রিমা প্রতিদিনের মতো লাইব্রেরির সেই শান্তকোণায় বসেছিল। জানালার পাশে টেবিলটি তার প্রিয় স্থান। বাইরে রোদ মৃদু আলো ছড়াচ্ছিল, আর হাওয়া বইয়ের পাতায় নরমভাবে খেলছিল। বই পড়তে পড়তে রিমা হঠাৎ লক্ষ্য করল, পাশের টেবিলে একজন ছেলে বসে আছে—একটি বড় বইয়ে ডুবে আছে, চোখে গভীর মনোযোগ।
ছেলেটি দেখতে শান্ত, গম্ভীর এবং কিছুটা রহস্যময়। রিমার হঠাৎ মনে হল যেন কিছু দেখা মুহূর্তে সময় থেমে গেছে। সে চোখ সরাতে চাইলেও পারল না। ছেলেটিও তার দিকে তাকিয়ে থাকল, আর এক মুহূর্তের জন্য দুজনের চোখ মিলল। সেই মিলনের অনুভূতি রিমার হৃদয়কে অদ্ভুতভাবে উত্তেজিত করল।
পরের কয়েকদিন রিমা লাইব্রেরিতে গেলে ছেলেটির দিকে বারবার চোখ চলে যেত। কিন্তু সাহস করে তাকে কথা বলতে পারত না। ছেলেটিও যেন রিমাকে লক্ষ্য করলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস পাচ্ছিল না।
একদিন, রিমা সাহস জোগাড় করল। সে টেবিলের ওপর একটি বই রেখে গেল। বইটির মধ্যে ছিল একটি ছোট চিঠি:
> “হ্যালো, আমি আপনাকে লাইব্রেরিতে দেখেছি প্রতিদিন। কিন্তু সাহস পাইনি কথা বলতে। যদি আপনি চান, আমরা একদিন এখানে একসাথে বই পড়তে পারি।”
রিমা চমকে গেল। চোখে অদ্ভুত উত্তেজনা জ্বলে উঠল। সে তাড়াতাড়ি উত্তর দিল:
> “হ্যাঁ, আমি চাই। আসুন আমরা একসাথে বই পড়ি।”
পরের দিন, ঠিক নির্ধারিত সময়ে, তারা লাইব্রেরির একই টেবিলে বসল। বইয়ের মধ্যে হাত লেগে গেল, চোখে চোখ পড়ল, আর প্রথম কথাবার্তা শুরু হলো।
“আপনার নাম কি?” রিমা হেসে জিজ্ঞেস করল।
“রিয়ান,” ছেলে হেসে বলল। “আর আপনি?”
“রিমা,” সে উত্তর দিল।
সেখানে তারা বই নিয়ে বসে ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে বইয়ের পাতা থেকে আলোড়ন শুরু হলো। রিমা রিয়ানের সাথে তার প্রিয় বই, গল্প, স্বপ্ন সব ভাগ করে নিল। রিয়ানও তার শখ, পড়াশোনা, ছোট ছোট গল্প—সব বলল। তাদের কথোপকথনে এমন এক মধুরতা ছিল, যা কেবল তাদের দুজনের জন্যই বিশেষ।
কিছুদিন পর রিয়ান সাহস করে রিমাকে বলল:
“আপনি জানেন কি? প্রথমবার যখন আপনার দিকে তাকিয়েছি, আমার মনে হয়েছিল, আমি আপনাকে অনেকদিন ধরে চিনি।”
রিমা লজ্জায় চোখ নামাল। কিন্তু হৃদয়ে অদ্ভুত আনন্দের অনুভূতি জাগল।
দিনগুলো কেটে যেতে লাগল। তারা একে অপরকে জানার জন্য আরও সময় কাটাতে শুরু করল—সাপ্তাহিক চা বা কফি দেখা, বইয়ের নতুন নতুন আলোচনা, এমনকি হালকা হাঁটাহাঁটি। লাইব্রেরি, বইয়ের পাতা, শান্ত কোণা—সবকিছু তাদের প্রেমের সাক্ষী হয়ে উঠল।
একদিন রিয়ান সাহস করে বলল:
“রিমা, আমি জানি আমরা কিছুদিন ধরে বন্ধু এবং সহপাঠী হিসেবে একে অপরকে চিনি। কিন্তু আমি চাই আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর হোক। আমি চাই আপনার জীবনের অংশ হই।”
রিমা চোখে উজ্জ্বল জল ধরে হাসল। “আমি-আমি ও চাই, রিয়ান। তবে আমাদের ধীরে ধীরে সবটা করতে হবে।”
তাদের প্রথম চুম্বন হয় লাইব্রেরির সেই শান্ত কোণায়, যেখানে সবকিছু শুরু হয়েছিল। বই, চিঠি, চোখের মিল—সব মিলিয়ে তাদের প্রেম আরও দৃঢ় হলো।
বছরগুলো কেটে গেল, কিন্তু রিমা আর রিয়ান কখনও সেই প্রথম চোখের দেখার মুহূর্ত ভুলতে পারল না। লাইব্রেরি, বই এবং নিভৃত কোণ—সেখানে জন্ম নেয়েছিল একটি প্রেম, যা জীবনের প্রতিটি ক্ষণে শক্তিশালী হয়ে উঠল।