রাত তখন ২টা ৩৭ মিনিট। রফিক একা থাকে শহরের প্রায় ফাঁকা হয়ে যাওয়া পুরোনো এক অ্যাপার্টমেন্টে। পাঁচ তলার সেই ফ্ল্যাটে আর কেউ নেই, কারণ পাশের বাসাগুলো কয়েক মাস ধরে খালি।
বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে, আকাশে কালো মেঘ, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝলকানিতে চারপাশ আলোকিত হয়ে আবার অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।
রফিক ঘুমানোর আগে ফোনে স্ক্রল করছিল। হঠাৎ করিডর থেকে টুপ… টুপ… শব্দ এল—যেন ভেজা পায়ের ছাপ মেঝেতে পড়ছে।
সে ভেবেছিল হয়তো পানি পড়ছে কোথাও থেকে, কিন্তু বাইরে গেলে দেখল মেঝে পুরো শুকনো। ঠিক তখনই চোখে পড়ল—দেয়ালে লম্বা একটা ছায়া।
এটা কোনো সাধারণ ছায়া নয়—মানুষের মতো গড়ন, কিন্তু মাথাটা অস্বাভাবিকভাবে লম্বা, হাতদুটো হাঁটুর নিচে ঝুলে আছে। আশ্চর্যের বিষয়, ছায়াটার সামনে কোনো মানুষ নেই। শুধু করিডরের অন্ধকার ফাঁকা।
রফিক দ্রুত দরজা বন্ধ করল, কিন্তু তবুও দরজার নিচ দিয়ে হালকা কুয়াশা ঢুকে পড়ল। সঙ্গে এল স্যাঁতসেঁতে এক গন্ধ—যেন বহুদিনের পুরোনো, ভেজা কাঠ আর পচা পাতার মিশ্রণ।
তারপরই এক ঠান্ডা ফিসফিসানি—
— “তুমি কি মনে রেখেছ… আমি তোমার ছায়া?”
রফিকের বুক ধুকপুক করতে লাগল। কণ্ঠটা নারীর মতো, কিন্তু অদ্ভুতভাবে ফাঁপা—যেন গলার ভেতর নেই, শুধু বাতাসে ভাসছে।
হঠাৎ করে ঘরের বাতি একবার, দু’বার ঝিকমিক করে নিভে গেল। অন্ধকারে সে দেখল, ছায়াটা ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে সেটি মেঝে বেয়ে উঠে তার পায়ে জড়িয়ে গেল।
রফিক চিৎকার করতে চাইল, কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বেরোল না। তার শরীর ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে সবকিছু কুয়াশায় ঢেকে যেতে লাগল।
শেষবার রফিক যা দেখল—দেয়ালের ওপরে তার নিজের ছায়া আর নেই। সেখানে শুধু সেই অদ্ভুত লম্বা ছায়া, যেটা হাসছে… মুখ ছাড়াই।
পরদিন সকালে প্রতিবেশীরা পুলিশ ডেকে দরজা ভাঙল। ভেতরে রফিক মেঝেতে শুয়ে আছে নিথর, চোখ খোলা, কিন্তু সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার—ঘরে সূর্যের আলো ঢুকলেও তার দেহের কোনো ছায়া নেই।