সন্ধ্যার নরম হাওয়াটা যেন আজ একটু বেশি ঠান্ডা। আকাশের একপাশে সূর্য ডুবে যাচ্ছে, অন্যপাশে ছড়িয়ে আছে হালকা মেঘের আস্তরণ।
নীলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে, হাতে চেপে রেখেছে একটি পুরনো চিঠি।
উপরে লেখা—
“প্রিয় নীলা, আমি তোমাকে ভুলে যাইনি…”
পাঁচ বছর আগে, রাহুল ছিল নীলার জীবনের প্রতিদিনের হাসি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গল্প, নদীর ধারে হাঁটা, মেলার ভিড়ে হাত ধরা—সবকিছু যেন ছিল অবিচ্ছেদ্য।
হঠাৎ একদিন দূরের শহরে চাকরির সুযোগ এলো। নীলা চেয়েছিল সে থাকুক, কিন্তু রাহুল স্বপ্নের পেছনে ছুটে গেল।
প্রথম কিছুদিন ফোন, মেসেজ—সব ছিল।
তারপর একদিন সব থেমে গেল। ফোন বন্ধ, মেসেজের উত্তর নেই।
নীলা ভেবেছিল, হয়তো রাহুল তাকে ভুলে গেছে।
আজ হঠাৎ, ডাকপিয়ন একটি চিঠি দিয়ে গেল।
চিঠিতে লেখা—
"নীলা, আমি জানি, আমি দেরি করে ফেলেছি।
শহরের আলো আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু সময় বুঝিয়ে দিল—সবচেয়ে বড় আলো ছিল তোমার হাসি।
আমি জানি না, তুমি এখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছো কিনা।
তবে কাল, বিকেল পাঁচটায়, আমাদের পুরনো নদীর ধারে আমি থাকব…"
নীলার চোখ ভিজে উঠল, কিন্তু ঠোঁটে লুকিয়ে রইল একটুখানি হাসি।
সে আলমারির ভেতর থেকে বের করল সেই নীল শাড়ি—যেটা রাহুল একসময় বলেছিল, “তুমি এটা পরলে আকাশও তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে।”
---
পরের দিন, বিকেল পাঁচটা
নদীর ধারে নীলা দাঁড়িয়ে, বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়ছে। দূরে ভিড়ের মধ্যে এক ছায়ামূর্তি এগিয়ে আসছে…
নীলা তাকিয়ে দেখল—এ রাহুল নয়।
একজন অচেনা যুবক এসে বলল,
— “আপনি নীলা? আমি অর্ণব… রাহুলের ছোট ভাই।
গত বছর একটা দুর্ঘটনায় রাহুল চলে গেছে। এই চিঠিটা সে মৃত্যুর কয়েকদিন আগে লিখেছিল… কিন্তু তখন আমি আপনার ঠিকানা পাইনি।”
নীলার হাত থেকে চিঠিটা মাটিতে পড়ে গেল।
পাশের নদীটা যেন হঠাৎ আরও গভীর হয়ে গেল, আর আকাশের সব আলো নিভে গেল একসাথে।