমায় আমি এবার নিজ হাতে খাওয়াবো ।

আতিক এবার নিহাকে নিজের হাতে যত্ন করে খাইয়ে দিচ্ছে ,

কি সূক্ষ্ম অভিনয়!

খুব ভালো মানুষ হয়ে গিয়েছে সে,কারন কিছুদিন তো ভালোবাসা দেখাতেই হবে।

 না হলে একটা মেয়েকে একান্ত কাছে পাওয়া যাবে না ,আর ভালোবাসা যতটা গভীর হবে নিহাকে কষ্ট দেওয়া ততটাই সহজ হবে ।

হঠাৎ অন্যমনস্ক দেখে নিহা বলল কি হয়েছে তোমার?

- কিছু না তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে। এই বলে এক দৌড়ে ডাইনিং এ গেল আতিক তারপর হাতে অনেকগুলো ফুল নিয়ে এলো সারা ঘর যেন ফুলের গন্ধে ভরে গেল।

 আধো আলো আর আধো ছায়ায় রচিত হলো স্বপ্নময় ভুবন দুজনার সান্নিধ্যে যেন দুটো প্রেমিক হৃদয় এক হয়ে গেল।

 হৃদয় দুটো আজ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হল।

কখন যে ভোর হয়ে গেছে কেউ বুঝতে পারেনি, নিহা এবার ফ্রেশ হয়ে সোজা কিচেনে ঢুকে গেল নতুন গৃহিণী সে,এক কাপ চা নিয়ে এলো সে আতিক এর জন্য,সকালবেলা  বউয়ের হাতের গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চায়ের মজাই আলাদা। কিন্তু আতিকের কি এসব ভালো লাগছে, হয়তোবা লাগছে নতুন নতুন সবকিছুই ভালো লাগে। 

এভাবে হাসি আনন্দে কাটছিল দিনগুলি।  কিন্তু নেহার আর পড়াশোনায় মন নেই ।

নিহা একদিন ক্লাসে যেত তো দুই দিন ক্লাসে যেত না, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আতিকের ফ্ল্যাটে যেত। নিহার যখন খুশি তখনই আসতো। নিহা প্রচন্ড ছেলেমানুষি করতো আতিকের সাথে ,

কখনো কখনো সকালবেলা নাস্তা তৈরি করে এনে আতিকের ঘুম ভাঙাতো, ঘুম থেকে উঠতে না চাইলে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ছিটিয়ে দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতো ,

কখনো দুপুরবেলা এসে আতিককে জোর করে গোসল করে দিত। কারণ নিহা জানতো এই শীতে আতিক গোসল করতে খুব আলসেমি করে ।

এভাবেই কাটছিল দিনগুলি কখন যে চারটে মাস কেটে গেল কেউই বুঝতে পারিনি।

নিহা তো পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে পাক্কা গৃহিণী হয়েছে,সে তো মহা খুশি পুতুল খেলার সংসার নিয়ে।

কিন্তু আতিক এসব ছেলে মানুষই আর সহ্য করতে পারছিল না। ওর কাছে এসব ন্যাকামি মনে হচ্ছে, আস্তে আস্তে আতিকের ব্যবহার খারাপ হতে লাগলো ,এখন আতিকের স্বভাবগুলো প্রকাশ পাচ্ছে।

 আতিকের কি আর এসব ভালো লাগে?

 ওর ভালো লাগে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পার্টি করতে। ওর এসব আদর স্নেহ ভালো লাগে না।

মাঝে মাঝে আতিকের মনে হয় সবকিছু ভুলে নিহাকে আপন করে নেবে, কিন্তু না তখন ওই সেই দিনের অপমানের কথাটা মনে পড়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারে না সে নিহাকে ।

আজকাল প্রায় কথাতেই আতিক রেগে যায় প্রায় দিনই ওকে বাসায় পাইনা নিহা‌ দুজনের মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে।

যা নিহার একটু আন্দাজ করতে পারছে।

একদিন দুপুরবেলা দুজনে বসে আছে কিন্তু আতিককে কেমন জানি অন্যমনস্ক লাগছে সে শুধু ফোন নিয়ে ব্যস্ত, কেমন উদাস হয়ে আছে ।

-নিহা তখন বলে উঠলো জানো আতিক কখনো কখনো সবকিছু কেমন জানি অনিশ্চিত লাগে, আমাদের প্রেম কি সত্যি? 

-আতিক কোন কথা বলছে না,,,

 -আবার নিহা বলল আমি কোন কল্পিত মানুষের সাথে কথা বলছি না তো? এবারও কোন উত্তর নেই , 

প্রেম যদি সত্যিই হয় তাহলে আজকাল এত ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? 

-আতিক এবার খুব রেগে গিয়ে বলল আমি জানিনা ,আর আমার এসব ন্যাকামি ভালো লাগেনা।বসে বসে তোমার কথা শুনলে হবে না ,বলে এক ঝটকায় নিহাকে সরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল আতিক। 

এক শুক্রবারের কথা ছুটির দিন আতিক তো রুমে সারারাত বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করে এসে শান্তি মত ঘুমোচ্ছিল।

 শুক্রবার এর দিন হওয়ায় নিহা খুব সকাল সকাল আতিক এর জন্য খাবার নিয়ে চলে এল।এসেই আতিককে জাগানোর চেষ্টা করল। 

-আতিক এর মাথায় যেন রক্ত উঠে গেল,সে এবার ভীষণ রেগে গেল। রাগের মাথায় বলে বসলো-তুমি আর আমার কাছে আসবে না,রোজ রোজ এসব বিরক্ত ভালো লাগে না,

আজ থেকে তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই ,আর হ্যাঁ যাবার আগে আমার ঘরের চাবিটা আমাকে দিয়ে যাবে আমি একটু শান্তিতে থাকতে চাই ,,

এটা আমার ঘর এখানে অন্য কারোর যাওয়া আসা আমার ভালো লাগছে না 

-তোমার হঠাৎ কি হলো আতিক কেন এমন করছো? আমাকে একেবারেই আসতে বারণ করছো?তুমি তো নিজের থেকেই আমার কাছে এসেছিলে ,বিয়ে করলে আমায় ,

আজ তুমিই আমায় দূরে ঠেলে দিচ্ছো? 

-আতিক যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো, মনের ভিতর এর চাপা ক্ষোভ গুলো ঝেরে ফেলার,

-সে এবার বলতে শুরু করলো- হ্যাঁ দিচ্ছি কারণ আমি তোমায় কখনো ভালোইবাসিনি  : আর বিয়ে এটা কি তুমি বিয়ে বল ?

এটা তো একটা দলিল যার বলে তোমায় এতটা দিন কাছে পেয়েছি। 

তোমার মনে আছে নিহা? তুমি আমায় সবার সামনে চড় মেরে ছিলে,,, মনে করো এটা তারই প্রতিশোধ ।

-নিহার পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল ,কি শুনছে এসব সে? আতিকের পরিবর্তন কিছুদিন হলো নীহার চোখে পড়ছে, সে ভেবেছিল পারিবারিক কোন ঝামেলায় আছে,কিছুদিন পরে ঠিক হয়ে যাবে, তাই বলে সম্পর্কটাই মিথ্যা ছিল? নিহার ঠিকঠাক দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছে না,

অথচ আতিকের কিছুই মনে হচ্ছে না বরং নেহার অসহায়ত্ব দেখে ওর আরো ভালো লাগছে ।

-নিহা ওর কাছে হাতজোড় করে বলল এ সম্পর্কটা ভেঙে দিও না,

 আতিক কোন কথাই শুনতে রাজি নয় সম্পর্কটা এগিয়ে নিতে চাইছে না সে,নিহাকে  সরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল সে, 

-নিহা যেন উঠে দাঁড়ানোর শক্তিটাও পাচ্ছে না ওর জীবনটা এক মুহূর্তে যেন কোন এক কালবৈশাখীর ঝড়ে এসে লন্ডভন্ড করে দিয়ে গেল। কোথায় দাঁড়াবে সে, এই কষ্ট কাকে বলবে ? ভার্সিটির অনেকেই জানে তাদের সম্পর্কের কথা তাদের বিয়ের কথা। 

আতিকের জন্য পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছে সে। 

কোনমতে নিহা আতিকের বাসা থেকে বেরিয়ে এলো, ঘরেওফিরল না সে।

 নিহা ক্যাম্পাসের এক কোনায় বসে আছে ,আর ওর চোখ দুটো গড়িয়ে শুধু জল পড়ছে , ওর বোকামির কথাগুলো কাকে বলবে? এক মুহূর্তে নিহার জীবনটা যেন নিরাশার বালুচরে পরিণত হয়ে গেল ।প্রায় সারাদিন এভাবেই বসে থাকলো , অপেক্ষায় ছিল হয়তো বা আতিক কল করবে ।এদিকে দিনের আলো প্রায় ফুরিয়ে আসছে ,সন্ধ্যা হতে চলল,,,

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 3 months ago

    এই আতিকের মতো ছেলেগুলোর সমস্যা কি আসলে?