Posts

ফিকশন

হারানো সময়ের প্রেম

August 18, 2025

MD Mostakim

58
View

রোহান এবং তানিশা কলেজে পড়াকালীন একে অপরকে ভালোবাসত, কিন্তু পরিবারের বাধ্যবাধকতা ও সামাজিক অবস্থার কারণে সম্পর্ক কখনও প্রকাশ পায়নি। তারা আলাদা শহরে চলে যায়, এবং দশ বছর ধরে একে অপরকে দেখেনি।

প্রথম পুনর্মিলন

একদিন গ্রামের উৎসবের জন্য তানিশা তার ছোট্ট ব্যবসার কাজ সামলাতে গ্রামে ফিরল। রোহানও শহর থেকে ছুটিতে এসেছে। গ্রামের সেই পরিচিত রাস্তা, পাকা ইটের গেট, বাতাসে ফুরফুরে খুশির আওয়াজ—সব মিলিয়ে তাদের মনে কিছুর পূর্বাভাস দিল।

তানিশা দোকানে বসে ব্যস্তভাবে কাজ করছিল। হঠাৎ, সে পেছন দিকে ফিরে দেখল। রোহান—যার মুখ কালের বিবর্তনে আরও ধ্রুব, কিন্তু চোখে আগের উষ্ণতা—দূরে দাঁড়িয়ে। তাদের চোখের মিলনে মুহূর্তের জন্য সময় থেমে গেল।

“তানিশা… তুমি কি চিনতে পারছ?” রোহান ধীরে ধীরে বলল।
তানিশা হেসে উত্তর দিল, “রোহান… এত বছর পরে দেখা! আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না।”

উভয়ই কিছুক্ষণের জন্য নীরব থাকল। দশ বছরের ফাঁক, অজানা স্মৃতি, এবং দীর্ঘদিন ধরে না দেখা—সব মিলিয়ে একটি অদ্ভুত উত্তেজনা তৈরি হলো।

স্মৃতির রঙ

তারা একসাথে বসে কথা বলতে শুরু করল। কলেজের দিনগুলো, বন্ধুদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা, ছোট ছোট রঙিন মুহূর্ত—সব স্মৃতি একে অপরের মুখে ফিরে এল। রোহান বলল,
“মনে আছে, আমরা লাইব্রেরির সেই ছোট্ট কোণে বসতাম এবং গোপনে একে অপরকে চুপচাপ দেখতাম?”

তানিশা হেসে বলল, “হ্যাঁ, আমি জানতাম তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছ, কিন্তু আমরা কখনও কিছু বলতে পারতাম না। আমি মনে করতাম, তুমি হয়তো আমাকে ভুল বোঝছ।”

হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে তারা বুঝল, কতটা সময় তারা একে অপরকে খুঁজে বেড়িয়েছে—কিন্তু সুযোগ কখনো মেলেনি।

প্রথম ভ্রমণ

একদিন তারা গ্রাম থেকে একটু দূরে পাহাড়ের পানে ঘুরতে গেল। রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে রোহান বলল,
“আমি সবসময় ভাবতাম, যদি আমরা সেই সময় সাহস পেতাম, আমাদের জীবন কেমন হতো।”

তানিশা ধীরে ধীরে উত্তর দিল, “হয়তো আমরা কিছু হারিয়েছি, কিন্তু এখন আমরা এখানে আছি। এই সময় আমাদের জন্য নতুন সূচনা।”

পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে সূর্যাস্তের দিকে তাকাতে লাগল। বাতাসে পাহাড়ের সুবাস, দূরের নদীর কুলকুল—সব মিলিয়ে তাদের মনে একটি অদ্ভুত শান্তি নিয়ে এলো। রোহান ধীরে ধীরে বলল,
“তানিশা, আমি জানি আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। কিন্তু আমি চাই এখন থেকে তোমার পাশে থাকতে।”

তানিশা চোখে জল ধরে হেসে বলল,
“আমি ও চাই, রোহান। হারানো বছর ফেরানো যাবে না, কিন্তু আমাদের প্রেম নতুনভাবে শুরু হতে পারে।”

দিনগুলো কেটে গেল

এরপরের কয়েক সপ্তাহ তারা একে অপরের পাশে কাটাতে লাগল। সকালে তারা নদীর ধারে হাঁটত, দুপুরে বাজার ঘুরে আসত, সন্ধ্যায় চুপচাপ বসে আকাশের রঙ দেখত। ছোট ছোট আড্ডা, হাত ছোঁয়া, চোখে চোখ—সব মিলিয়ে সম্পর্ক ধীরে ধীরে প্রেমে রূপ নিল।

রোহান একদিন বলল,
“তানিশা, আমি ভাবতেছি—আমরা কি একসাথে এই জীবন কাটাতে পারব?”
তানিশা হেসে বলল,
“আমি চাই। তবে আমাদের ধীরে ধীরে সবটা করতে হবে। আমি চাই আমাদের প্রেম সবসময় মধুর এবং শক্তিশালী থাকে।”

বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, প্রেম

তাদের সম্পর্ক শুধু প্রেম নয়, বরং বন্ধুত্বের শক্তি, বিশ্বাসের গভীরতা, এবং জীবনের সুখ-দুঃখের প্রতিটি মুহূর্ত ভাগ করার যোগ্যতা নিয়ে গড়ে উঠল। তারা বুঝল—কখনও কখনও হারানো সময়ই সম্পর্ককে আরও মধুর করে তোলে।

একদিন রোহান বলল,
“আমি জানি আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। কিন্তু এখন আমরা সব কিছু নতুনভাবে শুরু করতে পারি। তুমি কি আমার জীবনকে শেয়ার করবে?”
তানিশা উত্তর দিল, “আমি চিরকাল চাই। আমাদের প্রেম কখনও হারাবে না।”


---

Comments

    Please login to post comment. Login