গ্রামের ছোট্ট বাগানের ঘরগুলোর মধ্যে দিয়ে হালকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছিল। দীপা তার কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল, আর পেছনের পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিল—আজও জীবন কতটা সাধারণ! বই, হাঁটা, পরিবারের ছোটখাট কাজ—সবকিছু ঠিকঠাক, কিন্তু হৃদয়ে একটা শূন্যতা।
হঠাৎ চিঠির শব্দটা শুনতে পেল। বাড়ির দরজায় একটি ছোট খামের মতো চিঠি রাখা। দীপা তা হাতে নিল। চিঠি খুলতেই তার চোখে অদ্ভুত উত্তেজনা ছড়িয়ে গেল। চিঠি লেখা:
> “হ্যালো দীপা,
আমি জানি আমরা একে অপরকে চিনি না। তবে কিছুদিন ধরে আমি আপনাকে দূর থেকে দেখেছি। আপনার হাসি, আপনার ভাবনা, আপনার উপস্থিতি—সবই আমাকে প্রভাবিত করেছে। আমি জানি এটি হঠাৎ, কিন্তু আমি চাই আপনার সাথে বন্ধুত্ব করব।
—অজানা”
দীপা প্রথমে অবাক। কারা এই চিঠি লিখল? সে কি মজা করছে নাকি সত্যিই কারও হৃদয় থেকে এসেছে? অবশেষে কৌতূহল তার সাহসকে জাগালো। সে লিখল উত্তর:
> “হ্যালো,
আমি চমকে গেলাম আপনার চিঠি দেখে। আমি জানি না আপনি কে, কিন্তু যদি সত্যিই বন্ধুত্ব করতে চান, আমি রাজি।
—দীপা”
পরের দিন চিঠি আসে। দীপা খুঁজে পায় যে চিঠিটি লেখকের হৃদয় থেকে লেখা। শব্দগুলো, অনুভূতি—সবই সত্যিকারের। চিঠির মাধ্যমে তারা তাদের জীবনের ছোট ছোট গল্প, হাসি, স্বপ্ন, আনন্দ সব ভাগাভাগি করতে শুরু করে।
দুজনের মধ্যে দূরত্ব থাকলেও চিঠি তাদের হৃদয়কে কাছাকাছি নিয়ে আসে। দীপা লক্ষ্য করল, প্রতিটি চিঠি পড়ার পর তার হৃদয় দ্রুত ধড়ধড় করে। রোমাঞ্চ, কৌতূহল আর অজানা আবেগ—সব মিলিয়ে তার জীবনে নতুন রঙ নেমে এসেছে।
কয়েক সপ্তাহ পর, দীপা সাহস করে চিঠির শেষ পাতায় লেখা ঠিকানায় যায়। গ্রামের সেই ছোট্ট রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তার মনে কৌতূহল আর নার্ভাসনেস উভয়ই মিলিয়ে গেল। সে দেখা পায়—একজন ছেলে, হাতে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
দীপার চোখে অবাক হয়ে সেই ছেলের দিকে তাকিয়ে রোমাঞ্চ জন্ম নিল। ছেলেটির চোখে দীপার জন্য একই উত্তেজনা, একই উষ্ণতা। তাদের চোখের মিলনে মুহূর্তের জন্য সময় থেমে গেল।
“আপনি… চিঠি লেখক?” দীপা ধীরস্বরে জিজ্ঞেস করল।
ছেলেটি হেসে উত্তর দিল, “হ্যাঁ। আমি রিয়ান। আর আমি জানি এই সাহসী যাত্রার শুরু ঠিক এই মুহূর্তে।”
দীপা হেসে বলল, “আমি ভাবতাম চিঠি কেবল শব্দ। কিন্তু এখন আমি বুঝছি, চিঠি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে।”
তারপর তারা বসে একসাথে বইয়ের পাতার মধ্যে গল্প শেয়ার করতে লাগল। রিয়ান তার প্রিয় গল্প, হাসি-ঠাট্টা, শখ সব বলল। দীপা তার আনন্দ, স্বপ্ন, ছোটখাটো গল্প—সব ভাগ করে নিল।
দিনগুলো কেটে গেল, চিঠি থেকে শুরু হওয়া বন্ধুত্ব ধীরে ধীরে বাস্তব প্রেমে রূপ নিল। তারা একে অপরকে আরও ভালোভাবে বুঝতে শিখল—কথার শক্তি, হৃদয় খোলার সাহস এবং ধীরে ধীরে সম্পর্ক গড়ার মাধুর্য।
একদিন রিয়ান সাহস করে বলল, “দীপা, আমি জানি আমরা কেবল কিছুদিন ধরে চিঠি লিখছি এবং এখন কয়েক সপ্তাহ বাস্তবের সঙ্গে একসাথে। কিন্তু আমি চাই আপনি জানুন—আমার হৃদয় পুরোপুরি আপনার জন্য।”
দীপা চোখে উজ্জ্বল জল ধরে হেসে বলল, “আমিও চাই, রিয়ান। কিন্তু আমাদের ধীরে ধীরে সবটা করতে হবে। আমি চাই আমাদের সম্পর্ক সবসময় এমন মধুর থাকে।”
সেই দিন থেকে চিঠি শুধু কথা বলার মাধ্যম থাকল না—এটি তাদের প্রেমের প্রথম সেতু। ধীরে ধীরে তারা একে অপরের জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে উঠল। ছোট্ট গ্রাম, বই, চিঠি, চোখের মিল—সব মিলিয়ে একটি নিভৃত, মধুর প্রেমের গল্প জন্ম নিল।
শেষে তারা বুঝল—কখনও কখনও দূরত্ব, অজানা পরিচয় এবং সাহসী চিঠিই জীবনে সবচেয়ে সুন্দর প্রেমের জন্ম দিতে পারে।