রিমি প্রতিদিন বিকেল ৫টার আগে ছাদে চলে আসত। চারপাশের বিল্ডিংগুলো রোদে গা ভিজিয়ে ধীরে ধীরে কমলা রঙে রূপ নিত, আর আকাশে মেঘেরা যেন রঙের খেলায় মেতে উঠত। শহরের ধুলো, হর্ন, ভিড়—সব থেকে সে তখন কয়েক মুহূর্তের জন্য মুক্তি পেত।
সেই দিনটাও ঠিক এমনই ছিল। কিন্তু হঠাৎ পাশের বাড়ির ছাদে এক অচেনা ছেলেকে দেখতে পেল রিমি। গায়ের গঠন পাতলা, চোখে শান্ত এক ধরনের গভীরতা। হাতে পুরনো একটা হারমোনিকা।
ছেলেটি তার দিকে তাকিয়ে সামান্য হাসল।
— “সঙ্গীত পছন্দ?”
রিমি একটু লাজুকভাবে মাথা নেড়ে বলল,
— “শুনতে ভালো লাগে।”
পরের মুহূর্তেই সুর ভেসে উঠল। এমন সুর, যা কানে নয়, সরাসরি হৃদয়ে গিয়ে লাগে। মনে হচ্ছিল এই শহরের সব ক্লান্তি ধুয়ে যাচ্ছে সেই সুরে।
দিনের পর দিন সেই দৃশ্য চলতে থাকল—দু’জন দু’টি ছাদে, মাঝে শুধু আকাশের ফাঁক, আর সুরের সেতুবন্ধ। কথা খুব কম, কিন্তু চোখের ভাষা ক্রমে অনেক কিছু বলে দিচ্ছিল।
একদিন বিকেলে রিমি ছাদে এল, কিন্তু ছেলেটি নেই। সে অদ্ভুত এক শূন্যতা অনুভব করল। সূর্য ডোবার রঙও যেন ম্লান হয়ে গেছে।
পরদিন ছাদে এসে দেখে কার্নিশে একটা খাম রাখা। তাড়াতাড়ি খুলল। ভেতরে শুধু লেখা—
"তুমি যদি চাও, আমি তোমার গল্পের সুর হতে পারি।"
রিমি চোখ বন্ধ করে মনে মনে উত্তর দিল, “তুমি তো আগেই হয়েছো।”
সেই দিন থেকে আর তারা ছাদে আলাদা দাঁড়ায়নি—একই ছাদ, একই সুর, আর একই গল্পের দুই নায়ক-নায়িকা হয়ে বেঁচে ছিল।