পাহাড়ের নাম শুনলেই আমার মনে প্রথমে যে ছবি ভেসে ওঠে, তা হলো সবুজে মোড়ানো ঢাল, মেঘে ঢাকা চূড়া আর নিচে নীরবে বয়ে চলা নদী। কয়েক মাস আগে বন্ধুদের সাথে বান্দরবান ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল। জীবনে যতবার ঘুরতে গিয়েছি, তার মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে শান্ত আর অবিস্মরণীয় ভ্রমণ।
যাত্রা শুরু হয়েছিল ঢাকা থেকে রাতে বাসে করে। প্রথম দিকে হাসি-ঠাট্টা আর গান গেয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু বান্দরবানের পাহাড়ি পথের বাঁকগুলোতে যখন প্রবেশ করলাম, তখন বুঝতে পারলাম প্রকৃত ভ্রমণ এখন শুরু। চারপাশে কেবল সবুজ আর নীলের মিশ্রণ—মনে হচ্ছিল যেন রঙতুলির আঁচড়ে আঁকা কোনো ছবি।
প্রথম গন্তব্য ছিল নীলগিরি। পাহাড়ের গা বেয়ে ওপরে ওঠার সময় ঠান্ডা বাতাস মুখে এসে লাগছিল, আর দূরে সূর্যোদয়ের রঙ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছিল আকাশে। যখন চূড়ায় পৌঁছালাম, তখন সত্যিই মনে হচ্ছিল আমরা মেঘের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। নিচের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছিল ছোট ছোট গ্রাম, যেগুলো যেন রঙিন বিন্দুর মতো ছড়িয়ে আছে।
পাহাড়ে ঘুরতে গেলে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে মানুষের আন্তরিকতা। পথে স্থানীয় কিছু শিশু এসে হাসিমুখে “হ্যালো” বলল। তাদের সরল হাসি আর নিষ্পাপ চোখ যেন সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিল। আমরা কাছের এক চায়ের দোকানে বসে পাহাড়ি লেবুর চা খেলাম—স্বাদ এমন ছিল, যেন জীবনের সব ক্লান্তি ধুয়ে মুছে দিল।
তবে পাহাড় ভ্রমণ শুধু সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য নয়, এটি এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি। শহরের ব্যস্ততা, শব্দ আর দূষণ থেকে দূরে এসে এখানে মনে হয় সময় থমকে গেছে। পাহাড়ের নিস্তব্ধতা মনকে এমনভাবে শান্ত করে, যা অন্য কোথাও পাওয়া কঠিন।
সেদিন সন্ধ্যায় আমরা এক পাহাড়ি গ্রামে রাত কাটিয়েছিলাম। বিদ্যুৎ ছিল না, কেবল জ্বলছিল মোমবাতির আলো। বাইরে বসে আকাশের তারাগুলো দেখছিলাম, আর মনে হচ্ছিল—জীবনে সুখ আসলে কতটা সহজ জিনিসের মধ্যে লুকিয়ে আছে।
পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে, প্রকৃতিকে ভালোবাসলে সে আপনাকে তার সেরা রূপ উপহার দেবে। আর সেই উপহার কোনো দোকানে বা শহরের বিলাসী জীবনে পাওয়া যায় না। তাই সময় পেলেই একবার পাহাড়ের ডাক শোনা উচিত, কারণ সেখানে গিয়ে আপনি খুঁজে পাবেন নিজের ভেতরের হারিয়ে যাওয়া শান্তিটুকু।