Posts

ফিকশন

হারানো স্মৃতির শহর

August 18, 2025

MD Mostakim

66
View

শহরের ব্যস্ত রাস্তায়, যেখানে ভিড়ের শব্দ, কফির ঘ্রাণ আর বৃষ্টির ফোঁটা মিশে এক অদ্ভুত আবহ তৈরি করে, সেখানে এলিনা তার জীবনকে নিয়ে হাঁটছিল। তার কাঁধে হালকা ব্যাগ, হাতে ছোট নোটবুক, আর চোখে একটি অজানা খোঁজ। মনে হচ্ছিল, কিছু হারানো যা সে নিজেও ঠিক জানে না।

এলিনা একজন লেখিকা। তার গল্পের ভেতরে জীবন ভাসমান, কিন্তু বাস্তব জীবন সবসময় অন্যরকম—অস্থির, উত্তেজনাপূর্ণ, কখনও কখনও বিষণ্ণ। আজও তার মন ব্যস্ত। তার ভেতর একটি ফাঁপা অনুভূতি—যা শুধু চোখে চোখে মিলন কিংবা অপ্রত্যাশিত সাক্ষাতে পূরণ হতে পারে।

হঠাৎ একটি ছোট ক্যাফের পাশে চোখে পড়ল পরিচিত চেহারা। লুকাস—তার চোখের মধ্যে সেই মৃদু উষ্ণতা, যাকে এলিনা এতদিন খুঁজছিল।

“এলিনা?” তার কণ্ঠে কৌতূহল আর অবিশ্বাসের মিশ্রণ।
এলিনা হোঁচট দিয়ে বলল, “লুকাস… তুমি কি সত্যিই এখানে?”

মুহূর্তের জন্য সময় থেমে গেল। ভিড়, হাওয়া, শহরের শব্দ—সব মিলিয়ে নিভৃত। তারা একে অপরকে দেখল, চোখে চোখে অনুভূতি। এই মিলন ছিল হারানো স্মৃতির পুনর্জন্ম।


---

অতীত স্মৃতি ফিরে আসছে

কয়েক মুহূর্তে, এলিনা মনে করল কলেজের দিনগুলো। তখনও তারা একে অপরকে ভালোবাসত, কিন্তু প্রকাশ করতে পারত না। লাইব্রেরির কোণে বসে গল্প করা, পাহাড়ি ভ্রমণ, গ্রীষ্মের ছুটি—সব কিছু মনে পড়ল।

লুকাস হেসে বলল, “মনে আছে, আমরা সেই ছোট্ট পাহাড়ি ভ্রমণে কী করেছি?”
এলিনা হেসে উত্তর দিল, “হ্যাঁ… আর তখনও জানতাম, তুমি সবসময় আমার কাছে থাকবে।”

এই স্মৃতিগুলো তাদের হৃদয় স্পর্শ করল। তারা বুঝল, সময় পাল্টেছে, কিন্তু অনুভূতি একই রকম শক্তিশালী।


---

নতুন শুরু

পরের কয়েক দিন তারা একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাল। সকালে হ্রদের ধারে হাঁটাহাঁটি, দুপুরে শহরের ছোট্ট ক্যাফেতে গল্প, সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের দিকে তাকানো—সব মিলিয়ে সম্পর্ক নতুন রঙ পেল।

এক বিকেলে হ্রদের ধারের বেঞ্চে বসে লুকাস বলল,
“এলিনা… আমি জানি আমরা অনেক কিছু হারিয়েছি। কিন্তু এখন থেকে আমি চাই তোমার পাশে থাকতে।”
এলিনা চোখে জল ধরে হেসে বলল, “আমি ও চাই। হারানো সময় ফেরানো যায় না, কিন্তু আমাদের প্রেম নতুনভাবে শুরু হতে পারে।”


---

চ্যালেঞ্জ ও দ্বিধা

কিন্তু জীবন কখনও সহজ নয়। লুকাসের চাকরির চাপ, এলিনার লেখালেখির সময়সীমা, শহরের ব্যস্ততা—সব মিলিয়ে দ্বিধা তৈরি হলো।

একদিন এলিনা বলল,
“আমি ভয় পাচ্ছি… আমরা কি একসাথে থাকতে পারব?”
লুকাস হাত ধরে বলল,
“ভয় পেও না। আমরা একে অপরকে বুঝি। প্রেম সব বাধা পার হতে পারে।”

তাদের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হলো। হাত ধরে হাঁটা, চোখে চোখ রাখা, ছোট ছোট সংলাপ—সব মিলিয়ে সম্পর্ক প্রেমের চূড়ায় পৌঁছালো।


---

নাটকীয় মুহূর্ত

এক বিকেল, হঠাৎ এলিনার ফোন বাজল। একটি ফোন কল—লুকাসের প্রাক্তন, যিনি হঠাৎ শহরে ফিরে এসেছে। কলের কথোপকথন শুনে এলিনার মন অস্থির হয়ে গেল।

“তুমি কি… এখনও তাকে চিন্তা কর?” এলিনা কণ্ঠে অস্পষ্ট নার্ভাসনেস।
লুকাস শান্তভাবে বলল, “না। তুমি আমার জীবনের সব। অতীত শুধু স্মৃতি। আমি চাই তুমি আমাদের ভবিষ্যতের অংশ হও।”

এই মুহূর্তে এলিনা বুঝল, সত্যিকারের প্রেম শুধু আবেগ নয়—এটি বিশ্বাস, ধৈর্য ও প্রতিশ্রুতির সমন্বয়।


---

ছোট্ট ভ্রমণ ও আনন্দ

পরের সপ্তাহে তারা শহরের বাইরে ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে ঘুরতে গেল। গ্রীষ্মের হালকা হাওয়া, পাহাড়ের উঁচুতে সূর্য, ছোট নদীর ধারে হাঁটা—সব মিলিয়ে সম্পর্ক আরও ঘন হয়ে গেল।

লুকাস বলল,
“এলিনা… তোমার সঙ্গে এই মুহূর্তগুলো ভাগাভাগি করতে পারাটা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা।”
এলিনা হেসে বলল, “আমিও ঠিক তেমন অনুভব করি। প্রতিটি মুহূর্ত যেন চিরস্থায়ী।”


---

ঘনিষ্ঠতা ও অনুভূতি

শহরে ফিরে আসার পর, তারা একে অপরের পাশে বসে গল্প করল। ছোট ছোট হাসি, চোখে চোখে সংলাপ, হাতের আলিঙ্গন—সব মিলিয়ে সম্পর্ক আরও ঘন হয়ে উঠল।

একদিন এলিনা বলল,
“আমরা কি সত্যিই বুঝতে পেরেছি একে অপরকে?”
লুকাস হেসে বলল, “প্রায়। কিন্তু পুরোপুরি জানার জন্য আরও সময় লাগবে। তবে আমি জানি, আমি চাই তুমি সবসময় আমার পাশে থাকবে।”


---

বিশ্বাসের পরীক্ষা

কয়েক মাস পর, লুকাসের চাকরির জন্য তাকে শহর ছেড়ে অন্য দেশে যেতে হলো। এলিনা ভয় পেয়েছিল।

“আমি ভয় পাচ্ছি… দূরত্ব আমাদের আলাদা করতে পারে,” এলিনা বলল।
লুকাস হাতে হাত ধরে বলল, “দূরত্ব কেবল ভৌত। হৃদয় এক থাকে। আমি ফিরে আসব, প্রতিশ্রুতি।”

এলিনা বিশ্বাস করল। তারা নিয়মিত কল, মেসেজ, ভিডিও চ্যাট—সব মিলিয়ে সম্পর্ককে ধরে রেখেছিল।


---

ফেরার মুহূর্ত

এক বছর পর, লুকাস দেশে ফিরে এল। বিমানবন্দরে এলিনার চোখে জল। তারা একে অপরকে আলিঙ্গন করল, দীর্ঘদিনের দূরত্বের বিষণ্ণতা মিলিয়ে আনন্দের ছন্দ।

“আমি বলেছিলাম, দূরত্ব আমাদের ভাগ করতে পারবে না। তুমি কি বিশ্বাস কর?” লুকাস কণ্ঠে কোমলতা।
এলিনা হেসে বলল, “হ্যাঁ, এখন আমি পুরোপুরি বুঝেছি। আমরা একসাথে।”


---

চূড়ান্ত মিলন

পরের কয়েক মাস তারা একে অপরের পাশে কাটাল। ছোট ছোট ভ্রমণ, বইয়ের আলোচনা, হ্রদের ধারে হাঁটাহাঁটি—সব মিলিয়ে সম্পর্ক আরও গভীর হলো।

একদিন সন্ধ্যায় হ্রদের ধারে বসে সূর্যাস্তের দিকে তাকাতে তাকাতে, তারা একে অপরের হাত ধরে বলল—
“আমি চাই তুমি সারাজীবন আমার পাশে থাকো।”
“আমি চিরকাল চাই,” এলিনা উত্তর দিল।

মুহূর্তের জন্য সময় থেমে গেল। বাতাসের শব্দ, দূরের পাখির চেয়ার, হ্রদের কুলকুল—সব মিলিয়ে নিভৃত, মধুর, রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।


---

শেষ ভাবনা

প্রেম কখনও সময়ে বাঁধা থাকে না। কখনও কখনও, হারানো বছরই সম্পর্ককে নতুন সূচনা দেয়। এলিনা আর লুকাসের গল্প সেই প্রমাণ। চোখে চোখে, হৃদয়ে হৃদয়ে, ছোট ছোট মুহূর্তে জন্ম নেয় এমন প্রেম, যা শুধু জীবনের গল্প নয়—এটি এক রোমাঞ্চকর যাত্রা।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • Kazi Eshita 3 months ago

    বাংলা গল্পে ইংরেজ চরিত্র? এটি কি অনুবাদ নাকি মৌলিক লেখা?