Posts

উপন্যাস

মায়া গন্ডি পর্ব ১১

August 13, 2025

Mohammad Nur

52
View

মায়া গন্ডি
.
পর্ব ১১
.
মোহাম্মদ নূর
.
ঐশ্বর্য প্রথম চিঠিটা পড়ার পর দ্বিতীয় চিঠিটা হাতে নিলো।

                         চিঠি–২
দিনটা ছিল শনিবার। দাদুর ছোট ভাইয়ের পরিবার আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। তারা পাঁচজন—দাদুর ভাই, তার স্ত্রী আর তিন ছেলে-মেয়ে। এর আগেও একবার এসেছিল তারা। তখন আমি ছোট ছিলাম। তখনই টের পেয়েছিলাম, ওদের বড় ছেলে মুরাদ, সবার সামনে স্বাভাবিক থাকলেও আমার দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতো। সময়-সুযোগ পেলে অজুহাতে আমার গায়ে হাত দিত। তখন কিছু বুঝতাম না, সে বলতো, “আদর করে দিচ্ছি।”
বয়স বাড়তেই বুঝলাম—মুরাদ চাচ্চু যা করতেন, তা আদর ছিল না। এরপর তারা বহুদিন আসে না। হঠাৎ একদিন আসছে শুনেই আমি ঘটনাগুলো মাকে বলি। মা শুনেই বলেছিল,
— “আসতে দে, আমার মেয়ের গায়ে যদি একবার হাত দেয়, তাহলে তার হাত কেটে দরজায় ঝুলিয়ে রাখবো। আর তার রক্তে দুই মা-মেয়ে গোসল করবো।”
মায়ের এ কথায় ভয় পাইনি, বরং নিজেকে নিরাপদ মনে হয়েছিল। আমি এই কথাটাকে গুরুত্ব দেইনি এটাই ছিলো আমার সব থেকে বড় ভুল। আমি ভুল করেছিলাম মাকে সব বলে।
সেদিন সন্ধ্যায় মা ঘরের পর্দা টেনে বলে দেয়—আমি আর ঐশি যেন ঘর থেকে না বের হই। রাতে বাবা চলে আসে। এতদিন পর নিজের কাকার এসেছেন জানতে পেরে বিকেলেই রওনা দিয়েছিলেন।

বাবার কণ্ঠ শুনে আর বসে থাকতে পারলাম না। মাথায় কাপড় চাপিয়ে দৌড়ে বের হই—সেই সময় মুরাদের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। সে আমার দিকে এমনভাবে তাকাল—আমর গা শিউরে উঠলো। সে বলল,
— “উর্মি! চিনিস না? কত বড় হইছোস! একেবারে রাণী!”
আমি ভদ্রভাবে বললাম,
— “ভালো আছি চাচ্চু।”
তবে পেছনে ফিরে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে চাবি নিয়ে তোকে ঘরে রেখে যাই। কারণ আমি ওর উপর একটুও ভরসা করতে পারিনি। পরে বাবার সাথে দেখা করে ঘরে ফিরি। রাতে বাবাকে নিয়ে আমরা অনেক গল্প করি।

পরদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি বাড়িতে কেউ নেই। তুই ঘরে ঘুমাচ্ছিলি, আর আমি খেয়াল করলাম মুরাদ বাসাতেই আছে। দেরি না করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে সে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলো, ডাকতে লাগলো। আমি ভয় পেয়ে চুপ করে রইলাম। হঠাৎ দরজা খুলতেই সে আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে বলল,
— “তুই শহরে আমার সাথে চল, তোরে রাণী বানামু! তোর ছুট্টো বইনডারেও লইয়া ল।”
আমি এ কথা শুনে জানোয়ারটার মুখে 
থুতু মেরে বলি,
— “ছি চাচ্চু! আপনি জানোয়ার! আমাকে ছুঁতে পারেন না আপনি।
সে তখন জোরাজুরি করতে থাকে। আমি চিৎকার করি। তুইও উঠে গিয়ে চিৎকার শুরু করিস। মুরাদ হাসতে হাসতে বলছিল,
— “চিল্লাইয়া কনো লাভ নাই! সবাই গেছে মেলা দেখতে।”
আমি তোকে বলি,
— “ঐশি, নিচে নামবি না!”
এরপর ও আমার গায়ে হাত দিতে চাইলে আমি তাকে কামড়ে দেই, ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেই। সে বাইরে চিল্লাতে থাকে, দরজা ভাঙার চেষ্টা করে।
আমিতো ভেবেছিলাম সব শেষ কিন্তু হঠাৎ, সে এক ভয়ঙ্কর আর্তনাদ করে উঠে —সব থেমে যায়।
কেউ বলল কুত্তার বাচ্চা তুই কি করলি নিজের ধ্বংস এভাবে ডেকে আনলি। আমি বুঝতে পারলাম এটা মায়ের কন্ঠ। সাথে সাথে আমি
মায়ের কণ্ঠ শুনে দরজা খুলি—দেখি, মুরাদ মাটিতে পড়ে আছে, মাথা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আমি মাকে সব বলি। মা তখন হিংস্র হয়ে ওঠে, কিন্তু মুখে এক ঠান্ডা হাসি দিয়ে মা বলল,
— “উর্মি, ঐশির কাপড় গুছিয়ে ব্যাগে ভর। আর এক দিনের কাপড় ভরে রেডি হয়েনে। কোনো কথা না—যা বলছি তাই কর।”
আমি ভয়ে কিছু না বলেই কাজ শুরু করে দেই। এরপর মা মুরাদের হাত-পা বেঁধে কোরবানির ছুরি ধার করতে শুরু করল। আমি ভয়ে থমকে যাই মা কি করতে চাচ্ছে? আমার মাথায় তখনও কিছুই আসেনি। আমাকে বলে বাইরে যা, ঐশিকে রহিমের বাবার সাথে পাঠিয়ে দে মায়ের কাছে।
আমি তোকে নানু বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম রহমত চাচার সাথে।
ভেতরে ফিরে দেখি মা অস্ত্রের ধার বাড়াচ্ছে। তার পর মা বলল তুই ঘরে গিয়ে বোস আমি বললে বের হবি তার আগে যাই হোক তুই বের হোবি না। আমি ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে চুপ করে বসে থাকি। কিছুক্ষণ পর আবার মুরাদের চিৎকার—মা বলছে,
— “আজ তোর চিৎকারে রহমান বাড়ির দেয়াল কাঁপবে!”
এরকম চিৎকার এক ঘণ্টা যাবত চলল—অবশেষে সব থেমে গেলো। মা দরজায় এসে আদুরে কণ্ঠে বলল,
— “উর্মি, বের হ, মা তোকে ডাকছে।”

বেরিয়ে দেখি মায়ের শরীরে রক্ত। মুরাদের ছিন্নভিন্ন দেহ পাটিতে রাখা। মা আমাকে জড়িয়ে ধরল, বলল,
— “তোর জীবনের একটা বাধা শেষ করলাম। আর কেউ তোদের ছুঁতে পারবে না!”
তারপর মা আমার মাথায় রক্ত ঢেলে দিলো বালতি থেকে। ঠিক সেই সময় ঝড় শুরু হয়—বৃষ্টি নামে, সব রক্ত ধুয়ে যায়।
সে সময় মা আমাকে বলল,
— “এখনই তুই গ্রাম ছেড়ে নানির বাড়ি যা। কাল ঐশিকে রেখে চলে আসবি। আমি এ গ্রামে থাকবো, সবাইকে দেখিয়ে দিবো আমার মেয়েদের দিকে কেউ হাত বাড়ালে আমি কি করতে পারি!”
আমি মা'র মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে কিছু বলতে পারলাম না—শুধু চলে এলাম।

পরের দিন শুনলাম মা'কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। নানু আমায় জড়িয়ে ধরে বলেছিল,
— “ঐশিকে কিছু বলবি না, ও ছোট, ভয় পাবে।”
তোকে মামির কাছে রেখে আমি সাথে সাথে নানুকে নিয়ে চলে আসলাম। এসে দেখি গ্রামের মানুষ আমাদের বাড়িতে ভির করেছে। আমি ধিরে বাড়িতে ঢুকছি। সব কিছু কেমন ঘোরের মতো লাগছে গ্রামের কেউ আমার দিকে মাথা তুলে তাকাচ্ছে না।
বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে দেখি পুলিশ মুরাদের লায়াহি নিয়ে এসেছেন ময়না তদন্তের পর। বাড়িতে এসে তার বাবা মার উদ্দেশ্যে পুলিশটি বলছে আমরা আপনাদের ছেলের নেয় কামোনা করি। আমাদের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী উনাকে প্রাই ১ঘন্টা জঘন্য ভাবে টর্চার করা হয়েছে। এবং জীবিত থাকা অবস্থাতেই তার হাত পা কাটা হয়েছে। আর সে যেনো চিৎকার না করতে পারে তাই তার জিহ্বা কেটে মুখে দুই বারের থেকে অধিক ধারি বস্তু দিয়ে আঘাত করে মুখের চুয়াল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এসব শুনে সকলের চোখ কপালে উঠে গেলো সবাই ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি বাবাকে ডেকে ঘরে নিয়ে গিয়ে বললাম বাবা মায়ের কোনো দোষ নেই মা রাগের মাথায় এ কাজ করে ফেলেছেন তুমি মাকে বাচাও।
বাবা আমাকে বলল মানুষের প্রতি মানুষের যতো রাগি থাকুক এভাবে কেউ কাউকে মারতে পারে? 
তার পর আমি বাবাকে সব খুলে বললাম। কিন্তু পুরোটাই বলিনি একটা মেয়ে তার বাবার সাথে সব খুলাখুলি ভাবে বলতে পারে না। 
আমার মুখে সব শুনে বাবা কিছুই বললো না, বরং বলল,
— “তোর মায়ের নাম আমার সামনে নিস না! আমি ওকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা কতবো, যোদি আনতে পারি তারপর এ বাড়ি ছেরে চলে যাব।”
আমি বললাম,
— “তুমি জানো না তোমার ভাই কেমন মানুষ ছিল।”
বাবা ধমক দিয়ে বলল,
— “তাই বলে মানুষ খুন করতে হবে! তাউ এই ভাবে?” তুই জানিস আমরা বাড়িতে ঢুকে কি দেখেছি তোর কোনো ধারণা আছে? বাবা বলতে শুরু করলো। আমরা বাড়িতে ঢুকার আগেই দেখি আমাদের বাড়ির উপর কাকের ঝাক উরে বেরাচ্ছে। আরেকটু কাছে আস্তেই ফেপ্সা পচা গন্ধ নাকে আসে। আমরা দৌরে বাড়ির সদর দরজার সামনে দারাতেই দেখতে পাই মুরাদের শরীরের ছিন্ন বিচ্ছিন্ন অংশ গুলো হুক দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা। তার ঠিক নিচেই মুরাদের মাথায় পা রেখে তোর মা চেয়ারে চুল এলো মেলো করে বসে আছে। আমরা সবাই বমি করে দেই আর কাকিমাতো জ্ঞান হারিয়ে কাল রাত থেকে এখনো অচেতন অবস্থায় পরে আছে। এই বলে বাবা বলল বল এমন হিংস্র কোনো মানুষ হতে পারে? তোর মা একটা জানোয়ার। 
আমি বললাম,
— “একদিন তুমি সত্যিটা জানবে...”

ঐশ্বর্য চিঠিটা পড়ে কেঁপে উঠলো। তার শান্ত, নম্র মায়ের এই ভয়ঙ্কর রূপ কল্পনাতেও আসেনি। সে তখনো তৃতীয় চিঠিটা পড়েনি—ঠিক তখনই শান্তি ডেকে উঠলো,
— “ঐশি, তোর বাবা তোর জন্য কি এনেছে দেখ!”

ঐশ্বর্য গিয়ে দেখে, বাবা প্রচুর খাবার আর জিনিসপত্র এনেছে। ঐশ্বর্য বলল,
— “এত কিছু কেন বাবা?”

রবি হেসে বলল,
— “কাল ঈদ, আমি শহরে চলে যাবো। যতদিন আছি, আমার মা ভালো-মন্দই খাবে!”

শান্তি চিৎকার করে বলল,
— “ঐশ্বর্য, তোর বাবারে বল, তুই না থাকলেও মা তোকে ভালো-মন্দ খাওয়ায়।”
সবাই হেসে ওঠে।
ঐশ্বর্য বলল,
— “বাবা, কিছু খেয়েছো?”

রবি বলল,
— “আরে এইভাবে তো আমার মা আমাকে বলতো এটা বলেই সে হো হো করে হেশে উঠে। তার সাথে সবাই হেসে উঠলো। 
ঐশ্বর্য ভাবলো সবাই কতো তারা তারি সব ভুলে যাচ্ছে। যাইহোক এটাই ভালো আমিও সব কিছু ভুলে যেতে চাই।

সবাই খেতে বসে, পাটি পেতে রাতের খাবার হয়। ঐশ্বর্য ভেতরে ভেতরে ভাবতে থাকে—তার মা কিভাবে এতটা বদলে গেলো? এতটা হিংস্র একজন মানুষ এত স্নেহময়ী কিভাবে হলো?

খাবার শেষে শান্তি ঐশ্বর্যকে ঘরে দিয়ে বলল,
— “কাল ঈদ, তাড়াতাড়ি ঘুমা। ঘুরতে যাবো সকলে।”

ঐশ্বর্য চুপচাপ তাকিয়ে রইল।
— “আম্মা, বুবু এখন কোথায়? তুমি জানো না?”

শান্তি বলল,
— “জানলে এমন কোন শক্তি ছিলো যে আমাকে আটকে রাখবে আমার মেয়ের কাছে যেতে?”
এই বলে চলে গেল।

ঐশ্বর্য মায়ের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো, আবার হ্যারিকেন জ্বালিয়ে তৃতীয় চিঠিটা বের করলো।
ঠিক তখন শান্তির কণ্ঠে আবার শোনা গেল,
— “জানালাটা কিন্তু খুলিস না, গ্রামে চোরের উৎপাত বেড়েছে!” রাতের ঔষধ টা খেয়ে নে সকাল পর্জন্ত শরীরে জোর ফিরে পাবি।

ঐশ্বর্য বুঝলো তাহলে হয়তো এ কদিন আনার শরীরে খাবারের অভাবে দুর্বলতার দেখা দিয়েছে। এবার সে চিঠি টা হাতে নিলো.....

ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
পর্ব ১২ শিগগিরই আসছে। পাশে থাকবেন।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 3 months ago

    বীভৎস বর্ণনাটুকু বাদ দিলে ভালই বাকিটা