Posts

চিন্তা

পুতিন-ট্রাম্পের দোস্তি: আরাধ্য শান্তি কতদূর?

August 17, 2025

ফারদিন ফেরদৌস

82
View



গতকাল মার্কিন অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রেসিডেন্টের সাথে চলমান ইউক্রেন সংকট নিয়ে 'PURSUING PEACE' -শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের ফলাফল -রাশিয়া ও ইউক্রেনের শান্তি চুক্তি হতে হবে; এমন সম্ভাবনার প্রত্যাশা নিয়ে শেষ হয়েছে। 

এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ থামালে তাঁকে নোবেলের জন্য মনোনয়ন দেবেন তিনি। ট্রাম্পেরও খুব ইচ্ছে ওই মেডেলটা ছুঁয়ে দেখার। এর আগেই ইসরায়েল ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের সরকার তাঁকে মনোনয়ন দিয়ে নরওয়ের নোবেল কমিটির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। ট্রাম্প নিজেও তদবির করছেন। খোদ নরওয়ের অর্থমন্ত্রীর সাথে নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে কথাও বলেছেন। এরপরও যদি নোবেল অধরা থেকে যায় সেটি ক্ষমতাধর ট্রাম্পের মনোজগত হয়ত কিছুতেই মানবে না। 

ঠিক এখানেই নিহিত আছে আলাস্কার বৈঠক ও এর ফলাফল ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা। আপাতদৃষ্টিতে আমরা মনে করি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া দুই বৈরি পরাশক্তি। এই ক'দিন আগেও ইউক্রেন প্রসঙ্গে পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, লোকটা অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, সেসবই ফালতু, বুলশিট! তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন -এমনকি রাশান সামুদ্রিক সীমান্তে পারমাণবিক ওয়ার হেডসম্পন্ন সাবমেরিন মোতায়েন করার কথাও বলেন। কয়েক সপ্তাহ না ঘুরতে সেই পুতিন একেবারে মার্কিনিদের ডেরায় সর্বোচ্চ সম্মান ও আতিথেয়তায় চলে গেলেন। ট্রাম্পও পুতিনকে বরণ করলেন উষ্ণ অভ্যর্থনায়। বি-২ যুদ্ধবিমান দিয়ে গার্ড অব অনার দিলেন। অ্যাঙ্কোরেজের বিমানঘাঁটিতে লালগালিচা সংবর্ধনা দিলেন, হাততালি দিয়ে পুতিনকে বরণ করলেন এবং অফিশিয়াল গাড়ি 'বিস্ট'-এ পুতিনকে নিজের পাশে বসিয়ে একান্ত ব্যক্তিগত কথাগুলো সেড়ে নিলেন। শেষে টানা তিনঘন্টা ধরে বৈঠক করলেন। 

এরপরও কি যুদ্ধ চলমান থাকার কথা? মুশকিল হয়েছে অন্য জায়গায়। ইতোমধ্যে ইউক্রেনের ২০ ভাগ ভূমি রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চল হয়ে গেছে। এখন ট্রাম্প বলছেন, যুদ্ধরত দুই দেশকে একে অপরের সঙ্গে জায়গা বদল করে নিতে হবে। যেখানে ইউক্রেনের অধীনে রাশিয়ার ভূমি মাত্র ০.০০০০৮ শতাংশ -যা ৫ বর্গমাইলের বেশি না। তাহলে এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভূমি দখল-বেদখলের সংকট কীভাবে নিষ্পত্তি হবে? ট্রাম্পের পরের বৈঠক নাকি জেলেনস্কির সাথে হবে। সেখানে হয়ত নতুন কোনো বোঝাপড়া হবে। সাময়িক কোনো যুদ্ধবিরতিতে না গিয়ে হয়ত রাশিয়া ও ইউক্রেন সরাসরি শান্তিচুক্তিতেই উপনীত হবে। ভ্লাদিমির পুতিন খামোখা আমেরিকায় পা রেখেছে এমনটা নাও হতে পারে। 

পুতিনের সাথে ট্রাম্প যে স্থানে বৈঠকে করেছেন, সেটি একসময় রাশিয়ার অধীনেই ছিল। ১৮৬৭ যুক্তরাষ্ট্র মাত্র ৭.২ মিলিয়ন ডলার দিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে নেয়। ১৯৬৮ সালে বিশাল তেলের খনি আবিষ্কারের পর যার গুরুত্ব বেড়ে যায় অনেকখানি। 

আজকের আলাস্কা হলো প্রাকৃতিক সম্পদ, তেল, গ্যাস, মাছ ও পর্যটনের জন্য সমৃদ্ধ একটি রাজ্য, যেখানে নানান সংস্কৃতির আদিবাসী জনগোষ্ঠীও বসবাস করছে। 

পূর্বসূরীদের ঐতিহ্যমণ্ডিত এমন একটা স্মৃতিকাতরতায় পূর্ণ জায়গায় দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের বৈঠক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পুতিন নিজের স্বার্থ যেমন অক্ষুন্ন রাখবেন, তেমনি বন্ধু ট্রাম্পের স্বার্থও জলাঞ্জলি দেবেন না -এটা ভাবা ভুল নয়। ব্যক্তিগতভাবে কারো হারজিত নয়, সবার আগে মানবতা -এই প্রতীতি সর্বাবস্থায় সবার মাঝে জাগরুক থাকুক। পুতিন-ট্রাম্প ভালো থাকলে ক্লিষ্টতা ভুলে অন্যরাও নিশ্চয়ই সুখের মুখ দেখবে। 

তার ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প পুতিনকে লেখা আবেগঘন চিঠিতে বলেছেন, 'মাতা-পিতা হিসেবে আমাদের কর্তব্য হলো আগামী প্রজন্মের আশাকে লালন করা। নেতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব শুধু কিছু মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং সকল সন্তানের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা।
নিঃসন্দেহে, আমাদের চেষ্টা করতে হবে মর্যাদায় পূর্ণ একটি পৃথিবী আঁকার জন্য -যাতে প্রতিটি প্রাণ শান্তি নিয়ে জাগতে পারে, আর ভবিষ্যৎ নিজেই সুরক্ষিত থাকে। সময় এসেছে।' 

গাজার বিপন্ন শিশুদের রক্ষায় মানবতাবাদী ও শিশু অন্তপ্রাণ মেলানিয়া ট্রাম্প এমনধারার একটি মহত্তম চিঠি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে লিখবেন -এমনটা আমরা সশ্রদ্ধ চিত্তে আশা করি। 

আমরা সর্বান্তকরণে মনে করি শান্তির সময় এসেছে। কে কোথায় কার সাথে বন্ধুত্ব করছে, সেটার চেয়ে বেশি জরুরি, আর একটিও যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার না করে এক কলমের আঁচড়ে শান্তি স্থাপন। কোথাও কেউ যদি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পায় তবে তাঁর বা তাঁদের উচিত হবে, বিশ্বকে সর্বোচ্চ শান্তির অতুল্য পরাকাষ্ঠা দেখানো এবং অহিংসার বড় নজির স্থাপন করা! শান্তিবাদী আমরা বিশ্বমানুষের পরম স্বস্তিই দেখতে চাই। 

লেখক: সাংবাদিক
১৭ আগস্ট ২০২৫
 

Comments

    Please login to post comment. Login