আরিফ প্রতিদিনের মতো রাত ৯টায় বাসায় ফিরল। চাবি ঘোরানোর সাথে সাথেই চোখ পড়ল টেবিলের উপর রাখা পুরনো দেয়ালঘড়িতে। সেই ঘড়ি তার বাবার শেষ স্মৃতি, আরিফের কাছে অদ্ভুতভাবে প্রিয়। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে সে দেখছে—ঘড়ির কাঁটা মাঝে মাঝে থেমে যায়, তারপর আবার নিজে থেকেই চলতে শুরু করে।
সেই রাতে, ঘড়ি থেমে আছে ৮টা ১৫ মিনিটে। অদ্ভুতভাবে মনে হচ্ছিল, যেন কেউ তাকে সেই মুহূর্তে তাকিয়ে থাকতে বলছে। ঠিক তখনই কলিংবেল বেজে উঠল।
দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেল—একজন অপরিচিতা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, গায়ে হালকা নীল শাল, হাতে পুরনো একটা খাম।
— “আপনি কি আরিফ রহমান?”
— “জি… কিন্তু আপনি?”
— “আমি আয়েশা। এই চিঠি আপনার জন্য… রেখে গিয়েছিলেন আমার দাদা, বহু বছর আগে।”
আরিফ বিস্মিত হয়ে চিঠি খুলল। তার বাবার হাতের লেখা—
"যেদিন ঘড়ির কাঁটা ৮টা ১৫ মিনিটে থেমে যাবে, সেদিন দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে তোমার জীবনের মানুষ। ভয় পেও না, তাকে ভিতরে আনো।"
আরিফ চুপচাপ মেয়েটির দিকে তাকাল।
— “আপনার দাদা…?”
আয়েশা একটু হেসে বলল,
— “তিনি বলতেন, আপনার বাবা আমার মায়ের জন্য সবসময় একজন ভালো মানুষ খুঁজছিলেন… কিন্তু পাননি। আমি আসলে… আপনার বাবার প্রতিশ্রুতির শেষ অংশ।”
সেই মুহূর্তে ঘড়ির কাঁটা আবার চলতে শুরু করল। মনে হলো সময়ও যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।
সেদিন থেকেই আয়েশা আরিফের জীবনে থেকে গেল—যেন ঘড়ির কাঁটা জানত, ভালোবাসার সঠিক সময় কখন।