তৃষা আর অর্ণব—ছোটবেলা থেকে একসাথে বড় হওয়া দুই বন্ধু। একই পাড়া, একই স্কুল, পরে একই কলেজ। সবাই জানত, তারা খুব ভালো বন্ধু, কিন্তু দু’জনের মনেই চুপচাপ একটা অন্য রকম অনুভূতি গড়ে উঠেছিল, যা কেউ মুখে আনেনি।
শীতের শেষ দিকে একদিন অর্ণব হঠাৎ বলল—
— “চল না, শহরের বাইরে মেলায় যাই। শুনেছি অনেক সুন্দর হবে।”
তৃষা একটু অবাক হলেও রাজি হয়ে গেল।
সেদিন আকাশে রোদ, বাতাসে শীতের মিষ্টি ঠাণ্ডা। তারা বাসে চেপে শহরের বাইরে ছোট্ট মেলায় পৌঁছাল। রঙিন পতাকা, উজ্জ্বল আলো, ভাঁপ ওঠা পিঠার গন্ধ—সব মিলিয়ে মনে হচ্ছিল যেন শৈশবের ছবির ভেতর ঢুকে গেছে।
তারা একসাথে ঘুড়ি কিনল, হাতে গরম গরম চপ খেল, আর নানা দোকান ঘুরল। অর্ণব মাঝে মাঝে তৃষার দিকে তাকিয়ে দেখছিল—তার চোখে শিশুর মতো আনন্দ ঝলমল করছে।
হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে তৃষা একটু পিছিয়ে গেল। অর্ণব ঘুরে দাঁড়িয়ে তৃষার হাত শক্ত করে ধরে বলল—
— “এই যে, হারিয়ে যাচ্ছিলে কোথায়?”
তৃষা লাজুক হাসি দিল। হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার বদলে সেই উষ্ণতায় মিশে রইল।
মেলার বাকি সময় তারা হাত ধরে হাঁটল—কখনো নীরবে, কখনো হাসতে হাসতে। চোখে চোখ পড়লে দু’জনেই একটু চুপ হয়ে যেত।
ফেরার পথে বাসে জানালার ধারে বসে তৃষা হালকা হাসিতে জিজ্ঞেস করল—
— “তুমি হাত ছাড়োনি কেন?”
অর্ণব মুচকি হেসে উত্তর দিল—
— “পরে যদি আবার হারিয়ে যাও?”
তৃষা কিছু বলল না। শুধু মনে মনে ঠিক করল—এই মানুষটার হাত সে আর কোনোদিন ছাড়বে না।
---