ওড়নপুর নামক গ্রামে বাস করত আকাশ । সময়টি ছিল ২০২২ সাল । আকাশ তখন দশম শ্রেনীর ছাত্র। সামনে তার EXAM । একদিন সে দেখল নবম শ্রেণীতে একটি নতুন ছাত্রী ভর্তি হয়েছে। তবে সেটা নতুন কী পুরাতন সেটা ঠিক বলা যাচ্ছে না কারণ আকাশ অনেক সময় স্কুল ফাঁকি দিয়েছে। আর এভাবেই তার দুই বছর কেটেছে। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা। তাছাড়া সে কোনো মেয়ের সাথে মিশত না কারো সাথে সেরকম কোনো কথা বলত না। কিন্তু সেদিন যখন সে ঐ রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন তার সেদিকে খেয়াল করে এবং ঐ মেয়েকে দেখতে পায়। অবাক করার বিষয় হলো মেয়েটিকে তার চেনা চেনা লাগে। তবে সে ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। এভাবে কিছুদিন যায়। আবার একদিন সে ঐ মেয়েকে দেখতে পায়। কিন্তু সে বুঝে উঠতে পারে না । একদিন আকাশের বাড়িতে তার স্কুল কেমন চলছে সে বিষয়ে কথা ওঠে হঠাৎ তার মা বলে ওঠে তোর সাথে জান্নাতের দেখা হয়েছিল। মেয়ের নাম শুনে আকাশ বলল কে জান্নাত । তখন তার মা বলল, আরে তোর রেহানা খালার মেয়ে সে তো এখন এই স্কুলেই পড়ে। আকাশ চমকে উঠে বললো ঐ এখানে কেনো পড়ে আর ও বাড়িতে থাকে না। তখন তার মা বলল ও তো তার নানির বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে। আকাশ বলল, কিন্তু ওর তো নাকি বিয়ে হয়েছিল। মা বলল হ্যাঁ কোনো কারণে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে তারপর আবারো বিয়ে হয়েছিল কিন্তু সেটাও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। হয়তো এগুলোর কোনো কারণে এখন নানির বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতেছে। তারপর আকাশ মনে মনে ভাবছিল এজন্য মেয়েটিকে তার চেনা চেনা লাগছিল। আসলে সে যখন তাকে দেখেছিল তখন তার বয়স ছিল ৬-৭ বছর। তারপর আর দেখা হয় নি তাই সে তাকে চিনতে পারিনি।
একদিন তার মা তার নানির বাড়িতে যায় সেখানে সে এগুলো গল্প করলে সবাই হাসতে থাকে। তারপর সে জান্নাত কে বলে, তুই আকাশের সাথে পরিচিত হয়ে যাস নাহলে ওই যে শরম করে কোনো মেয়ের সাথে কোনোদিন কথা বলবেনা । অতঃপর একদিন আকাশের স্কুল ছুটির সময় জান্নাত তার কাছে আসে সে বলে আমাকে চিনতে পেরেছ । আকাশ বলল হ্যাঁ আম্মু সেদিন বলল তোমার কথা এভাবেই ভালোমন্দ জিগ্গেস করে তাদের পরিচয় হলো। সামনে আকাশের এলাকায় মাহফিল তাই সে একদিন জান্নাত কে বলল এসো আমাদের বাসায় মাহফিলের দাওয়াত আর বাড়ি দেখে যাওয়াও হবে। অতঃপর মাহফিলের দিন জান্নাত ও তার মামি মানে আকাশেরও মামি আর কী তাদের বাড়িতে আসল। এভাবে সেদিন অনেক সময় কাটল গল্প করে । পরের দিন একসাথে তারা স্কুলে গেল । এভাবে কিছুদিন চলে গেল ধীরে ধীরে আকাশ তাকে পছন্দ করতে লাগলো। একদিন ক্লাশ শেষে জান্নাত এসে বলল তোমার নাম্বার টা দাও তো । তারপর সেদিন বিকেলে আকাশের ফোনে সে মেসেজ দেয় এভাবে তারা কথা বলতে থাকে। এভাবে কিছুদিন চলার পর একদিন এস এম এস এ আকাশ বলে ফেলে আমি তোমাকে পছন্দ করি। তা শুনে জান্নাত হেসে বলে হা হা মজা করতেছ । আকাশ বলল, না আমি সত্যি বলছি। তখন জান্নাত বলে এটা সম্ভব নয় তুমি হয়তো জানোই আমার এর আগে দুইবার বিয়ে হয়েছিল। আর তাছাড়া আমি তোমার থেকে এক বছরের বড়। আসলে আকাশের থেকে জান্নাতের বয়স এক বছর বেশি ছিল। তখন আকাশ বলল এগুলো কোনো ব্যাপার না মানুষের জীবনে কোনো ক্ষুদ থাকতেই পারে আর বয়স দিয়ে কখনো সম্পর্ক হয় না। জান্নাত বলে এগুলো তোমার আবেগ এ বলে সে বলল আমি ঘুমাতে গেলাম আর এগুলো কথা বলবেনা কখনো। আকাশ বলল সমস্যা নেই তুমি আমাকে পছন্দ না করতে পারো আমি জোর করব না তবে তোমাকে আমার মনের মধ্যে রেখে যদি আমি আরো দশটা মেয়ের থেকে দূরে থাকতে পারি তাহলে হয়তো এতে কোন সমস্যা নেই। জান্নাত কোনো কথা বলে বাই বলে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর মেসেজ এলো ঘুমিয়ে গেছো। আকাশ বলল না আমার উত্তর আগে দাও। জান্নাত বলল হ্যাঁ আমিও তোমাকে পছন্দ করি কিন্তু আমার এসব ক্ষুদের জন্য তোমাকে আমার জীবনে জড়াতে চাই না। আকাশ বলল আমার এগুলোতে কোনো সমস্যা নেই। এভাবে তারা একে অপরকে ভালোবাসতে লাগল। এভাবে ভালোই চলছিলো তাদের সম্পর্ক চলছিল। আকাশের পরিক্ষা শুরু হলো জান্নাত তাকে কীছু বিষয়ে সাহায্য করছিল। পরিক্ষা শেষ হলো তার ফলাফল ও ভালো হলো। এভাবে এক বছর কেটে গেল তারা একে অপরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করছিল ভালোই চলছিলো তাদের সম্পর্ক। দেখতে দেখতে জান্নাতের পরিক্ষার শুরু হয়ে গেল। আকাশ তাকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে লাগলো। পরিক্ষা শেষে জান্নাত এখন তার নিজ বাড়িতে যাবে আর তাদের এরকম দেখা হবে না।তাই আকাশ তাকে বিদায় দেয়ার জন্য গেল। জান্নাত চলে গেল তার নিজ বাড়িতে। কে জানত এটাই আকাশের তার সাথে শেষ দেখা।
এ বিষয়ে পরে বলতেছি পরের গল্প মাঝে কিছু ছাড়া পড়ে গেছে। তাদের কাটানো এক বছরের মধ্যে একদিন আকাশ তার বাসায় তাদের বিষয়ে কথা বলেছিল । তার মা এ বিষয়ে তাদের মামার সাথে কথা বলে এ বিষয়ে তবে কেউ এ সম্পর্ক মেনে নিতে চাচ্ছিল না। কিন্তু আকাশ কারো কথা না শুনে জান্নাত কেই বিয়ে করার জেদ নিয়ে থাকে। তাছাড়া জান্নাতের পরিবার,ও এ বিষয়ে রাজি ছিল না। তবুও তারা এ সম্পর্ক কে এগিয়ে নিয়ে যায় ।
এবার আসা যাক জান্নাত বাড়িতে যাওয়ার পর কি হলো। সে বাসায় গিয়ে কিছুদিন ভালোই চলছিলো। তারপর জান্নাত বলল তার বাসা থেকে তাকে বিয়ের কথা বলতেছে। তারপর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হতে লাগলো। এরকম ভাবে কিছুদিন চলল। একদিন জান্নাত বলল সে তার বাবার ওখানে যাবে ।তার বাইরে থাকত সেখানে কাজ করত । তখন ছিল রমজান মাস। তারপর জান্নাত গেল তার বাবার ওখানে। সেখানে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে কথা বলা কম হতে লাগলো। সেখানে নাকি তার অনেক কাজ তাই বেশি কথা বলতে পারে না। এভাবে কিছুদিন যায় সম্পর্ক ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে আর বেশি কথা হয় যা হয় তাও কথা কাটাকাটি। এভাবে জান্নাত আকাশের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। সে এমন ব্যবহার করে যেন সে তাকে ছেড়ে দিতে বলতেছে। কথার মাধ্যমে না বললেও ব্যাবহারে তাই বোঝা যায়। আকাশ তাকে অনেক বোঝায় কিন্তু সে আরও খারাপ ব্যবহার করে। এভাবে একদিন তাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। পরে আকাশ বিভিন্ন ভাবে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও সে কোনো পাত্তা দেয় না। মানুষ যে এতো তাড়াতাড়ি বদলে যেতে পারে এটা আকাশ ভাবতেও পারিনি। আকাশ এরপর অনেক ভেঙে পড়ে । আর সে শুধু একটাই কথা বলে কখনো যদি তার সাথে তার দেখা হয় সে শুধু জানতে চাইবে কি এমন হয়েছিল যার কারণে সে তাকে ছেড়ে চলে গেল। এভাবে অনেক মাস কেটে গেল। একদিন সে শুনতে পেল জান্নাতের বিয়ে হয়ে গেছে গতকাল। যেহেতু সবাই তাদের সম্পর্কের বিষয়ে জানত তাই এগুলো খবর আসতে দেরি লাগে না । খবর না চাইলেও সবাই মনে করে দেয় । আর তারপর আর আকাশ কখনো তার নানি বাড়ি কিংবা খালার বাড়িতে যায়নি কারণ সে সবার বিপক্ষে গিয়ে তার সাথে সম্পর্ক করছিল আজ সে আর তার সাথে নেই নতুন কারো সাথে সংসার করছে। তাই সবাইকে বলার মতো কিছু নেই। আকাশ মনে মনে ওয়াদা করে সে আর কোনদিন প্রেম ভালোবাসায় জড়াবে না।
একদিন হঠাৎ জান্নাতের সাথে তার দেখা তার হার্ট জোরে চলতে থাকে। তবে এটা নতুন না তাদের সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর সে যে কোনো মেয়েকে দেখতে পেলে তার মনে সেটাই জান্নাত তখন ই তার হার্ট জোরে জোরে চলতে থাকে। তারপর সে তাকে দেখে ভালোমন্দ জিগ্গেস করলে তখন,ই তাদের এক আত্মীয় আসে সে আবার তাদের সম্পর্কের বিষয়ে কথা বলতে থাকে। তখন জান্নাত বলে সব দোষ তোমার তুমি তো ছেড়ে গিয়েছিলে । আকাশের তা শুনে খারাপ লাগে কিন্তু সে চুপ করে থাকে। জান্নাত আরও বলে আমি তো আর বেড়াতে আসিনি এদিকে না জানি কার কাছে আমার নামে কি বলে রেখেছে। তখন আকাশের দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে সে ভাঙা কন্ঠে বলে আজ পর্যন্ত কোনোদিন তোমার নামে কখনো কারো কাছে কোনো খারাপ কথা বলিনি কেউ এসব বিষয়ে কথা বলতে চাইলে আমি এড়িয়ে চলতাম। আজ পর্যন্ত কখনো তোমার উপর এতো ঘৃণা হয়নি যতটা এ কথা শোনার পর হচ্ছে। তারপর আকাশ সেখান থেকে চলে যায়। সে শুধু এটাই ভাবে যাকে এতো ভালোবেসেছিলাম, দেখিনি বয়স ,দেখিনি তার কোনো ক্ষুদ এতো কিছুর পরেও এমন হলো।তাহলে আর কাকে বিশ্বাস করা যায় । তার পর আর কখনো তার সাথে জান্নাতের দেখা হয় নি ।আর জানাও হয়নি ছেড়ে যাওয়ার কারণ। যদি আকাশ জানতে পারে কোনোদিন সেই কারন তাহলে আপনাদেরকেও জানাবো কোনোদিন।
আল্লাহ হাফেজ।