অপার সাগর তীরে, পল্বল দুহিতা,
তৃণাচ্ছাদিত মণি যেন, আদরে দুলিছ,
মন্থন হতে উদিত কাঞ্চণ শোভাময়ী
জননী বঙ্গভূমি! কুটিরে তোমার ও কী ধ্বনি?
ওকি হাহাকার, বক্ষ চিরি উঠে অন্ত্যরীক্ষে,
‘হা পুত্র, হা আত্মজ, কি হেতু তোমারে—
স্বর্ণভূমির ভরসা—সূতানালি সাপে কাটি
লখীন্দর, আলোক শূণ্য করে স্বদেশেরে,
ঘোর তমোময় আজি পৃথ্বী, রবিহীন।’
কহ, মা, জননী, সাগর দুহিতা কেন
চন্দ্রনিভ নীল, মুহ্যমান, শোকে জ্যোতিহীন?
কোথা পুত্র তব মাতঃ? তর্জনী হেলনে যার
দুলিবে সায়র আহ্লাদে, দুন্দুভী
বাজিবে চৌদিকে, মর্ত্য জুড়ে
মিলিবে জনপদ-গণ মুক্তি-নিনাদে?
কণকভূমি, কি কারণে এহেন উদ্বেল,
বক্ষ ফাটা আর্তনাদে আছাড়িয়া পড়ো?
আঙ্গিনায় মেঘচ্ছায়া বিষপানা কাটে,
বিস্রস্ত বসনে চাও চারিদিকে
যেন মণিহারা অহী, পাগলিনী বেশ
হাহা করি ছুটিতেছ ভুবন ব্যেপে
‘হা পুত্র হা মানিক’ বলে, কহো মাতঃ!
‘জানো তুমি, নিঃশঙ্ক যে অস্ত্রের মুখে
অজেয় জগতে সে, রণে নাই ভয়
অজস্র অসংখ্য হয়ে ফিরে আসে,
জন্ম লয় প্রতি ফোঁটা রক্ত হতে
অযুত নিষাদ,...অধম সে, যে মূঢ়
না জানে স্বর্গ জন্মভূমি, নাই আর
অন্য কোনও বসতি তাহার।
কে হায় আগুন দিয়ে নিজ গৃহে ঘুমায় আলসে?